খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক: ব্রেক্সিট ইস্যু নিয়ে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগে করছেন দেশটির সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রুড। পদত্যাগের কারণ হিসাবে তিনি কনজারভেটিভ দলের হুইপকে জানান, মধ্যপন্থি কনজারভেটিভ এমপিদের যেখানে বহিষ্কার করা হয়েছে, সেখানে তিনি থাকতে পারেন না।
গত মঙ্গলবার ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভোটাভুটিতে হেরে যাওয়ার পর চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট ঠেকাতে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের ২১ বিদ্রোহ এমপিকে বরখাস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
ওই ২১ টরি এমপিকে বরখাস্তের ঘটনাকে ‘শালীনতা ও গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন চাকরি ও অবসরভাতা বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাম্বার রুড। এর জের ধরেই শনিবার তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
অ্যাম্বার রুড ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনজনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমি আপনার মন্ত্রিসভায় অনেক বিশ্বাসে নিয়ে যোগ দিয়েছিলাম। এমনকি চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের ইস্যুটিকেও মেনে নিয়েছিলাম। কারণ আমি ভেবেছিলাম এটিই সেই মাধ্যম, যার মাধ্যমে আমাদের ৩১ অক্টোবর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার জন্য একটি নতুন চুক্তিতে পৌঁছানোর সর্বোত্তম সুযোগ থাকবে। কিন্তু আমি তখন বিশ্বাস করিনি যে, কোনো চুক্তি ছাড়াই ইইউ ছেড়ে দেয়াটাই সরকারের মূল লক্ষ্য ছিলো।’
এর আগে তিনি নিজের পদত্যাগ সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, ‘আমি ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছি এবং কনজারভেটিভ হুইপের কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। কেননা আমি কনজারভেটিভ দলের এমপিদের এভাবে বহিষ্কার করার বিষয়টি মেনে নিতে পারিনি। আমি প্রধানমন্ত্রী ও আমার অ্যাসেসিয়েশন চেয়ারম্যানের কাছে এর ব্যাখা চেয়েছি। আমি এখনও এক জাতি মূল্যবোধের প্রতি আস্থাশীল রয়েছি যা আমাকে রাজনীতিতে টেনে এনেছে।’
এদিকে এই ব্রিটিশ মন্ত্রীর পদত্যাগের ঘোষণায় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অ্যাম্বারের মতো প্রতিভাবান একজন মন্ত্রীর পদত্যাগে তারা হতাশ। তবে এক মুখপাত্রের দাবি, মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়া সব মন্ত্রীরই ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ব্রেক্সিটে সমর্থন দেওয়ার কথা ছিলো।
সরকারের উচ্চ পর্যপায়ের এক সূত্র জানায়, মানুষ ব্রেক্সিট চায়। কারও পদত্যাগে তা পরিবর্তন হবে না। লেবার পার্টি থেকে বলা হয়, রুডের পদত্যাগে এটা স্পষ্ট যে সরকার ভেঙে পড়ছে।
প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট ইস্যুতে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে পরাজিত হন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। বিরোধী দলের পাশাপাশি নিজ দলের বিদ্রোহী এমপিরাও তার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেন। সবমিলিয়ে তার নিজ দলের ২১ জন এমপি বিরোধীদের সাথে মিলে তার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেন। ফলে হাউজ অফ কমন্সে ৩২৮-৩০১ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান প্রধানমন্ত্রী জনসন।
ভোটাভুটিতে বিজয়ী হওয়ার পর বুধবার পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ নেয় ব্রিটেনের চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের বিরোধিতাকারী এমপিরা। এর মাধ্যমে তারা চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট ঠেকাতে একটি বিল আনার সুযোগ পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে ভোটাভুটির পর প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ডাউনিং স্ট্রীট কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, যেসব টোরি এমপি বিদ্রোহ করেছে তাদের পার্লামেন্টারি পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ওই ঘোষণা অনুযায়ী মঙ্গলবার নিজ দলের ২১ বিদ্রোহী এমপিকে বহিষ্কার করেন বরিস।
প্রধানমন্ত্রী আশা করছেন, তার এই শাস্তির মুখে এইসব বহিষ্কৃত বিদ্রোহী এমপিরা তাদের অবস্থান বদলাবেন। ফলে তার ৩১ অক্টোবর ব্রেক্সিট কার্যকর করার সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হবে।
ভোটাভুটিতে হেরে যাওয়ার পর অক্টোবরের মাঝামাঝি নাগাদ নতুন নির্বাচনের কথা-ও বলেছেন বরিস জনসন। যদিও বিষয়টি তার জন্য এত সহজ নয়। কেননা ব্রিটেনে ২০১১ সালে করা এক আইনে পার্লামেন্টের মেয়াদ পাঁচ বছর করা হয়েছে। এখন সেই আইন বদলাতে গেলে পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন লাগবে, যা জোগাড় করা বরিস জনসনের পক্ষে অসম্ভব। কেননা এক্ষেত্রে তাকে বিরোধী দল লেবার পার্টির সমর্থন দরকার হবে, যা তিনি কিছুতেই পারবেন না বলেই মনে হয়।
সূত্র: বিবিসি
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন