ঢাকাশনিবার , ২৬ মে ২০১৮
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ইয়াবা সম্রাট আসলাম ও কালাম মোল্লার সিণ্ডিকেটে রয়েছেন একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা!

R khan
মে ২৬, ২০১৮ ৩:১২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিশেষ প্রতিবেদক : লোক দেখানো মিউজিক ভিডিও’র শুটিং করতে গিয়ে ইয়াবার বড় চালানসহ কক্সবাজারে র‌্যাবের হাতে আটক হওয়া শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী আসলাম সরকারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী সংবাদ খবর ২৪ ঘণ্টায় প্রকাশের পর বেরিয়ে এসেছে আসলামের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার জানা অজানা নৈপথ্যের কাহিনী। কিভাবে আসলাম কম সময়ের মধ্যে নিজেকে রাজশাহী অঞ্চলের প্রধান ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তুলেছে।
র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর আসলাম সরকারের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। আসলামের নাম বর্তমান সময়ে নগরীর পাড়া-মহল্লার মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে।

পাঠক জেনে নেওয়া যাক আসলাম সরকারের উত্থানের কাহিনী। তিনি রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার ডিঙ্গাডোবা এলাকার আজিজুরের ছেলে। মোবাইল মিস্ত্রী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও পরে শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী হয়ে যান। বিয়েও করেছেন একাধিক। নগরীর সাহেব বাজার গণকপাড়ায় অবস্থিত একটি আবাসিক হোটেলে গোপনে থাকতেন কালাম মোল্লা। কর্মক্ষেত্রের কাছেই কালাম মোল্লা থাকার সুবাদে পরিচয় হয় ও পরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় তাদের মধ্যে।

খবর ২৪ ঘণ্টার অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় গত ৫ বছর আগে আসলাম সরকারের সঙ্গে পরিচয় হয় রাজশাহীর বাঘা-চারঘাট সীমান্তের মাদকের গডফাদার ও বাঘা উপজেলার হেলালপুর গ্রামের আকছেদ আলীর ছেলে কালাম মোল্লার। ১০ ভাই বোনের মধ্যে কালাম সব থেকে বড়। এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোন করেন তিনি। পরিচয়ের পর মাদক ব্যবসার সুবাধে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়। এরপর কালাম আসলামের সহযোগিতায় রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় মাদক ব্যবসার ইয়াবা সিণ্ডিকেট গড়ে তোলে।

ব্যবসা ভাল হওয়ায় বছর তিনেক আগে নগরীর হেতেমখাঁ মোড়ে অবস্থিত ব্ল্যাক ক্যাফে নামের একটি চাইনিজ রেস্তোঁরা ভাড়া নেয় তারা। দিন গড়ানোর সাথে সাথে রেস্তাঁরাটির বিস্তার লাভ করে। তারপর আস্তে আস্তে আশেপাশের ভবনগুলোও ভাড়া নেওয়া হয়। আগে থেকেই আসলাম-কালামের সুন্দরী মেয়েদের প্রতি বিশেষ ঝোঁক ছিল। এরা দু’জন মিলে পরিকল্পনামাফিক প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক ব্যবসা বিনা বাধায় চালানোর জন্য “সরকার প্রডাকশন হাউস” নামের একটি লোক দেখানো মিউজিক ভিডিও’র কার্যক্রম শুরু করে। আসলাম রাতারাতি মিউজিক

ভিডিও’র পরিচালকও বনে যান। মিউজিক ভিডিও শুরু করলে সেখানে মডেল ও নায়িকা হওয়ার আশায় সুন্দরী মেয়েরা ভিড় জমাতে শুরু করে। এরপর আসলাম তাদের অর্থবিত্তের লোভ দেখিয়ে মাদক ব্যবসার কাজে লাগিয়ে দেয়। এমনকি সুন্দরী মেয়েদের দিয়ে বড় বড় তদবিরও সারেন তারা। সেই সুন্দরী মেয়েদের মাধ্যমেই প্রভাবশালী ব্যক্তিদের স্বল্প সময়ের মধ্যে ম্যানেজ করতো তারা। এতে করে তাদের মাদক ব্যবসার পরিধি আরো বেড়ে যায়।

ব্যবসা বাড়ার সাথে সাথে কালাম মোল্লার সাথে প্রশাসনের প্রায় ডজন খানেক কর্মকর্তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। তবে গোয়েন্দা সূত্র বলছে ভিন্ন কথা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, চারঘাট, বাঘা ও পুঠিয়া উপজেলায় পুলিশ পরিদর্শক পদমর্যদার যেসব কর্মকর্তা কর্মরত ছিলেন তাদের সাথে সুসম্পর্ক আগে থেকেই ছিল কালাম মোল্লার। এদের মধ্যে একাধিক কর্মকর্তাকে কালাম মোল্লা আরএমপিতেও বদলি করে নিয়ে আসে নিজের কাজ সহজে করার জন্য। গোয়েন্দা সূত্র আরো জানায়, আরএমপিতে পুলিশ পরিদর্শক পদমর্যদার ৫ জন সহ একাধিক কর্মকর্তার আসলাম ও কালামের সখ্যতা থাকায় মহানগরীতে প্রকাশ্যে তারা চলাফেরা শুরু করে। এমনকি পুলিশ পরিবারের পারিবারিক অনুষ্ঠানেও অংশ নিতে দেখা গেছে

বলে সূত্রটি জানিয়েছে। নগরীর একটি গুরুত্বপূর্ণ থানায় বসে ওসির সাথে মিলিত হতো আসলাম সরকার। সেখানে রকমারী খাবার ও সুন্দরী নারীও উপস্থিত থাকতো। বর্তমানে সেসব কর্মকর্তারা আতঙ্কে রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সূত্রটি। জেলা ও মহানগর পুলিশের দুই শীর্ষ কর্মকর্তার সাথে খবর ২৪ ঘণ্টার আলাপ হলে তারা বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি। সেটি মাথায় রেখে কাজ করা হচ্ছে। মূল হোতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে না চলে যায়। ইতমধ্যেই গোপনে অভিযান শুরু করা হয়েছে। যাতে অভিযান ব্যর্থ না হয়।
এদিকে, র‌্যাব-৭ কক্সবাজারের হাতে আটক হওয়া মডেলদের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে রাজশাহী ও নওগাঁ এলাকার ছেলে রয়েছে। দু’জন

সুন্দরী মডেলের বাড়ি ঢাকায়। র‌্যাবের কাছ থেকে তারা মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেলেও ঢাকায় গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে এসব মডেলরা। তাদের রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো। আটক হওয়া আসলাম ও মাসুদের কাছ থেকে ব্যবহৃত ছাড়াও ৬টি সিম উদ্ধার করেছে র‌্যাব। ধারণা করা হচ্ছে সেই সিমের মাধ্যমেই বেরিয়ে আসতে পারে মূল হোতারা। আটক ইয়াবার আনুমানিক মূল্য ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। জব্দ হওয়া মাইক্রোবাসের মূল্য ২২ লাখ টাকা।

উল্লেখ্য, গত বুধবার দুপুরে এক লাখ আট হাজার পিস ইয়াবাসহ কক্সবাজারে লোক দেখানো মিউজিক ভিডিওর শুটিং করতে গিয়ে আসলাম সরকার ‘সরকার প্রোডাকশন হাউস’ নামের শুটিং টিমের ১০ সদস্যসহ র‌্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্পের একটি টিমের হাতে আটক হয়।
বুধবার দুপুরে পর্যটন শহরের কলাতলীর সার্ফিং চত্বর থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাসও জব্দ করা হয়। আটককৃতরা হলো, রাজশাহীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী আসলাম সরকার (৪০), ড্রাইভার মাসুদ রানা (৩২) ও শুটিং টিমের ৮ সদস্য। পরে র‌্যাব শুটিং টিমের ৮ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়।

র‌্যাব-৭ কক্সবাজারের কোম্পানি কমান্ডার মেজর আমিন বলেন, মিউজিক ভিডিও করার নামে কক্সবাজার গিয়ে ইয়াবা নিয়ে ফেরার পথে রাজশাহীভিত্তিক মাদকচক্র ‘সরকার প্রোডাকশন হাউস’র ১০ সদস্যকে আটক করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, আসলাম সরকার রাজশাহীর মাদক চক্রের প্রধান। তিনি নানা সময় নানা বেশ ধরে কক্সবাজার থেকে ইয়াবা নিয়ে যেতেন। এবার তিনি মিউজিক ভিডিওর শুটিংয়ের নাম দিয়ে ইয়াবা নিতে আসেন। ইয়াবা কিনে মাইক্রোবাসযোগে রাজশাহী ফেরার পথে তাদের আটক করা হয়।

খবর২৪ঘণ্টা/আর

 

 

 

 

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।