ঢাকাশনিবার , ২ নভেম্বর ২০১৯
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রাজশাহীতে আমন ধানে পচন ও পোকার আক্রমন, দুঃশ্চিন্তায় কৃষক

khobor
নভেম্বর ২, ২০১৯ ৯:৩৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ওমর ফারুক, রাজশাহী:
ধানের শীষ ফোটা অবস্থায় রাজশাহীজুড়ে টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে আমন ধানের জমিতে পানি জমে যায়। দু’দিন পর বৃষ্টি থামলেও আমন ধানের পানি না নামায় নতুন করে পাক ধরা ধানে ব্যালকাঠি, পচন ও কারেন্ট পোকার আক্রমন দেখা দিয়েছে। রাজশাহী জেলার ৮টি উপজেলায় এবার ৭৪ হাজার ৯৮১ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হচ্ছে। এ ছাড়া রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকায় দুটি থানায়ও আমন ধান চাষ হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মাসের ২৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে রাজশাহী মহানগর ও জেলাজুড়ে বৃষ্টি শুরু হয়।

বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দিনভর টানা বৃষ্টিপাত হয়। কখনো ভারি আবার কখনো হালকা বৃষ্টি হয়। বৃষ্টিতে আমনের জমিতে পানি জমে যায়। ওই সময় আমন ধানের শীষ ফুটন্ত অবস্থায় ছিল। ফুটন্ত শীষে টানা বৃষ্টি ও পরে সেই পানি জমি থেকে নামতে সময় লেগে যায়। এরই ধানে পচন, ব্যালকাঠি ও কারেন্ট পোকার আক্রমন দেখা দেয়। কলা পাক ধরা আমনে পচন ও পোকার আক্রমন হওয়ায় দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। কারণ আর মাত্র ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই ধান পুরোপুরি পেকে যাবে। ধান পাক ধরার আগ মুহূর্তে পচন ও পোকার আক্রমন কাঙ্খিত ফলন ব্যাহত করবে। কৃষকরা বলছেন, ব্যালকাঠি, পচন ও কারেন্ট

পোকার হাত থেকে ধান বাঁচাতে বিষ প্রয়োগ করলেও তা পুরোপুরি ঠিক সেরে উঠতে ৫/৭ দিন সময় লাগে। এখনো তাই লাগবে। এখন বিষ প্রয়োগ করলে ধান পুরোপুরি সারতে সময় লাগবে ৫/৭ দিন। ততদিন ধান পেকে যাবে। ধান পাকার আগ মুহূর্তে পচন দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পোকা অক্রমন না করলে এবার ধানের কাঙ্খিত ফলন পাওয়া যেত। এখন কাঙ্খিত ফলন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিবে। খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, ধানে পচন ও ব্যালকাঠি এবং পোকার আক্রমন দেখা দেওয়ার সাথে সাথেই কৃষকরা ধান বাঁচাতে বিষ প্রয়োগ শুরু

করেছেন। বৃষ্টি থামার দু’দিন পর থেকে এখন পর্যন্ত আমন ধানের মাঠে মাঠে ধান আক্রমন থেকে বাঁচাতে বিষ স্প্রে করছেন কৃষকরা। তবুও শঙ্কা কমছেনা তাদের। রাজশাহীর তানোর উপজেলার কামাল নামের এক কৃষকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তার ২৮ বিঘা জমির ধান ভালোই হয়েছিল। কিন্ত টানা বৃষ্টিতে ধানের জমিতে পানি জমে যায়। পানি ছাড়লেও তা ভালোভাবে বের হয়নি। কারণ প্রত্যেক জমিতেই পানি জমে ছিল। পানি বের হতে সময় লাগায় পচন দেখা

দেয়। পচন ছাড়াও ব্যালকাঠি ও কারেন্টা পোকার আক্রমন মারাত্মকভাবে দেখা দিয়েছে। পোকার হাত থেকে ধান বাঁচাতে সব জমিতেই বিষ স্প্রে করেছি। বিষ দেওয়ার আগেই অনেক ধানে পচন ও ব্যালকাঠিতে কেটে দিয়েছে। কারেন্ট পোকার কারণে অনেক ধান পাতান হয়ে গেছে। এখন সারতে সময় লাগবে। ততদিনে ধান পুরোপুরি পেকে যেতে পারে। এ জন্য কাঙ্খিত ফলন নাও হতে পারে। গত বছরেও শীষ ফুটন্ত অবস্থায় টানা ৮দিন বৃষ্টি হয়। সেই বৃষ্টিতে ধান পড়ে গিয়ে কাঙ্খিত ফলন হয়নি। পরে যা হয়েছিল তার দামও ন্যায্য পাওয়া যায়নি। এ কারণে ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। আমরা যারা কৃষি কাজ করি তাদের চাষ ছাড়া অন্য কোন উপায়ও নেই। তাই সার ও বিষসহ ধান চাষের

প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম সহনিয় পর্যায়ে রাখার দাবি জানাচ্ছি। রাতুল নামের আরেক কৃষক বলেন, আমি মাত্র দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। পোকার আক্রমনে ধানের ক্ষতি হয়েছে। বিষ স্প্রে করেছি। দেখা যাক কি হয়। এই দুইজনের মতো অনেক কৃষকই পোকার আক্রমনে দুঃশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন,

কৃষকদের দুঃশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। কারেন্ট পোকা, পচন ও ব্যালকাটির জন্য আলাদা আলাদা ওষুধ স্প্রে করতে হবে। স্প্রে করলে ঠিক হয়ে যাবে। শুক্রবার আমন আমি পরিদর্শন করেছি। কৃষকদের ওষুধ স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছি। ব্যালকাটিতে তেমন ক্ষতি করতে পারবে না। ফলন ব্যাহত হবে না।

এস/আর

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।