খবর২৪ঘন্টা নিউজ ডেস্ক: করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে প্রায় দুই সপ্তাহ বাংলাদেশে অবস্থানের সময় এখানকার করোনা মোকাবিলার পরিস্থিতি ১০ সদস্যের চীনা প্রতিনিধিদলকে হতাশ করেছে। কারণ জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা খুব কম। নমুনা পরীক্ষাও হচ্ছে কম। তবে নানা সীমাবদ্ধতার পরও চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা অসাধারণ দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানিয়েছেন চীনা বিশেষজ্ঞরা।
রবিবার ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিক্যাব) সঙ্গে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় চীনের বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। বিশেষজ্ঞ দলের পক্ষে কথা বলেন ঢাকায় চীনা দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন ইয়ান হুয়ালং। অংশ নেন বিশেষজ্ঞ দলের ডা. শুমিং শিয়ানউ ও ডা. লিউহাইট্যাং।
বাংলাদেশে করোনার সচেতনতার বিষয়ে ইয়ান হুয়ালং বলেন, ‘মেডিক্যাল টিম এ বিষয়ে হতাশ। করোনার মতো ছোঁয়াচে ভাইরাসের বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা খুবই কম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা গ্লাভস ব্যবহার করেন, তারা অমনোযোগী হন এবং অনেক ক্ষেত্রে মুখে হাত দেন, যার মাধ্যমে দ্রুত রোগ ছড়ায়।’ গ্লাভস ব্যবহারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বনের তাগিদ দেন তিনি।
এ সময় স্বল্প চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীর অসাধারণ কাজ দেখে প্রশংসা করে ইয়ান হুয়ালং বলেন, ‘চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা অনেক কম সত্ত্বেও তারা অসাধারণ কাজ করে যাচ্ছেন।’
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি পরিদর্শন ও করোনা রোধে সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে ১০ সদস্যের চীনা চিকিৎসক দলটি গত ৮ জুন ঢাকায় আসে।
করোনাভাইরাসের পিক টাইমে বাংলাদেশ পৌঁছেছে কি না, মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এমন প্রশ্ন করা হলে চীনা দূতাবাসের উপপ্রধান হুয়ালং ইয়ান বলেন, ‘এটি বলা মুশকিল। তবে লকডাউন অত্যন্ত কার্যকরী এবং চীনে এটি খুব ভালো কাজ করেছে। ওই সময়ে চীনের অন্যান্য জায়গা থেকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা উহানে গিয়েছিলেন। এমনকি খাদ্যও পাঠানো হয়েছিল।’ বিনা অর্থে সেবাও দেয়া হয়েছিল বলে তিনি জানান।
করোনা পরিস্থিতির স্থায়িত্বকাল নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতি আরও ২-৩ বছর চলবে কি-না এটি আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়। এটি নির্ণয় করার জন্য বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ দরকার।’
র্যাপিড টেস্ট করা উচিত কি না প্রশ্নে হুয়ালং ইয়ান বলেন, ‘আমরা এটি সুপারিশ করি না। সবচেয়ে ভালো হচ্ছে পিসিআর টেস্ট। তাই পিসিআর ল্যাবে টেস্টকেই সমর্থন করি। এর মাধ্যমে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় সম্ভব।’
র্যাপিড টেস্ট হচ্ছে এন্টিবডি টেস্ট এবং প্রথম সপ্তাহে রোগীর মধ্যে এন্টিবডি থাকে না বলেও তিনি জানান।
করোনা আক্রান্ত শনাক্তে নমুনা পরীক্ষা কম হচ্ছে বলে পর্যবেক্ষণ জানিয়ে বিশেষজ্ঞ দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, এখনো বাংলাদেশে করোনা টেস্টের পরিমাণ খুবই কম। দেশের সব বিভাগে ল্যাবরেটরিও নেই। সেজন্য অনেককে তাদের টেস্টের জন্য ঢাকায় নমুনা পাঠাতে হয়।
বেশি বেশি নমুনা পরীক্ষার ওপর জোর দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, দ্রুত পরীক্ষা, দ্রুত শনাক্তকরণ, দ্রুত আইসোলেশন এবং দ্রুত চিকিৎসা এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ। সন্দেহজনক কেস থেকে সর্বস্তরে টেস্ট নিশ্চিত করতে হবে। তিনটি উপায়ে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আক্রান্তদের চিকিৎসা, এই ভাইরাসের ট্রান্সমিশন (একজন থেকে আরেকজনে ছড়ানো) বন্ধ করা এবং যারা আক্রান্ত হননি তাদের রক্ষা করা।
প্লাজমা ট্রিটমেন্টের ক্ষেত্রে হুয়ালং ইয়ান বলেন, ‘সব রোগীর ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যায় না। শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা উচিত।’
রোগকে ভয় না পেয়ে সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ইয়ান। তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত রোগী পুষ্টি পাচ্ছে, আইসোলেশনে থাকছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ডায়েট নিয়ন্ত্রণের কোনো প্রয়োজন নেই।’
এছাড়াও বিশেষজ্ঞ দল করোনা রোগীর চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে পুষ্টিকর খাবারও দিয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার পরামর্শও দিয়েছেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনের বিকল্প নেই জানিয়ে তারা বলেন, এই সংক্রমণ যেখান থেকে শুরু হয়েছিল সেই উহান থেকে শুরু করে একের পর এক দেশের বিভিন্ন শহর ও প্রদেশ লকডাউন করেই ভাইরাসটির বিস্তার কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এ কারণেই অন্য অনেক দেশের তুলনায় চীনে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা কম। তাই এটি অত্যন্ত কার্যকরী। অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং পুনরায় শুরু করতে চিহ্নিত করতে হবে— কোন অঞ্চলে রোগটি বেশি। ফ্যাক্টরি চিহ্নিত করতে হবে, যেখানে এই রোগ ছড়াতে পারে।’
চীনে পাচঁটি কোম্পানি ভ্যাকসিন তৈরি করছে। ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শেষ হয়ে গেলে বাংলাদেশ হবে প্রথম দেশগুলোর মধ্যে একটি, যারা ভ্যাকসিন পাবে বলেও জানায় চীনা বিশেষজ্ঞ দল।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বলা হয়, চীনা মেডিকেল টিম বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন ও সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আগামীকাল তারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর সুপারিশ তৈরি করে দূতাবাসের মাধ্যমে সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
খবর২৪ঘন্টা/নই