ঢাকারবিবার , ৩০ এপ্রিল ২০২৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সুদানে সামরিক বাহিনীর দুই দলের লড়াই তীব্রতর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
এপ্রিল ৩০, ২০২৩ ৯:০৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সুদানের রাজধানী খার্তুমে যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়েছে এবং দেশটির সামরিক বাহিনীর দুই দলের মধ্যে লড়াই তীব্রতর হয়েছে। খার্তুমে সেনাবাহিনীর সদর দফতরের চারদিকে লড়াই চলছে এবং নীল নদের অপর পারের ওমদারমান শহরে সেনাবাহিনী বিমান হামলা চালিয়েছে।

সরকারি বাহিনী বলছে, তারা চারদিক থেকে রাজধানীর ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে এবং বিমান হামলা ও ভারী কামানোর গোলাবর্ষণ করে তাদের প্রতিপক্ষ আধাসামরিক বাহিনীকে শহর থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

গত ১৫ এপ্রিল থেকে নিয়মিত সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস বা আরএসএফের মধ্যে শুরু হওয়া এ লড়াইয়ে এ পর্যন্ত ৫০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। তবে মনে করা হচ্ছে যে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি।

সবশেষ যে যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়েছিল তা রোববারই শেষ হবার কথা। তবে শনিবার রাত থেকেই খার্তুম শহরে তীব্র লড়াই শুরু হয়ে যায়। সেনাবাহিনী বলছে বিশেষ করে রাজধানীর উত্তর দিকে আরএসএফ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে তারা অপারেশন চালিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে রয়টার্স বার্তা সংস্থা জানায়, একটি বড় তেল শোধনাগারের কাছে আরএসএফের অবস্থানের ওপর সেনাবাহিনী ড্রোন হামলা চালিয়েছে।

শহরের লাখ লাখ বাসিন্দা তাদের বাড়ি-ঘরে বন্দী হয়ে আছেন এবং তাদের খাদ্যের মজুত কমে আসছে।

বৃহস্পতিবার রাতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের প্রচেষ্টায় যুদ্ধবিরতি ৭২ ঘন্টা জন্য বাড়ানোর জন্য যে ঐকমত্য হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস রক্তপাত বন্ধ করে যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন।

গত এক সপ্তাহ ধরে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির ভেতরে বিভিন্ন দেশ তাদের অনেক নাগরিককে বের করে নিয়ে গেছে।

হাজার হাজার মানুষ সুদান ছেড়ে পালাচ্ছে

শনিবার সুদানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদোক সতর্ক করে দিয়েছেন যে সুদানের এই সংঘাত – সিরিয়া ও লিবিয়ার চাইতেও খারাপ আকার নিতে পারে।

তিনি বলছেন, বিশ্বের জন্য এটা এক দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দেবে বলে মনে হচ্ছে, কারণ এটা একটি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ছোট বিদ্রোহী গোষ্ঠীর লড়াই নয় – বরং প্রায় দুথটি সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধের মতো ঘটনা।

সেনাবাহিনীর দু’গ্রুপের সহিংসতায় আতংকিত সুদানের হাজার হাজার লোক দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে
পশ্চিম দারফুরে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সেখানকার বেসামরিক লোকেরা আরব মিলিশিয়াদের আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করার জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করছে।

পূর্ব চাদ থেকে সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, হাজার হাজার নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষ দারফুর অঞ্চলের সহিংসতার হাত থেকে বাঁচতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। তারা বলছে, প্রতিদ্বন্দ্বী মিলিশিয়ারা তাদের বাড়ি-ঘরে আক্রমণ ও লুটপাট চালাচ্ছে।

সুদানের হাজার হাজার লোক ঘরবাড়ি ফেলে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। উপগ্রহ চিত্রে দেখা যাচ্ছে মিসর সীমান্তের কাছে বাসের দীর্ঘ লাইন পড়ে গেছে।

পলায়নরত যে লোকেরা পোর্ট সুদান পৌঁছাতে পেরেছে তারা এখন লোহিত সাগরের অপর পারে সৌদি আরব যাবার জন্য জাহাজে ঠাঁই পেতে বেপরোয়া হয়ে চেষ্টা করছে।

-কেন এই লড়াই-

সুদানে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে জেনারেলদের একটি কাউন্সিল দেশটি পরিচালনা করছে। কিন্তু পরে বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের মধ্যে তৈরি হয় ক্ষমতার দ্বন্দ্ব।

মূলত কাউন্সিলের শীর্ষ দুই সামরিক নেতাকে ঘিরেই এই বিরোধ। এরা হলেন- জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো।

জেনারেল আল-বুরহান সুদানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান এবং সে কারণে তিনিই দেশটির প্রেসিডেন্ট।

সুদানের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (ডানে) এবং আরএসএফ প্রধান জেনারেল হামদান দাগালো অন্যদিকে দেশটির উপ-নেতা জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো কুখ্যাত আধা-সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস বা আরএসএফের কমান্ডার। তিনি হেমেডটি নামেই বেশি পরিচিত।

আগামীতে দেশটি কীভাবে পরিচালিত হবে তা নিয়েই এই দুই নেতার মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। বিশেষ করে সুদানের ভবিষ্যৎ এবং দেশটির বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাবনা নিয়ে তারা ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করেন।

পর্যেবক্ষকরা বলছেন, এছাড়াও এই দুই জেনারেলের মধ্যে যে বিষয়টি বিরোধের একেবারে কেন্দ্রে রয়েছে, তা হচ্ছে এক লাখ সদস্যের র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা এবং তারপরে নতুন এই বাহিনীর নেতৃত্বে কে থাকবে সে বিষয়টি।

সামরিক বাহিনীতে আরএসএফের একীভূত করার আলোচনায় মূল প্রশ্ন ছিল, নতুন বাহিনীতে কে কার অধীনে কাজ করবেন। এ নিয়ে মতবিরোধের জের ধরেই ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে যায় দু’পক্ষের মধ্যে লড়াই।

সূত্র : বিবিসি

বিএ….

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।