সবার আগে.সর্বশেষ  
ঢাকামঙ্গলবার , ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রাজশাহীতে ধরাছোঁয়ার বাইরে হুণ্ডি ব্যবসায়ীরা

omor faruk
ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২০ ৪:২৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিশেষ প্রতিবেদক : উত্তর জনপদের প্রধান শহর রাজশাহী সহ আশেপাশের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগা ও উপজেলা গুলোতে হুন্ডি ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছে। সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক ও ব্যাংক কর্মকর্তা। এ ব্যবসার মাধ্যমে খুব সহজেই কোটিপতি বনে যাওয়া সম্ভব। আর এ কারণেই গরুর দালাল দের সাথে সাথে শিক্ষক, সরকারি চাকরিজীবী ও ব্যাংক কর্মকর্তা জড়িয়ে পড়ছেন হুন্ডি ব্যবসার সাথে। খবর ২৪ ঘন্টার অনুসন্ধানে জানা গেছে, পশ্চিমের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ, রাজশাহী মহানগরীর মাদক প্রবণ এলাকা গুড়িপাড়া, হড়গ্রাম, কোর্ট এলাকা, মোল্লাপাড়া, চরমাজারদিয়ার, আরডিএ মার্কেট, মিজানের মোড়, জাহাজঘাট, বহরমপুর কাটাখালি ও গোদাগাড়ী উপজেলার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা এই হুন্ডি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ব্যবসার পাশাপাশি হুন্ডি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন দেদারছে। পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে এই হুন্ডি ব্যবসা। যার কারণে সরকার লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। অথচ এটি বৈধভাবে হলে

সরকার এই খাত থেকে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব পাবে। খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ও রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কিছু ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং পৌরসভার কাউন্সিলর এ ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, এই চক্রটি ভারত থেকে নিয়ে আসা ফেনসিডিল, হেরোইন ও ইয়াবা দেশে আসার পর হুন্ডি ব্যবসায়ীদের কাছে কোড নাম্বার হিসেবে চৌঠা মোবাইল এর মাধ্যমে এটি পাঠিয়ে দেয়ার পর টাকার পরিমাণ তখন এরা বিভিন্ন হাটে বেচাকেনা করে টিটির মাধ্যমে চলে যায় ভারতে টাকা। এতে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। রাখালের মাধ্যমে এই গরু গুলো ভারত থেকে নিয়ে আসা হয়। অথচ এই রাখালরা ভারত থেকে সামান্য টাকার বিনিময়ে গরু নিয়ে আসতে গিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর হাতে মৃত্যু ও নির্যাতনের শিকার মাঝেমধ্যেই হয় বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। ওই কর্মকর্তা আরো জানান, রাখালরা ভারতে গরু আনতে গিয়ে আহত হলে এই সিন্ডিকেট করে তাদের খোঁজ নেয় না। এমনকি পরিবারের লোকজন তাদের কাছে ধর্না দিলেও তারা বিভিন্নভাবে এড়িয়ে যায়। আর এই হুন্ডির ব্যবসা করে কতিপয় ব্যক্তি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন রাতারাতি। অধিকাংশ চোরাকারবারীরা রাজশাহীর তেরোখাদিয়া আবাসিক, সিটি বাইপাস ও নগরের উপশহর এলাকার অভিজাত বাড়ির মালিক। তারা

নামে-বেনামে আরো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ভবন নির্মাণ করেছেন। রাজশাহী ও ঢাকায় বসে এই কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। যার কারণে হুন্ডি ব্যবসার সাথে জড়িত মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। আর এই হুন্ডি চালানো হয় একটি প্রভাবশালী চক্রের মাধ্যমে। যেটি সবসময় ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকে। সরকারি দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় রয়েছে এই সিন্ডিকেট ও চোরাকারবারীরা। অনেকে দলীয় পদে রয়েছে। সূত্রটি আরও দাবি, তাদের হাতেনাতে ধরা কঠিন হয়ে যায়। একাধিক সিম ব্যবহার করে।। এরা বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে চালান করে থাকে তারা। এদিকে, অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চোরাকারবারি হুন্ডি ব্যবসায়ীরা রাজশাহীর কাশিয়াডাঙ্গা, মোল্লাপাড়া, কাঠালবাড়িয়া ও মোল্লাপাড়া এলাকা, লিলি হল, নবগঙ্গা ও ঠাকুমার এলাকায় বিলাসবহুল ভাবে জীবন যাপন করে। এদিকে, গত দেড় বছর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট শাখা উত্তরের ৪ জেলার ৫৮ জন অর্থ পাচারকারী অর্থাৎ হুন্ডি ব্যবসায়ী তালিকা প্রকাশ করে। সেই তালিকা নগর পুলিশ এবং রেঞ্জ কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়।

সেই তালিকায় পুঠিয়া উপজেলার মাই পাড়ার সুমন, চারঘাট উপজেলার ইউসুফ পুরের আব্দুর রাজ্জাক, নুরুল ইসলাম মাইনুল ইসলাম মারুফ ফিরোজপুরের আলতাব হোসেন, রাজশাহী মহানগরীর কুমার পাড়ার নুপুর সাহা, আব্দুল গাফফার, আলুপট্টির মাহন কুমার, সাহেব বাজার এলাকার অশোক রাম, ফুদকি পাড়ার রনক ও নুপুর, গুড়িপাড়া শফিকুল ও মোল্লাপাড়ার মাহাবুল ল্যাংড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জের রানিহাটি এলাকার তোজাম্মেল ও নগরীর রাজপাড়া থানার মুকুল, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট বাজারের আবু তালেব, প্রফেসরপাড়ার রফিকুল ইসলাম ওরফে চাইনিজ রফিক, কাঁঠালবাগিচা এলাকার মো. মিণ্টু, পিটিআই মাস্টারপাড়ার মো. আনারুল, স্কুল-কলেজ রোডের গোলাম জাকারিয়া ভদ্র, বটতলা হাট এলাকার সাইফুল ইসলাম, পারচৌকা এলাকার মো. সাজু ও আশরাফুল ইসলাম। মুদ্রা পাচারে জড়িত সিন্ডিকেটের হোতা হিসেবে হাউস নগরের একরামুল হক, চৌকার মো. ফিরোজ, বাগডাঙ্গার টিপু সুলতান ও মাঝপাড়ার রুহুল আমিনের নাম আছে। নওগাঁ জেলার তালিকায় হুন্ডি ব্যবসায়ী হিসেবে নাম আছে তাজের মোড়ের পরিতোষ সাহা, কাপড়পট্টির প্রদীপ কুমার আগরওয়ালা ও নারায়ণ চন্দ্র, তুলাপট্টির গোপাল চন্দ্র সাহা, মেইন রোডের গৌর গোপালা সাহা ও দিবাকর রায়, পার নওগাঁর মনোরঞ্জন পাল আলুপট্টি, সোনা পট্টির নিশিকান্ত দাস।

এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, এ বিষয়ে পুলিশের নজরদারি রয়েছে। হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। জড়িত কারো তথ্য পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখার আলম বলেন, খোঁজখবর নিয়ে হুন্ডী বসায়ীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আর/এস

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।