ঢাকাবুধবার , ১৫ মে ২০১৯
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কার দখলে যাচ্ছে দিল্লির সিংহাসনে?

অনলাইন ভার্সন
মে ১৫, ২০১৯ ১১:১০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

খবর ২৪ ঘণ্টা ডেস্ক: ভারতে ১৭তম লোকসভা নির্বাচনে দফায় দফায় চলছে ভোটগ্রহণ। আগামী রোববার শেষ দফা ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার পর ২৩ মে শুরু হবে ভোট গণনা। এই নির্বাচনে কোন দল সরকার কিংবা দেশে জোট সরকার আসছে কিনা তা নিয়ে চলছে ব্যাপক জল্পনা কল্পনা। ক্ষমতাসীন বিজেপি ও বিরোধী কংগ্রেস এই দু দলই সরকার গঠন করবে বলে দাবি করে আসছে। অন্যদিকে আঞ্চলিক দলগুলির মহাজোট সেই দাবি নস্যাৎ করে দিয়ে বলছে, সরকার গঠনের সম্ভাবনায় তারাই এগিয়ে।

আগামী ২৩ মে ভোট গণনার পরেই এই জল্পনার অবসান হবে । কিন্ত তার আগেই সরকার গড়া নিয়ে হিসেব-নিকেশ শুরু হয়ে গেছে। সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে শাসক দল, বিরোধী দল এবং আঞ্চলিক দলগুলির মহাজোট কে কয়টা আসন পেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। শাসক দল বিজেপি এবং প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের ধারণা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা তাদের হাতের মুঠোয়। অন্যদিকে আঞ্চলিক দলগুলির দাবি, সরকার গড়ার চাবিকাঠি তাদের হাতেই।

তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, শাসক ও বিরোধী দল সরকার গড়ার মতো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে আঞ্চলিক দলগুলিকে কাছে টানতেই হবে। সেক্ষেত্রে বিকল্প সম্ভাবনা কী কী হতে পারে তা খতিয়ে দেখা যেতে পারে।

এক, ২০১৪ সালের মতো বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে শরিক দলগুলিকে নিয়ে এনডিএ (জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট) সরকার গঠন করবে।

দুই, কিন্তু বিজেপি যদি শরিকদের নিয়েও এনডিএ সরকার গড়তে না পারে তাহলে তারা হয়তো বাইরে থেকে অন্য কোনো দলকে জোট সরকার গড়তে সমর্থন দিতে পারে।

তিন, শরিকদের নিয়েও যদি বিজেপি সরকার গড়তে না পারে, সেক্ষেত্রে বিরোধী শিবিরের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ (সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট) সরকার দিল্লির মসনদ দখল করতে পারে।

চার, বিরোধী শিবিরের আঞ্চলিক দলগুলি মিলে সরকার গড়লো এবং কংগ্রেস তাদের সমর্থন দিলো বাইরে থেকে। এই ফেডারেল ফ্রন্ট সরকার গঠনের লক্ষ্য নিয়ে জোর তত্পরতা চালিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে. চন্দ্রশেখর রাও প্রমুখ৷। তবে তামিলনাড়ুর ডিএমকে দলের প্রধান স্টালিন কিন্তু এই জোটে যোগ দেবেন কিনা সে বিষয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করেননি।

সে ক্ষেত্রে সবথেকে বড় প্রশ্নটা হলো আঞ্চলিক দলগুলির মহাজোটের প্রধানমন্ত্রী হবেন কে? চন্দ্র শেখর রাও দক্ষিণী রাজ্যগুলির কাউকে প্রধানমন্ত্রী করার ইঙ্গিতও দিয়ে এসেছেন, এমনটাই শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সবথেকে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশে (৮০টি আসন) প্রধান দুই দল দলিত নেত্রী মায়াবতীর বিএসপি (বহুজন সমাজ পার্টি) এবং অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির জোট এখন পর্যন্ত একটু তফাতে থাকতেই পছন্দ করছে। কারণ, মায়াবতী মনে করেন, তিনিই ফেডারেল ফ্রন্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবার উপযুক্ত প্রার্থী।

ভারতে ষষ্ঠ দফা ভোটেরপরবর্তী পরিস্থিতিতে সরকার গড়া নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক অধ্যাপক উদয়ন বন্দোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘২০১৪ সালের মতো ভোটে মোদি হাওয়া বলে এবার কিছু নেই। গত পাঁচ বছরে মোদি সরকারের কর্মকাণ্ডের একটা অভিঘাত তো পড়তেই পারে, বিশেষ করে দুটো বিষয়ের উল্লেখ করা যেতে পারে, একটা হচ্ছে নোটবন্দি (বিমূদ্রাকরণ), অন্যটা হচ্ছে জিএসটি (পণ্য ও পরিষেবা শুল্ক)৷ এই দুটো সিদ্ধান্ত

নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং খুচরো ব্যবসায়ীদের যথেষ্ট চাপে ফেলেছে। এর একটা ফল তো পড়বেই। অনেক আসনে বিজেপি এজন্য ভোট হারাবে। সাম্প্রদায়িকতা বা সংখ্যালঘু স্বার্থের কথা যদি বাদও দিই, অর্থনৈতিক দিকগুলো বিজেপির জনপ্রিয়তায় চাপ বাড়িয়েছে। মনে হয়, সেটা বিজেপি সরকার এখনো পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। তবে গ্রামাঞ্চলে কিছু কিছু উন্নয়ন কর্মসূচি মোদি সরকার বাস্তবায়িত করেছে; যেমন, গ্রামীণ শৌচালয়, অল্প দামের বাড়িঘর তৈরি ইত্যাদি।’

সেদিক থেকে কংগ্রেসের সম্ভাবনা কতটা দেখছেন? উত্তরে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক উদয়ন বন্দোপাধ্যায় বললেন, ‘কয়েকটা রাজ্যে কংগ্রেস ভালো ফল করবে বলে মনে হয়। যেমন, পাঞ্জাব ও রাজস্থানে। এছাড়া ছত্তিশগড়,মধ্যপ্রদেশ এমনকি কেরালাতেও কংগ্রেস আগের চেয়ে ভালো করবে। তবে কেন্দ্রে একক সরকার গড়ার মতো অবস্থায় পৌঁছোবে না। তখন সরকার গড়তে তাদের বাইরের সমর্থন লাগবে। সামগ্রিক ছবিটা এখনো পর্যন্ত খুব স্পষ্ট নয়। কাজেই ছয়-দফা ভোটের পর কংগ্রেসকে মাঝখানে রেখে বা বাইরে রেখে আঞ্চলিক দলগুলির মহাজোটের সম্ভাবনাই ক্রমশ উজ্জ্বল মনে হচ্ছে৷ অন্তত আমি তাই মনে করি৷’

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।