সবার আগে.সর্বশেষ  
ঢাকাশনিবার , ১০ অক্টোবর ২০২০
আজকের সর্বশেষ সবখবর

অঢেল সম্পদের মালিক আরএমপির ওসি এমটি!

omor faruk
অক্টোবর ১০, ২০২০ ১১:০৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিশেষ প্রতিনিধি : রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ওসি এমটির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে অঢেল সম্পদের মালিক বনে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

ভুয়া বিল ভাউচারে গত ৫ বছর লাখ লাখ টাকা লুটে চলেছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মোটরযান শাখার পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম। আরএমপি পুলিশের যতগাড়ি প্রত্যেকটিতেই তার কালো হাতের থাবা রয়েছে। আর ড্রাইভাররা ভালো থাকার জন্য তার দ্বারস্থ হন তারই কাছে। এখানেও ওসি সাইফুল থানা ভেদে হাতিয়ে নেন মোটা অংকের ঘুষ।
সাইফুলের এই অনিয়ম দূর্নীতের বিরুদ্ধে সোচ্চার পুলিশেরই সদস্যরা। তার এই কালো থাবা মুক্তি পেতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী মেট্রোপলিটনে প্রায় দেড়শতাধিক গাড়ি রয়েছে। এছাড়া রিকুইজিশন করা গাড়ি রয়েছে অর্ধশতাধিকের উপরে। মোটরযান শাখার তত্বাবাধায়ক হওয়ার কারণে পুরো গাড়িগুলো মেরামত, তেল, মবিল ও চালক সবকিছুই তার নিয়ন্ত্রনে। আর এই সুযোগটাই গত ৫ বছর ধরে কাজে লাগাচ্ছেন সাইফুল।  এর এ সুযোগে গাড়ি বাড়ি কি নাই সাইফুলের। রাজশাহী শহরের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রায় সোয়া কোটি টাকার প্লট ও ফ্ল্যাট রয়েছে তার। এছাড়াও নিজস্ব গাড়ি তো রয়েছেই।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন গাড়ি চালক বলেন, ওসি সাইফুলের প্রতিদিন গড়

ইনকাম ১ লাখ টাকার উপরে।  আর এমপির প্রত্যেক গাড়ির জন্য প্রতিদিন তেল বরাদ্দ হয়। সে  গাড়ি প্রতি ৫ লিটার করে করে বেশি লিখে নেয়। প্রায় দুইশ’ গাড়ির তেল লাগে। প্রতি গাড়িতে ৫ লিটার করে তেল বেশি করে লিখলে ৫০০ টাকা। এ রকমভাবে ২০০ গাড়িতে প্রায় ১ লাখ টাকা। এছাড়া প্রতি মাসে মবিল বরাদ্দ থাকে। মবিলেও তার আয় আছে। অনেক গাড়িতে মবিল দেয়ার নামেও লুটপাট করে। মবিল না দিয়ে মবিল দেয়ার ভাউচার বানায়। এছাড়াও টায়ার, যন্ত্রাংশ কেনা এবং মেরামত। এ সবকিছু হিসেব করলে ওসি সাইফুল প্রতি মাসে ৩০/৩৫ লাখ টাকা এই খাত থেকেই লুটপাট করে। এছাড়াও ঘুষ তো রয়েছে। ভালো জায়গায় পোস্টিং দেয়ার জন্য একটি ঘুষ আর প্রতিমাসে আলাদা ঘুষ।

তিনি বলেন, গাড়ি যেহেতু প্রায় ২শ’ সেহেতু ড্রাইভারও সেই সংখ্যক। প্রতি মাসে একজন ড্রাইভার সর্বনিম্ন ১ হাজার থেকে শুরু করে ৩ হাজার পর্যন্ত রয়েছে। এই খাত থেকে প্রতিমাসে ২ লাখের উপরে তার আয়। এভাবে প্রতি মাসে লুটপাট করে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা পকেটে পুরেন সাইফুল। এভাবে গত ৫ বছরে লুটপাট করে টাকার কুমির বেেন গেছেন তিনি।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, সাইফুল ইসলাম ২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশে যোগদান করেন। গত ২০১৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মোটরযান শাখার ইনচার্জ হিসেবে দ্বায়িত্বভার গ্রহন করেন। ২০১৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তিনি পদোন্নতিপ্রাপ্ত হন। একই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি আরেকটি আদেশ করিয়ে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত চলমান রাখেন।  মোটরযান শাখাতে এই লাভের কারণে তিনি আর এই শাখা ছাড়েন। ৫ বছর ধরে তিনি এখানেই আছেন।
অভিযোগে যে সকল খাতে তার অনিয়ম দুর্নীতির উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হলো সরকারী গাড়ির তেল ইস্যু সংক্রান্তে অনিয়ম, লগবই সই, ষ্টান্ড বাই গাড়ি, মবিল ইস্যু, পুড়া মবিল, গাাড়ির যন্ত্রাংশ ক্রয় ও মেরামত সংক্রান্তে অনিয়ম, এমটি শাখার ড্রাইভারদের পদায়ন ও বদলীর ক্ষেত্রে অনিয়ম এবং এমটি শাখার ড্রাইভার সহ অন্যদের ছুটি পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম।
নিজে গাড়ি ব্যবহার সংক্রান্তে ঃ সরকারি সাদা রং এর ডাবল কেবিনের পিকাপ গাড়িটি তিনি প্রায় সময় ব্যবহার করেন। তাঁর নিজস্ব ক্রয়কৃত মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো-চ-১৩-৬৬৮৯) টি পুলিশের কাজে ভাড়া দেওয়া থাকলেও গাড়িটি তার পরিবার অধিক সময় ব্যবহার করেন। এছাড়াও তার আরেকটি একটি মাইক্রোবাস নোহা, এ্যাসকালার এর গাড়ি, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বরঢাকা মোট্রো-চ-১৩-৬৬৮৯। গাড়িটি বগুড়া সদরের

মিজানুর রহমানের এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিনেছেন। গাড়িটি তিনি সরকারি কাজে আরএমপি’তে পুলিশের নিকট ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। গাড়িটি তিনি সরকারি কাজে ক্ষেত্রবিষেশে ব্যবহার করেন। গাড়িটি তিনি অত্যান্ত গোপনীয়তার সাথে ব্যবহার করেন, এই গাড়ির তেল ও ভাড়াসহ যাবতীয় সরকারী খরচ নিজেই গ্রহন করেন। সরকারি কাজে গাড়িটি ব্যবহার হতে তেমন দেখা যায় না। এর বাইরেও তার আরো বেশ কয়েকটি গাড়ি রয়েছে।
বাড়ী ও জায়গা ক্রয় ঃ অতি সম্প্রতি তিনি নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা, চন্ডিপুর ও বুলনপুরে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা দিয়ে প্লট ও ফ্ল্যাট কিনেছেন।
তিনি বর্তমানে রাজপাড়া থানাধীন ঝাউতলা নামক এলাকায় উদায়ন ডেন্টাল এর বিপরীতে শুভেচ্ছা নিড়, চন্ডিপুর, কাজিহাটা, বাসা নং- ৬/বি (৬ষ্ঠ তলা), হোল্ডিং নং-৪৫৬, ওয়ার্ড নং-৮, দশতলা ভবনে বর্তমানের এই বাড়িতে তিনি বসবাস করতেছেন। এই ফ্লাটটি তিনি ৬০ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন। পুলিশ লাইন্সের শাপলা গেট হতে ৫০০ গজ পশ্চিমে বুলনপুর ঘোষ পাড়া নামক স্থানে, মন্দিরের পার্শ্বে একটি জায়গা কিনেছেন যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকার উপওে এবং তিনি রাজশাহী মহানগরির কাশিয়াডাঙ্গা থানাধিন বালিয়া নামক স্থানে ২৫ লাখ টাকা মূলের একটি বাড়ি কিনেছেন। অতি সম্প্রতি এগুলো কেনা।
এদিকে এ বিষয়ে সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এগুলো তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার বলে উল্লেখ করেন। তার বিরুদ্ধে এ সকল অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই বলেও দাবি করেন।
অন্যদিকে এ বিষয়ে আরএমপির মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, এ সংক্রান্ত কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। এ বিষয়ে বিভাগীয়ভাবে খোঁজ খবর নেব।  

এস/আর

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।