বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্মদিন সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য ‘অরাজনৈতিক শিষ্টাচার বিবর্জিত’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার সকালে এক দোয়া মাহফিলে বিএনপি মহাসচিব এ নিন্দা জানান। ফখরুল বলেন, আমরা তো এখানে সবাই দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার দীর্ঘায়ু, সুস্বাস্থ্য কামনা করার জন্য উপস্থিত হয়েছি মিলাদের মাধ্যমে। খালেদা জিয়া এ দেশের গণতন্ত্রের সঙ্গে একটা অবিচ্ছেদ্য নাম, গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তার যে সংগ্রাম, সেই সংগ্রাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। আজকেও এ মুহূর্তে তিনি সেই সংগ্রামই করে চলেছেন।
‘আমাদের যে অবৈধ সরকার আওয়ামী লীগ, যেটি আমাদের বুকের ওপর চেপে বসে আছে, তার সাধারণ সম্পাদক খালেদা জিয়ার জন্মদিন সম্পর্কে একেবারে অরাজনৈতিক শিষ্ঠাচার বিবর্জিত কথা বলেছেন। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) আয়োজিত এক আলোচনাসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্টের দিন ভুয়া জন্মদিন পালন করে খালেদা জিয়া জাতির সঙ্গে প্রতিবছর তামাশা করেন। ম্যাট্রিকুলেশন সনদ অনুযায়ী খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ ৯ আগস্ট ১৯৪৫, বিবাহ সনদে ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫, পাসপোর্ট সনদে ১৯ আগস্ট ১৯৪৫। আবার তিনিই দাবি করেন ১৫ আগস্ট ১৯৪৫ তার জন্মদিন!’
তিনি আরও বলেন, একজন মানুষের এতগুলো জন্মদিন থাকা নিয়ে দীর্ঘদিনের রহস্য এখন নতুন করে খালেদা জিয়াই উন্মোচিত করেছেন। অবশেষে করোনা পরীক্ষার জন্য দেওয়া তথ্যে জানা গেল খালেদা জিয়ার জন্মদিন ৮ মে ১৯৪৬।’
খালেদা জিয়ার প্রতি সরকারের প্রতিহিংসামূলক আচরণের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে একটা মিথ্যা মামলায় যেটি ১/১১ অবৈধ সরকারের আমলে করা হয়েছিল, সেই মামলায় সাজা দিয়ে তাকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে শুধু জনগণ থেকে দূরে রাখার জন্য, রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য তাকে অন্তরীণ করে রেখেছে। আমরা দেখেছি কী নিদারুণ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে তিনি প্রায় তিন বছর এই অন্তরীণ একটা অবস্থা অতিক্রম করছেন এবং এর মধ্যে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে অত্যন্ত গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেই সময়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বলা হয়েছিল তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেওয়ার। সেটিও সরকার তাকে যেতে দেয়নি।
‘এর উদ্দেশ্য হচ্ছে— জনগণের নেত্রী তাকে জনগণের সামনে আসতে না দেওয়া এবং তিনি যেন রাজনীতিতে সক্রিয় হতে না পারেন, সে জন্য ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত তারা করছে। আমরা বিশ্বাস করি এই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ব্যর্থ হবে। তিনি আবার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই যে ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট দানবীয় শক্তি দেশের মানুষের ওপর চেপে বসে আছে, তাদের পরাজিত করতে নেতৃত্ব দেবেন।’
পরে খালেদা জিয়ার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনার বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির উদ্যোগে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৭৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার আরোগ্য, দীর্ঘায়ু ও মুক্তি কামনায় এবং সারা দেশে করোনাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদের আত্মার মাগফিরাতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হয়।
কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় দোয়া মাহফিলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান ও আবদুস সালাম বক্তব্য রাখেন।
দোয়া মাহফিলে বিএনপির হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শিরিন সুলতানা, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, শামীমুর রহমান শামীম, তাইফুল ইসলাম টিপু, মনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, আমিরুজ্জামান শিমুল, জেডএম মুর্তজা চৌধুরী তুলা, বিলকিস ইসলাম, রফিক শিকদার, হায়দার আলী লেলিন, ফরিদা ইয়াসমীন, হাসান জাফির তুহিন, মশিউর রহমান বিপ্লব, মহানগরের আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, যুব দলের সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করীম বাদরু, এসএম জাহাঙ্গীর, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, উলামা দলের মাওলানা নজরুল ইসলাম তালুকদার, মতস্যজীবী দলে আবদুর রহিম, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখরা উপস্থিত ছিলেন।
এই মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে নয়াপল্টনের নিচতলার কক্ষে এবং ফুটপাতে কয়েকশ নেতাকর্মী উপস্থিত হন। দোয়া মাহফিলের পর নেতাকর্মীরা ‘শুভ শুভ শুভদিন খালেদা জিয়ার জন্মদিন, দেশনেত্রীকে শুভেচ্ছা- স্বাগতম’ ইত্যাদি স্লোগানও দিতে দেখা যায়।
জেএন