ঢাকাসোমবার , ১৫ জুলাই ২০১৯
আজকের সর্বশেষ সবখবর

হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি সুন্দরগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি মৃত্যু -১

অনলাইন ভার্সন
জুলাই ১৫, ২০১৯ ৬:৪৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক অবনতি ঘটেছে। নদীদ্বয়ের অববাহিকায় বসবাসরত প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দি এসব মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের গেন্দুরাম গ্রামের দুলা মিয়ার পুত্র আনারুল ইসলাম(৩২) নামে পানিতে ডুবে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। ব্যাপক

ক্ষয়-ক্ষতি সাধিত হয়েছে সব্জি ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসলের। এছাড়া, শ্রীপুর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর গ্রামের ডাকুয়ার ভিটা, সাহার ভিটাসহ কয়েকটি স্থানে তীব্র নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি। এদিকে তারাপুর-সুন্দরগঞ্জ, মীরগঞ্জ বাইপাস সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে পানি উঠে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে জানা গেছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, তিস্তা নদীর ২৯.২২ সেন্টিমিটারের স্থলে ২৯ দশমিক ৪২ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হওয়ায় বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের ১৯ দশমিক ৮২ সেন্টিমিটারের স্থলে ২০ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হওয়ায় বর্তমানে বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, কঞ্চিবাড়ি, শ্রীপুর, চন্ডিপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের

প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এসব পরিবার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আশ্রয়ন কেন্দ্র, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ বিভিন্ন স্থানে গৃহপালিত পশু-পাখি, শিশু, বয়োবৃদ্ধদেরসহ আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যার্তদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেনি। এসব বন্যার্ত মানুষদের খাবারের ব্যবস্থাও নেই। এমনকি তাঁরা এক কাপড়ে অন্যত্রে আশ্রয় নিয়ে দিনাতিপাত করছেন। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল।

সরেজমিনে তারাপুর ও বেলকা ইউনিয়নের বন্যা কবলিত বিভিন্ন গ্রাম পরিদর্শনে বন্যার্তদের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা এ প্রতিবেদককে জানান- ত্রাণ তৎপরতা নেই, চাল-চুলা নেই। এমনকি, নিরাপত্তা নিয়েও তাঁরা শঙ্কিত। রবিবার বিকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তারপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম থানা অফিসার ইনচার্জ এসএম আব্দুস সোবহানকে সঙ্গে নিয়ে ইউনিয়নের বন্যা কবলিত বিভিন্ন গ্রাম পরিদর্শন করেন। এসময় তাঁদের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের মাঝে খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের ঔষধ বিতরণ করা হয়।

বন্যার্তদেরকে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ে থানা অফিসার ইনচার্জ আশ^াস প্রদান করেন এবং তাঁর মোবাইল নম্বর উন্মুক্ত করেন। এরআগে বেলকা ইউপি চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ্ ইউনিয়নের বন্যা কবলিত বিভিন্ন গ্রাম ও আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আশ্রিত বন্যার্তদের খোঁজ খবর নেন। এব্যাপারে তারাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, তার ইউনিয়নে

প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতি হয়েছে সবজি ক্ষেত, মৎস্য ক্ষেত্রসমূহ। তবে এখনও কোন ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেনি। বেলকা ইউপি চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্ল্যাহ্ জানান, তাঁর ইউনিয়নে সাড়ে ৬ সহ¯্রাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। এ পর্যন্ত পাওয়া ত্রাণ সামগ্রী চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সৈয়দ রেজা-ই-মাহমুদ জানান, বন্যার পানিতে আউশ ধান ১’শ হেক্টর, আমন বীজতলা ৮০ হেক্টর ও সবজি ক্ষেতের ৮২ হেক্টর জমি নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া, ১০ হেক্টর জমির পাট ভেঙ্গে গেছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার একেএম হারুন-অর রশিদ জানান, চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বন্যার পানি ঢোকায় ৪২টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোলেমান আলীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারের ব্যবস্থা না থাকলেও তাদের মাঝে এ পর্যন্ত ত্রাণ সামগ্রী হিসেবে ৩’শ ৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার, ও বরাদ্দ পাওয়া ১’শ মে.টন চালের মধ্যে ৮৫ মে.টন চাল ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ১০০ মে.টন চাল, ৫ লক্ষ টাকা ও ৫’শ বান্ডিল ঢেউটিনের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।

খবর২৪ঘণ্টা, জেএন

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।