ঢাকাসোমবার , ৪ অক্টোবর ২০২১
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সাংবাদিকতা করতে গিয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি বহুবার

bulbul ob
অক্টোবর ৪, ২০২১ ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সাংবাদিকতা পেশা থেকে সরানোর জন্য দেওয়া হয়েছে মিথ্যা মামলাও । ২০০৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫ টার দিকে নলডাঙ্গা থানার রামশারকাজিপুর আমতলী বাজারে চারদলীয় জোট সরকার আমলের ভূমি উপমন্ত্রী রুহুল কদ্দুস তালুকদার দুলুর ভাতিজা সাব্বির আহম্মদ ওরফে গামাকে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে আমাকে ও সাংবাদিক শিবলী নোমান কে অজ্ঞাত নামা দুর্বৃত্তরা একটি গরুর গোয়ালে চোখ হাত পা বেঁধে রেখে নির্যাতন চালায়।
ভেঙে দেওয়া হয় আমার দামি ক্যামেরাও। ওই সময় নাটোরের বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হয়। পরবর্তীতে বিকালে আমাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে শিবলী নোমান যমুনা টেলিভিশনে রাজশাহী বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ শিবির-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে নিহত হন রাবির শিবিরের সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান নোমানী।
পরের বছর ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল দখলকে কেন্দ্র করে শিবির-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ কর্মী ও গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ফারুক হোসেন।
ঘটনা গুলোকে কেন্দ্র করে রাবি সহ আশেপাশের এলাকা গুলি ও বোমার বিকট শব্দে কেঁপে উঠে। পরিস্থিতি এত বেশি অস্থিতিশীল হয়ে উঠে যে আইনশৃংখলা বাহিনীও হিমসিম খেয়ে যায়। তখন কর্মরত ছিলাম দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায়। ওই সময় তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে রাতে ক্যাম্পাসে আটকে পড়ি আমি ও সাংবাদিক সুজা উদ্দিন ছোটন ভাই। উত্তপ্ত রাবি ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার কোন সুযোগ পাচ্ছিলাম না,,,চারিদিকে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার! পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছিল।
গুলি, বোমা আর ইটপাটকেলের মধ্যে আটকে পড়ে মনে হচ্ছিল আর বোধহয় বাড়ি ফেরা হবে না। পরবর্তীতে আশ্রয় নিই গাছের নিচে। ওই অবস্থায় পার করি সারারাত। পরে ভোরের আলোর সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে উঠলে সেখান থেকে বাড়ি ফিরে আসি।
২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে এক সাধারণ শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করা হয়। ছবি ও সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে আমাকে সহ ১১ জন সাংবাদিক কে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে।
ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে রাবিতে কর্মরত সাংবাদিকরা বিক্ষোভ করে।
পরে একই ঘটনার প্রেক্ষিতে দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবিতে ১১ জানুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ও সাংবাদিকরা ভিসির কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
১৪ আগস্ট ২০১১ রোববার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর হলে ককটেল উদ্ধারের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। হামলায় আহত হই আমি সহ অর্ধশতাধিক সাংবাদিক। উক্ত ঘটনা গুলোর ভয়াবহতা যে কত বেশি ছিল তা ঘটনাস্থলে থাকা সংবাদকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা ছাড়া অন্য কেউ বুঝবে না। এত মিথ্যা মামলা, হামলা, হয়রানির মুখোমুখি হয়েও কোন অপশক্তির কাছে মাথা নত করিনি।
সত্য প্রকাশের জেরে কুচক্রী মহল কত রকমভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে, এখনো চালাচ্ছে। আমার সুদীর্ঘ কর্মজীবনে অনেক পরিশ্রম করেছি, অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি। দিন-রাত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কাজ করেছি জীবন বাজি করে। সত্য প্রকাশের জন্য বিভিন্ন সরকারের আমলে হামলা ও নির্যাতনের শিকার হই। এত নির্যাতনের পরও ব্যক্তি বিশেষের ক্ষমতার ভয়ে দমে যায় নি, সর্বদা সত্য প্রকাশে অনড় থেকেছি।
এত সংঘর্ষপূর্ণ কর্মজীবন পার করার পরেও আজ কিছু মানুষ আমাকে বলে আমি নাকি অসৎ।
তারা আমার চরিত্রহরণ সহ, আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করার পূর্বে আয়নায় আগে নিজেকে দেখুন, নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনারা কর্মজীবনে কি করেছেন, আপনারা নিজে কেমন?
সাংবাদিকতা মানে ব্ল্যাকমেইলিং করে টাকা উপার্জন করা নয়, সাংবাদিকতা মানে অপপ্রচার করা আর মিথ্যা তথ্য দিয়ে খবর প্রকাশ করা নয়। অন্যের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে খবর ছাপানো আর হেয় করা সাংবাদিকতা না।
বিএ/

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।