ঢাকাসোমবার , ২৮ অক্টোবর ২০১৯
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রাজশাহীর পদ্মাপাড়ে প্রকাশ্যে ধূমপান, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে হাজারো বিনোদপ্রেমী

khobor
অক্টোবর ২৮, ২০১৯ ৭:২৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীতে বিনোদন প্রেমিদের বিনোদনের অন্যতম স্থান পদ্মাপাড়। পুরো পদ্মাপাড়ের নৈস্বর্গিক দৃশ্য যে কাউকে আকৃষ্ট করবেই। তাই পদ্মাপাড়ের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য অবলোকনে শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী প্রকৃতিপ্রেমিদের উপচেড়া ভিড় যেন লেগেই থাকে।
তবে নির্মল পদ্মাপাড়ের ¯িœগ্ধ-কোমল বিশুদ্ধ বাতাস ধূমপায়ীদের ধূমপানের ধোঁয়ায় দিনের পর দিন হয়ে উঠছে বিষাক্ত। কারণ পদ্মাপাড়ের পুরো এলাকায় দেদারছে চলে ধূমপান। ফলে নির্মল বিনোদন নিতে আসা নানা বয়সের হাজারো বিনোদনপ্রেমি বর্তমানে ধূমপায়ীদের বিষাক্ত নিকোটিনের ধোঁয়ায় চরম স্বাস্থ্যঝুঁতিতে রয়েছে।
এদিকে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন অমান্য করে ধূমপায়ীরা পাবলিক প্লেসে (পদ্মাপাড়ে) দেদারছে ধূমপান করলেও কর্তৃপক্ষ আইনগত কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই নির্মল আনন্দ নিতে আসা মানুষদেরকে ধূমপানের বিষাক্ত ধোঁয়া থেকে রক্ষায় পদ্মাপাড়ে ধূমপান বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন রাজশাহীবাসী।

সরেজমিনে গতকাল সোমবার পদ্মাপাড়ের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা গেছে, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বিনোদনপ্রেমিদের পদচারণায় মুখর ছিল পদ্মাপাড়। বিশেষ করে প্রতিদিন বিকালে পুরো পদ্মাপাড়ে বিভিন্ন বয়সের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতি সবার নজর কাড়ে। সাজ সাজ রবে মনে হয়, সব সময়ই পুরো পদ্মাপাড় একটি মিলনমেলার আবাসভূমি। কিন্তু ইদানিং নির্মল পদ্মাপাড়ে হাজারো মানুষের ভিড়ের মধ্যে ধূমপায়ীদের ধূমপানের দৃশ্য পদ্মাপাড়ে বেড়াতে আসা মানুষদের ভাবিয়ে তুলেছে।
সোমবার বিকালে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে পদ্মাপাড়ে বেড়াতে আসা মহানগরীর টিকাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. শরীফ উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পদ্মাপাড়ে নির্মল বিনোদনের জন্য অত্যন্ত সুন্দর একটি পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। এখানে প্রায় নানা বয়সের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমাগম সবসময় বিরাজমান। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই পাবলিক প্লেসে লোকজন দেদারছে ধূমপান করছে। অথচ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, পদ্মাপাড়ে বিভিন্ন বসার স্থান ও ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে নানা বয়সের মানুষ আড্ডা দিচ্ছিলো। পাশেই বসে স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী, স্থানীয় টোকাইসহ নানা বয়সী ধূমপায়ীরা ধূমপান করছে। এমনই কয়েকজন কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীকে সোমবার বিকালে বড়কুঠি পদ্মারপাড়ের জনসমাগম স্থলে ধূমপান করতে দেখা গেল। পাবলিক প্লেসে কেন ধূমপান করছেন এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে চঞ্চল নামে তাদের একজন বলে উঠলেন, ‘কিসের পাবলিক প্লেস। খোলামেলা জায়গায় বসে সিগারেট খাচ্ছি এতে আবার ক্ষতির কী হলো!’ তাদের মত অনেকেই দেদারছে ধূমপান করছে কিন্তু কেউ তাদেরকে ধূমপান করতে নিষেধ করার সাহস পাচ্ছে না।
আম-মামুন নামে সেখানে বেড়াতে আসা এক বিনোদনপ্রেমি বলেন, ‘পদ্মাপাড়ে ধূমপায়ীদের অধিকাংশই স্থানীয় কিশোর গ্যাং কিংবা লোকাল লোকজন। তাদেরকে ধূমপান নিষেধ করার কথা বললেই তারা উল্টো কথা শুনিয়ে দেয়। এমনকি আক্রমণাত্মক আচরণও করে। তাই মানসম্মানের ভয়ে কেউ তাদেরকে ধূমপান থেকে বিরত থাকার কথা বলতে সাহস পায় না।’
তবে সচেতন রাজশাহীবাসীর দাবি, পদ্মাপাড় নির্মল বিনোদনের অন্যতম একটি কেন্দ্র। ধূমপানের কারণে নির্মল বিনোদন নিতে আসা মানুষগুলোকে যাতে বিশুদ্ধ বাতাসের পরিবর্তে ধূমপানের ধোঁয়া নিয়ে ফিরে যেতে না হয় এজন্য তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘পদ্মাপাড়ে নারী-শিশু

থেকে শুরু করে নানান বয়সী মানুষের সমাগম সব সময় বিরাজমান। অথচ এমন গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক প্লেসে ধূমপান জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এর কারণে অনেকেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
রাজশাহীর আইনজীবী লোকমান আলী বলেন, ‘২০০৫ সালে (সংশোধন ২০১৩) ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) নামে একটি আইন পাস হয়েছে। আইনের ৪ এর (১) উপ-ধারায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি পাবলিক প্লেসে ধূমপান করতে পারবে না কেউ করলে তিনশত টাকা অর্থদন্ড করার বিধান রয়েছে।’
পদ্মাপাড়ে ধূমপান বন্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে কীনা তা জানতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পালের মোবাইল ফোনে

একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. হামিদুল হক বলেন, ‘রাজশাহীতে উঠতি বয়সের ছেলেদের যেখানে-সেখানে বসে আড্ডা দেয়া কিংবা ধূমপান করার বিষয়টি আমরা মনিটরিংয়ের মধ্যে রেখেছি। আমাদের ক্রাস প্রোগ্রাম অব্যাহত ছিল। এটি আরও বেড়ে গেলে প্রোগ্রামটি আরও জোরদার করা হবে। এছাড়া পদ্মারপাড় নগরীর বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে ধূমপান বন্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

আর/এস

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।