ঢাকাসোমবার , ১১ নভেম্বর ২০১৯
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রাজশাহীতে মির্জা নার্সিং কলেজ পরিচালকের প্রতারণায় অনিশ্চিত ৫০ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা

অনলাইন ভার্সন
নভেম্বর ১১, ২০১৯ ৩:৪৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিশেষ প্রতিবেদক : নার্সিং কলেজের অনুমোদন না পাওয়ার পরেও দালালের মাধ্যমে অর্ধশতাধিক ছাত্রছাত্রী ভর্তি করে প্রায় ২৫ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে কথিত রাজশাহী মির্জা নার্সিং কলেজের পরিচালক মির্জা ফারুক। আর এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ৫০ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনের সময় ঘনিয়ে আসতেই পরিচালক গা ঢাকা দেন। কথিত পরিচালকের সাথে কল দিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়না। এখন ছাত্রছাত্রীরা নার্সিং কাউন্সিলসহ বিভিন্ন স্থানে ছুটাছুটি করছেন নিজেদের পড়াশোনা টেকানোর জন্য। কিন্ত কোন কোন স্থানে আশ্বাস পেলেও তা তাদের পড়াশোনার কাজে আসছেনা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর শহীদ কামারুজ্জামান স্টেডিয়ামের পশ্চিমে অবস্থিত কথিত মির্জা নার্সিং কলেজ। এখানে বিএসসির অনুমোদন থাকলেও নার্সিং কলেজের অনুমোদন নেই। অনুমোদন না থাকার পরেও গত বছরের দিকে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মির্জা ফারুক তার মনোনীত কিছু প্রতিনিধি (দালালের) মাধ্যমে কমিশনের বিনিমিয়ে নগরীর বিভিন্ন কোচিং সেন্টার থেকে প্রায় ৫০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি করেন। ৫০ জনের প্রত্যেকের কাছ থেকে ভর্তি বাবদ ২৫ হাজার ৫০০ টাকা এবং তিন বছর মেয়াদী কোর্স ফি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে নেন।

তবে এসব ছাত্রছাত্রীর মধ্যে কেউ কেউ তিন বছর কোর্সের পুরো ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিলেও কেউ কেউ এক বছরের কোর্সের জন্য আরো ৪০ হাজার টাকা প্রদান করে। পরিচালক ৫০ জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেকের কাছ থেকেই বছরের শুরুতেই ভর্তি বাবদ ২৫ হাজার ৫০০ টাকা এবং এক বছরের কোর্স ফি বাবদ আরো ৪০ হাজার টাকা করে নেন। এরপর চলতি বছরের গত অক্টোবর মাসের ৩০ তারিখ পেরিয়ে গেলেও শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় তারা পরিচালকের সাথে দেখা করার চেষ্টা করে। কিন্ত একাধিকবার চেষ্টা করেও তারা পরিচালকের সাথে সাক্ষাত করতে ব্যর্থ হয়।

পরিচালকের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেন না। কল রিসিভ না করায় কেউ তার সাথে যোগাযোগ করতে পারে না। রেজিস্ট্রেশন করতে না পারায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। তারা ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ করেন। কিন্ত পরিচালক না থাকায় কেউ তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। পরিচালকের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে এখন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা ঢাকায় প্রধান রেজিস্টারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। রেজিষ্টারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে পুর্বে মৌখিক ভাবে শুনেছি কিন্তু লিখিত কোন অভিযোগ আসেনি। কিছুদিন আগে সেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মির্জা নার্সিং কলেজের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে জানান, প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ডিপ্লোমা নার্সিং হিসেবে সব ছাত্রছাত্রীকে ভর্তি নিয়েছেন। কিন্তু পরে তারা জানতে পেরেছেন প্রতিষ্ঠানের ডিপ্লোমা নার্সিং কলেজের কোন বৈধ কাগজ পত্র নেই। পরিচালক ভর্তি ফি বাবদ ২৫ হাজার ৫০০ টাকা এবং এক বছরের কোর্স ফি বাবদ আরো ৪০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এখন তার দেখা পাওয়া যাচ্ছেনা। তিনি ফোনও ধরছেন না।

এ অবস্থায় সবাই বিপাকের মধ্যে রয়েছেন। সবার পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
মির্জা নার্সিং কলেজের ভুক্তভোগী ছাত্রী স্বপ্না রানি অভিযোগ করে জানান, তিনি একটি কোচিং সেন্টারে কোচিং করতেন। কোচিংয়ের সুবাধে নার্সিং কলেজের পূর্ব পরিচিত বড় ভাই আকাশ তাকে মির্জা নার্সিং কলেজে ভর্তি করে দেন। ভর্তির সময় ভর্তি বাবদ ২৫ হাজার ৫০০ টাকা এবং তিন বছরের কোর্সের ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে এক বছরের কোর্সের জন্য আরো ৪০ হাজার টাকা দেন। গত ৩০ অক্টোবর রেজিস্ট্রেশনের শেষ তারিখ ছিল। কিন্ত কারোই রেজিস্ট্রেশনই হয়নি। রেজিস্ট্রেশনের সময় আসার পরেই পরিচালক কৌশলে কলেজে আসা বন্ধ করে দেন।

এরপর থেকে পরিচালককে আর দেখা যায়নি। তাকে ফোন করলেও ফোন ধরেন না। তিনি আরো অভিযোগ করে জানান, এ বছরই তার ভর্তির যোগ্যতা শেষ ছিল। শুধু তারই না তার মতো অনেকের এবছরই ভর্তির যোগ্যতা শেষ বছর ছিল। কিন্ত পরিচালকের প্রতারণায় পড়ে এখন পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তিনি পরিচালকের বিচার দাবি করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তবে নার্সিং কাউন্সিলে যোগাযোগ করার পরে কাউন্সিল থেকে ফাঁকা কলেজগুলোতে ভর্তি ব্যবস্থা করে দেওয়া বলে আশ^াস দেন।

সোনিয়া খাতুন নামের আরেক ভুক্তভোগী ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, আমি নগর ভবনের কাছে অবস্থিত আইরিশ নামের একটি কোচিং সেন্টারে কোচিং করতাম। কোচিং শেষ হয়ে যাওয়ার পর ওই কোচিংয়ের খুরশেদ নামের এক ভাইয়ার মাধ্যমে মির্জা নাসিং কলেজে ভর্তি হই। খুরশেদ ভাইয়ার মাধ্যমে আমার আরো ৮/৯ বান্ধবী ভর্তি হয়েছিল। শুধু আমরা নয় অনেকেই বিভিন্ন বড় ভাই বা পরিচিতদের মাধ্যমে নার্সিং কলেজে ভর্তি হয়। ভর্তি হওয়ার সময় পরিচালক ভর্তি বাবদ ২৫ হাজার ৫০০ টাকা এবং এক বছরের কোর্সের জন্য আরো ৪০ হাজার টাকা নিয়েছিল। রেজিস্ট্রেশনের সময় আসার পরেই পরিচালক গা ঢাকা দেয়। এখন তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়না। তিনি শুধু তার পছন্দের লোকদের সাথে যোগাযোগ করেন। তার কঠোর শাস্তি হওয়া উঠিত। তার প্রতারণার কারণে আমাদের পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক ভুক্তভোগী ছাত্র বলেন, নার্সিং কলেজের পরিচালক পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কমিশনের দেওয়ার মাধ্যমে তার নিজস্ব দালালের মাধ্যমে টোপ দিয়ে আমাদের ভর্তি করান। ছাত্র ভর্তি করিয়ে দেওয়ার জন্য ওই পরিচালক দালালদের মোটা অঙ্কের টাকাও দিয়েছেন। কোচিং সেন্টারগুলোর সাথে তার যোগাযোগ রয়েছে। তাদের মাধ্যমেই তিনি ছাত্র ভর্তি করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করলে বের হয়ে আসবে। আমরা বিপদের মধ্যে আছি। পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পরিচালকসহ যারা এর সাথে জড়িত তাদের কঠোর শাস্তির দাবি করছি।

এ বিষয়ে নার্সিং কলেজের পরিচালক মির্জা ফারুকের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ ও সরাসরি কলেজে গিয়েও যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

খবর ২৪ঘণ্টা/ জেএন   

 

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।