সবার আগে.সর্বশেষ  
ঢাকাবুধবার , ১২ জুন ২০১৯
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রাজশাহীতে বড় ভাইয়ের বদলে আটক হওয়া সজলকে মুক্তির আদেশ

omor faruk
জুন ১২, ২০১৯ ৫:১১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে ‘বড় ভাইয়ের বদলে’ গ্রেপ্তার হওয়া ডাব বিক্রেতা সজল মিয়াকে (৩৪) দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে আসামি না হয়েও কেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া আসামি হিসেবে সজলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তার জবাব দিতে রাজশাহী মহানগর পুলিশের শাহমখদুম থানার ওসি এসএম মাসুদ পারভেজকে শোকজ করেছেন আদালত বলে সজলের আইনজীবী মোহন কুমার সাহা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, বুধবার বিকেলে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের (প্রথম) বিচার মো. মনসুর আলম এ আদেশ দেন। আদেশ অনুযায়ী ওসি মাসুদ পারভেজকে সাত দিনের মধ্যে আদালতে স্বশরীরে হাজির হয়ে জবাব দিতে হবে। গত ৩০ এপ্রিল সজলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

সজলের বাড়ি নগরীর ছোটবনগ্রাম পশ্চিমপাড়া মহল্লায়। বাবার নাম তোফাজ উদ্দিন। সজলের বড় ভাইয়ের নাম সেলিম ওরফে ফজল। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলায় ২০০৯ সালে ফজলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। রায় ঘোষণার আগে থেকেই তিনি পলাতক। গত ৩০ এপ্রিল শাহমখদুম থানা পুলিশ সজলকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ফজল হিসেবে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

সজলের আইনজীবী মোহন কুমার সাহা বলেন, অপরাধী না হয়েও সজল কয়েদি হিসেবে সাজা ভোগ করেছেন। তার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। ওসির শোকজের জবাব পাওয়ার পর আদালত এ ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত দেবেন সেটির জন্য আমরা অপেক্ষা করব। তারপর প্রয়োজনে মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা ভুক্তভোগী সজলের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি করে আদালতে আবেদন করব।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোজাফফর হোসেন বলেন, নির্দোষ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর জন্য ওসির শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু এখানে দুজন সাক্ষী ওসিকে এফিডেফিট করে দিয়ে বলেছিলেন, এটাই আসামি। তাই ওসির জবাবের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তারপর আদালতই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, সজলকে যখন আদালতে উপস্থাপন করা হয় তখন তার নাম ফজল বলেই পুলিশের গ্রেপ্তারি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল। দুইজন সাক্ষী এ ব্যাপারে এফিডেফিট করে দেয়ায় তাকে সেদিন কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু গত ২৬ মে সজল আসামি নন দাবি করে আইনজীবীর মাধ্যমে নিজের মুক্তির জন্য আবেদন করেন। এরপর মঙ্গলবার শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়। এ দিন আদালত না বসায় পরদিন আবারও শুনানি হলো। প্রায় দেড় মাস কারাভোগের পর এ দিন অব্যাহতি পেলেন সজল।

আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০১ সালে আসামি ফজলের বয়স ছিল ২৭ বছর। বর্তমানে তার বয়স হবে ৪৫ বছর। কিন্তু সজলের জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী তার বর্তমান বয়স ৩৫ বছর। এছাড়া আসামি ফজল মামলার রায়ের আগে একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তখন তার শারিরীক গঠন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে সংরক্ষণ করা হয়। এখন আবার পর্যাবেক্ষণ করে দেখা যায়, গ্রেপ্তার সজলের সঙ্গে সে বর্ণনার উল্লেখযোগ্য তারতম্য রয়েছে। পুলিশ ভুল করে তাকে ফজল ভেবে গ্রেপ্তার করেছে।

এ দিন সজলের ছয় ভাই-বোন আদালতে এফিডেফিট করে জানান যে, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ফজল দীর্ঘ দিন ধরেই নিখোঁজ রয়েছেন। তারা ফজলের কোনো খোঁজ জানেন না। তিনি বেঁচে আছেন কি না তারা সেটিও জানেন না। আর ফজল হিসেবে যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনি আসলে সবার ছোট ভাই সজল। এসব তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই সজলকে দায় হতে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।

তবে আদালতের আদেশের পর তাকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আদালত থেকে আদেশের অনুলিপি সেখানে পাঠানো হবে। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ যাচাই করে দেখবে তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে কি না। তা না থাকলে সজলকে মুক্তি দেয়া হবে। এ দিন আদালত থেকে সজল হাসিমুখেই কারাগারে গেছেন। তবে পুলিশ তার সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের কথা বলতে দেয়নি।

অবশ্য আগের দিন শুনানির জন্য আদালতে আনা হলে হাজতে ঢোকানোর সময় সজল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। ওই দিন তিনি বলেন, ‘কোনো দোষ করিনি। আমি আসামি না। তারপরেও আমি কয়েদি!’ সজল বলেন, ‘পুলিশ আমাকে বিনাদোষে জেলে পাঠিয়েছে। জেলে কয়েদি হিসেবে কাঠমিস্ত্রিও কাজ করতে হয়। বিনাদোষে এসব সহ্য করতে হচ্ছে।’

আর/এস

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।