ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৩০ মার্চ ২০২৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কমিশন গঠন করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের খুনিদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
মার্চ ৩০, ২০২৩ ৮:৫১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে “খুনী মোশতাক ও জিয়ার অবৈধ সরকারের কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স: পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন এক কালো আইন শীর্ষক” আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন এর সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।

উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, সংগঠনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব:) মফিজুল হক সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল, ভাস্কর্য শিল্পী রাশাসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

আলোচনা সভার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি বলেন, “বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মাস্টামাইন্ড খুনী জিয়া-মোশতাক চক্রের অবৈধ ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বা দায়মুক্তি অধ্যাদেশ কি এবং কখন জারি হয়েছিল সেটা নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যার পর ক্ষমতায় বসে সামরিক আইন জারি করেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ, যার পেছনে ছিলেন সেনাবাহিনীর একদল বিপথগামী কর্মকর্তা।

এসব সেনা কর্মকর্তারা সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও সেনাবাহিনীর তৎকালীন উপ-প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখতেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে হত্যাকারী খন্দকার মোশতাক আহমেদের হত্যার দায় থেকে মুক্তি বা অব্যাহতি প্রয়োজন হয়ে পড়ে। নইলে এদের বাঁচার কোন উপায় ছিল না। সেজন্য জারি করা হয় পৃথিবীর ইতিহাসের এক নজিরবিহীন কালো আইন – ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সথ বা ‘দায়মুক্তি অধ্যাদেশ। ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জারি করা হয় ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সথ বা ‘দায়মুক্তি অধ্যাদেশ। ‘দি বাংলাদেশ গেজেট, পাবলিশড বাই অথরিটিথ লেখা অধ্যাদেশটিতে স্বাক্ষর করেছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এইচ রহমান। দুই অংশের অধ্যাদেশটির প্রথম অংশে বলা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বলবৎ আইনের পরিপন্থি যাই কিছুই ঘটুক না কেন, এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টসহ কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না। আর দ্বিতীয় অংশে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি (অর্থাৎ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহেমেদ) উল্লিখিত ঘটনার (অর্থাৎ ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ঘটনা) সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে যাদের প্রত্যায়ন করবেন তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হল।

‘দায়মুক্তি অধ্যাদেশের সোজাসাপ্টা মানে দাড়াল এই যে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে মামলা, বা অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না।

ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের সঙ্গে মেজর জেনারেল জিয়ার সংশ্লিষ্টতা

নানা তথ্য-উপাত্তের মধ্য দিয়ে এটি আজ প্রামাণিক যে, এই অধ্যাদেশ জারির পেছনে তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের সরাসরি জড়িত ছিল। সামরিক অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল নিজেই রাষ্ট্রপতির পদে আসীন হয়ে জিয়াউর রহমান ওই অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল কুশীলব জিয়া-মোশতাক চক্রের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচন করার জন্য অবশ্যই কমিশন গঠন করতে হবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, “আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে আবার রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। দেশবিরোধী অপশক্তির সকল ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার জন্য সকলকে সজাগ থাকতে হবে। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে অবৈধ সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি কারচুপির মাধ্যমে দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হয়। ওই বছরের ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী পাস হয়।

‘সংবিধান (পঞ্চম সংশোধনী) আইন, ১৯৭৯ শিরোনামের ওই সংশোধনীতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত দায়মুক্তি অধ্যাদেশসহ চার বছরের সামরিক আইনের আওতায় সব অধ্যাদেশ, আদেশ, ও ফরমানকে বৈধতা দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার বন্ধে জিয়া পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করেন। পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে দায়মুক্তি অধ্যাদেশকে বৈধতা দেওয়ায় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীরা পাকাপোক্তভাবে দায়মুক্তি পেয়ে যান। ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল সামরিক আইন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাকের জারি করা ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। ফলে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে যে বাঁধা ছিল তা অপসারিত হয়। হত্যাকারীদের বিচার যেন হতে না পারে সেজন্যে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী আনেন। সংবিধান (পঞ্চম সংশোধনী) আইন, ১৯৭৯-এর ক্ষমতাবলে ভবিষ্যতে কেউ যাতে ১৫ অগাস্টের খুনিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিতে পারে, সে ব্যবস্থাটিকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিণত করা হলো। নিঃসন্দেহে এই অধ্যাদেশটি ছিল আইনের শাসন বিরোধী নজিরবিহীন এক কালো আইন। একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিশন গঠন করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত জিয়া-মোশতাকের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।”
বিএ/

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।