ঢাকাসোমবার , ২৭ জানুয়ারি ২০২০
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আজহারীর মাহফিলে ধর্মান্তরিত ১২ জন ভারতের নাগরিক

অনলাইন ভার্সন
জানুয়ারি ২৭, ২০২০ ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

খবর২৪ঘণ্টা  ডেস্ক: লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে একটি ওয়াজ মাহফিলে গত ২৪ জানুয়ারি ১২ জন নারী-পুরুষ হিন্দু ধর্ম ছেড়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। শনিবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে ভারতীয় পাসপোর্টসহ তাদেরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তারা রামগঞ্জ থানা হেফাজতে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

পুলিশ জানায়, ধর্মান্তরিত ১২ জনের কাছ থেকে ভারতের বৈধ পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। তারা ভারতের নাগরিক। দুই মাসের ভিসা নিয়ে ২০১৯ সালের ১৪ আগস্ট বেনাপোল হয়ে বাংলাদেশে আসে তারা। কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তারা ভারত ফিরে যায়নি। গত ডিসেম্বরে তারা ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে বাংলাদেশি জন্মসনদ তৈরি করেছে। যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদেরকে দ্রুত ভারত পাঠিয়ে দেয়া হবে।

জানা গেছে, শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) উপজেলার পানপাড়া এলাকার ওয়াজ মাহফিলে ইসলামী বক্তা ছিলেন মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী ও আমির হামযাসহ কয়েকজন আলেম। সেখানে মাহফিলের আয়োজকদের মাধ্যমে মনির হোসেনসহ (হিন্দু নাম শঙ্কর অধিকারী) তার পরিবারের ১২ জন সদস্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। হিন্দু ধর্ম ছেড়ে ইসলাম গ্রহণ করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল হয়। এর প্রেক্ষিতে খোঁজ নিতে গিয়ে পুলিশ তাদেরকে ভারতীয় পাসপোর্টসহ গ্রেফতার করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মনির প্রায় ৩৫ বছর আগে ঢাকার টঙ্গিতে খালা হালিমার কাছে থাকতেন। তখন তিনি ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন। ওই সময় তার বয়স প্রায় ১৪ বছর ছিল। বিশ্ব ইজতেমায় মুড়ি বিক্রি করতে গিয়ে একদিন হারিয়ে যান তিনি। এরপরে তার আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। মনির রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়নের ডাক্তার বাড়ির মজিবুল হক ও বর্তমান সংরক্ষিত ইউপি সদস্য ফাতেমা বেগমের বড় ছেলে।

রামগঞ্জ উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য (মেম্বার) মো. ইব্রাহিম মিয়া বলেন, মনিরসহ ধর্মান্তরিত ১২ জন নারী-পুরুষ গত কয়েক মাস ধরে উপজেলার হরিশ্চর গ্রামের হাফেজ আয়াত উল্যাহর ঘরে ভাড়া থাকতো।

ফাতেমা বেগম জানান, বহু বছর পর এক লোকের মাধ্যমে তিনি ছেলে মনিরের সন্ধান পান। জানতে পারেন তার ছেলে ভারতের কলকাতায় আছে। তবে শঙ্কর অধিকারী নাম নিয়ে হিন্দু ধর্মীয় এক নারীকে বিয়ে করেছে। সেখানে তার ছেলেমেয়েও আছে।

এ বিষয়ে ফাতেমার ছোট ছেলে জহির উদ্দিন বলেন, মনির ২০১৬ সালে দেশে একা এসেছিলেন। কিন্তু হিন্দু হয়ে গেছেন জেনে আমরা তাকে দুই দিনের বেশি বাড়িতে থাকতে দেইনি। পরে তিনি ফের কলকাতায় চলে যান। এরপরে তিনি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ভারত থেকে চলে আসতে চেষ্টা করেন। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে দেশে চলে আসেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি মুসলমান হতে চাইলে আমরা খুশি হয়। এরপরই গত সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিলে মনির স্ত্রী-ছেলেমেয়েদের নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন।

সদ্য ধর্মান্তরিত মনিরের বরাত দিয়ে ছোট ভাই জহির উদ্দিন বলেন, হারিয়ে যাওয়ার পর বাড়ি-ঘরের ঠিকানা তিনি কাউকে বলতে পারেননি। কারো মাধ্যমে তিনি দেশ থেকে ভারতের কলকাতায় চলে যান। সেখানে তিনি বন্দিখানায় ছিলেন। মুক্তি পেলেও তিন দেশে আসতে পারেননি। কলকাতায় থাকতে গিয়ে তিনি নিজেকে হিন্দু পরিচয় দিতে থাকেন। এরপর এক হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করেন। তার সংসারে সন্তান আসে। পরে তিনি আরও একটি বিয়ে করেন। এখন তার দুই সংসারে ৮ সন্তান রয়েছে। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিনি রামগঞ্জে চলে আসেন।

লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার ড. এএইচএম কামরুজ্জামান বলেন, ধর্মান্তরিত মনিরসহ ১২ জনের কাছ থেকে ভারতের পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। পাসপোর্টে মনিরের নাম শঙ্কর অধিকারী। তারা ভারতের নাগরিক। অবৈধ অভিবাসী হিসেবে তাদেরকে গ্রেফতার করে থানায় রাখা হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদেরকে ভারতে ফেরত পাঠানো হবে।

এমকে

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।