ডা. পলাশ বসু , এবারে হঠাৎ করেই শীত বেশি পড়তে শুরু করেছে। তার সাথে যোগ হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। অতীত বলছে একনাগাড়ে এতদিন ধরে সাধারণত শৈত্যপ্রবাহ থাকে না। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম হচ্ছে। ফলে তাপমাত্রা দ্রুত নিচে নেমেছে। নামতে নামতে দেখা গেলো এবারে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড সৃষ্টি হয়ে গেলো।
শীতের সময় শীত পড়বে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অবস্থা একটা খারাপ হবে তা হয়তো সকলের ধারণার বাইরে ছিলো। এর জন্য আমরাই দায়ী। কারণ আমরা প্রকৃতির গতিপথে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেই চলেছি। উন্নত দেশগুলো এর জন্য বেশি দায়ী হলেও আমাদেরও দায় কোনো অংশে কম নেই। কারণ আমরা অপরিকল্পিত নগরায়ণকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে বন কেটে উজাড় করে ফেলছি। নদ-নদী ভরাট করে মিল কলকারখানা তৈরি করছি। ফলে প্রকৃতি বিরূপ হচ্ছে। আর আমরা তার সহজ শিকার হচ্ছি।
‘আগুনে পোড়া রোগীর ক্ষেত্রেও কিন্তু সঠিক প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া জরুরি। আমরা অনেক সময় পুড়ে যাওয়া জায়গায় ডিমের কুসুম, পেস্ট, লতাপাতার রস তাৎক্ষণিকভাবে লাগিয়ে থাকি। অনেকে আবার ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানিও ঢালেন। এর কোনটারই দরকার নেই।’
স্বাভাবিকভাবে গত ক’বছর ঢাকা শহরে তেমন শীত পড়তো না। এবার কিন্তু বেশ ভালোভাবেই শীতের প্রকোপ আমরা এখানে টের পাচ্ছি। ঢাকাতেই যদি এমন অবস্থা হয় তাহলে, গ্রামাঞ্চলগুলোতে কি অবস্থা হচ্ছে সেটা সহজেই আমরা অনুমান করতে পারি। এবার শীতের সাথে কুয়াশাও পড়ছে প্রচুর। ফলে যানবাহন, লঞ্চ, ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে সময় বেশি লাগছে। দুর্ঘটনারও ঝুঁকি বাড়ছে। শ্রমজীবী মানুষের ভোগান্তি ধারণার বাইরে চলে গেছে।
একটা সময় ছিলো (হয়তো এক দশকও হবে না!!) যখন শীতের তীব্রতায় মানুষ মারা যেতো। কারণ সে সময়ে প্রান্তিক মানুষের শীত নিবারণের জন্য যথেষ্ট গরম কাপড় চোপড় ছিলো না। ফলে উপায়হীন হয়ে তাদেরকে শীত গায়ে সয়ে নিতে হতো। ফলে বৃদ্ধ এবং শিশুরা এমন অবস্থায় ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগে মারা যেতো বেশি। শীত শুরু হলে উত্তরাঞ্চলে এমন মৃত্যু ঠেকানোর জন্য তাই লড়াই করতে হতো। তবুও শেষ রক্ষা হতো না। পত্রিকার পাতায় এমন মৃত্যু সংবাদ হামেশাই দেখা যেতো।
অথচ এখন কিন্তু শীতের প্রকোপে মানুষ মারা যাচ্ছে- এমনটি আর শোনা যায় না। তবে, শীতে মৃত্যু ঠিকই হচ্ছে। শুনে অবাক হবেন যে, এ মৃত্যুর কারণ হচ্ছে আগুন। অবাক হচ্ছেন? না, অবাক হওয়ার কোন কারণ নেই। কারণ পরিসংখ্যান বলছে, আগুনের কারণে শীতের সময় মৃত্যুর হার বাড়ছে। অথচ একটু সাবধানতা অবলম্বন করলেই কিন্তু এমন মৃত্যুর হাত থেকে সহজেই বাঁচা সম্ভব।
পরিসংখ্যান বলছে, দেশের উত্তরাঞ্চলে ১১ জানুয়ারি অবধি ৬৩ জন মানুষ আগুনে পুড়ে যাওয়ার কারণে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৭ জন মারা গেছে। শীতজনিত রোগে ভুগে কিন্তু তাদের মৃত্যু হয়নি। হয়েছে আগুন পোহাতে গিয়ে অসতর্কতার কারণে আগুন পুড়ে।(সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১১ জানুয়ারি)
এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের তথ্যমতে, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় এবার শীতে গত দুই সপ্তাহ ধরে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণ। তাদের হিসেবে গড়ে প্রতিদিন ৩০-৩৫ জনের মতো পোড়া রোগী ভর্তি হচ্ছে। যদিও রোগীর চাপের কারণে ২০% এর কম পুড়ে যাওয়া রোগীকে এখানে ভর্তি করা হচ্ছে না। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যমতে দেখা গেছে যে এসব রোগীরা কেউ আগুন পোহাতে গিয়ে, কেউবা গরম পানি ডেকচিতে করে নিতে গিয়ে, কেউবা ফুটন্ত ডাল বা তরকারির হাড়ির মধ্যে পড়ে গিয়ে। গিজারের গরম পানি এমনকি চা-কফির জন্য ফুটানো গরম পানি থেকে মানুষ দগ্ধ হয়েছে। (সূত্র : প্রথম আলো, ১১ জানুয়ারি)
শীত থেকে বাঁচার জন্য একটু উষ্ণতার খোঁজে মানুষ যখন আগুনের কাছে গিয়ে বসছে তখন বা রান্নাবান্নার সময় এ দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। ফলে শারীরিক বিকলাঙ্গতা থেকে শুরু করে জীবনহানিও হচ্ছে। তার উপর অনাকাঙ্খিত এমন ঘটনায় আর্থিক ও মানসিক চাপের ধকল সইতে হচ্ছে পুরো পরিবারকে। অথচ একটু সতর্ক হলেই কিন্তু এমন দুর্ঘটনার হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
অন্যদিকে, আগুনে পোড়া রোগীর ক্ষেত্রেও কিন্তু সঠিক প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া জরুরি। আমরা অনেক সময় পুড়ে যাওয়া জায়গায় ডিমের কুসুম, পেস্ট, লতাপাতার রস তাৎক্ষণিকভাবে লাগিয়ে থাকি। অনেকে আবার ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানিও ঢালেন। এর কোনটারই দরকার নেই। স্বাভাবিক তাপমাত্রার প্রচুর পানি পোড়া জায়গায় ঢাললেই হবে। আর বেশি পরিমাণে পুড়ে গেলে পানি ঢালা শেষে দেরি না করে তাড়াতাড়ি নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
শীতের তীব্রতা আর আগুনের সখ্য ভিন্নধর্মী হলেও প্রকারান্তরে দুটোই কিন্তু সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। শীতজনিত নানাবিধ রোগ থেকে বাঁচার জন্য যেমন অবশ্যই গরম কাপড় চোপড় পরতে হবে তেমনিভাবে এ সময়ে আগুনজনিত দুর্ঘটনা থেকেও সাবধান থাকতে হবে। কারণ একটু অসাবধানতায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, সাবধানের মার নেই।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ