ওমর ফারুক :
আজ বিশ্ব ভালবাসা দিবস। প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্বের প্রতিটি দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ভালবাসা দিবস পালিত হয়। ভালবাসা দিবস উপলক্ষে দেশের প্রতিটি এলাকায় নেয়া হয় ব্যাপক প্রস্তুতি। বিশেষ করে তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী ও প্রেমিক যুগলরা দিবসটি পালনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। তারা এই দিনের অপেক্ষায় উন্মত্ম হয়ে চেয়ে থাকে কবে আসবে ভালবাসা দিবসের সেই ১৪ ফেব্রুয়ারী।
কিন্ত ভালবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে যা করা হয় তা সত্যি বাড়াবাড়ি। ভালবাসা দিবসের সঠিক ঘটনা না জেনেই এই বাড়াবাড়ি করা হয়। প্রকৃত ঘটনাটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আর এখন তা হাসি-আনন্দের মধ্যে দিয়ে কাটানো হয়।
ভালাবাসা দিবসের বিভিন্ন কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি উল্লেখ করা হলো। জানা যায়, রোমের দ্বিতীয় সম্রাট ক্লডিয়াস এর আমলে ধর্মযাযক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ছিলেন শিশু প্রেমিক ও খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচারক। আর রোম সম্রাট ছিলেন দেব-দেবীর পূজায় বিশ্বাসী। সম্রাটের পক্ষ থেকে তাকে দেব-দেবীর পূজা করতে বলা হয়। কিন্ত তিনি তা অস্বীকার করায় তাকে কারাবন্দী করা হয়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কারাবন্দী হওয়ার পর অনেক যুবক-যুবতী তাকে দেখতে আসতো ও ফুল উপহার দিত। তারা বিভিন্ন উৎসাহমূলক কথা বলে তাকে উদ্দীপ্ত রাখতো। এক কারারক্ষীর অন্ধ মেয়েও তাকে দেখতে যেতো। প্রাণখুলে কথা বলতো। এক সময় ওই অন্ধ মেয়ে ভ্যালেন্টাইনের প্রেমে পড়ে যায়। ভ্যালেন্টাইনের চিকিৎসায় মেয়েটি চোখ ফিরে পায়। এ কথা সম্রাট কানে গেলে সম্রাট ২৬৯ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারী তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এভাবে বিভিন্ন কথা প্রচলিত রয়েছে। আর সেই একটি দুঃখের দিনকে সমাজের যুবক-যুবতীরা যা করে তা প্রকৃত ঘটনার পরিপন্থী।
ভালবাসার শেষ নেই। ভালবাসা পবিত্র জিনিস। ভালবাসা না থাকলে পৃথিবীও হয়তো সঠিক নিয়মে চলতো না। ভালবাসার জন্যই পৃথিবী আজ এত সুন্দর। তবে পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর ন্যায় বাংলাদেশে ভালবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে যা করা হয় তা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি। এটা মেনে নেওয়ার মত নয়। এ ধরণের কর্মকান্ড কোন সভ্য মানুষের দ্বারা হতে পারেনা। ভালবাসা দিবস মানে প্রেমিক-প্রেমিকা একসাথে ঘুরে বেড়ানো, পার্কে বসে নোংরামি করার নাম নয়। প্রেমিক-প্রেমিকার ভালবাসা ছাড়াও ভালবাসা যায়। ভালবাসা নিজের গর্ভধারিণী মা, জন্মদাতা পিতা ও ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীর মানুষের সাথেও করা যায়। এই ভালবাসাতে অন্তনিহিত সুখ রয়েছে।
কিন্তু বর্তমান সময়ে ভালবাসা দিবস উপলক্ষে আমাদের সমাজে তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী ও প্রেমিক যুগলরা যা করে সেটা কখনই মেনে নেওয়ার মত নয়। এটা ভালবাসা দিবসের নামে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করা হয়। এই বাড়াবাড়ি অনেক সময় তরুণ-তরুণি ও যুবক-যুবতীর জীবনের দেখা স্বপ্নগুলো নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। যা পরের দিন পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে। ভালবাসার নামে নোংরামি বাদ দিয়ে সত্যিকারের ভালবাসায় দীক্ষিত হওয়া দরকার।
অনেক সময় দেখা যায়, গর্ভধারিণী মা বাজার থেকে ছেলেকে কম দামের ছোট একটি জিনিস আনতে বললে মনেই থাকেনা। কিন্তু প্রেমিকার জন্য ধার করে হলেও ফুল অথবা অন্য জিনিসপত্র ঠিকই কিনে দেওয়া হয়। এটার নাম ভালবাসা নয়। ইসলামও এ ধরণের ভালবাসাকে সমর্থন করেনা। তাই সমাজের সকলের উচিত নিজ নিজ পরিবারের মা, বাবা, ভাই-বোনসহ সকলকে ভালবাসা। যে ভালবাসার মধ্য দিয়ে সকলের মাঝে সুখ ও শান্তি বিরাজ করে। তাই সকলের উচিত ভালবাসার নামে নোংরামি না করে সমাজ ও দেশের প্রতি ভালবাসা দেখিয়ে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
লেখক : ছাত্র ও সাংবাদিক