1. [email protected] : Abir k24 : Abir k24
  2. [email protected] : bulbul ob : bulbul ob
  3. [email protected] : Ea Shihab : Ea Shihab
  4. [email protected] : khobor : khobor 24
  5. [email protected] : অনলাইন ভার্সন : অনলাইন ভার্সন
  6. [email protected] : omor faruk : omor faruk
  7. [email protected] : R khan : R khan
আগে চাই কাজ, তারপর ন্যায্য মজুরি - খবর ২৪ ঘণ্টা
শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২২ পূর্বাহ্ন

আগে চাই কাজ, তারপর ন্যায্য মজুরি

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৮

প্রভাষ আমিনঃ তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৭৮ ভাগই আসে তৈরি পোশাক থেকে। বিশ্বের এত এত দেশ থাকতে বাংলাদেশে কেন গার্মেন্টস শিল্পের এমন বিপুল বিকাশ? এই প্রশ্নের সবচেয়ে সহজ উত্তর- সস্তা শ্রম।

বাংলাদেশে মানুষ বেশি, তাই শ্রমের মূল্য কম। আর সে কারণেই বিদেশীরা তাদের কাপড়টা বাংলাদেশ থেকে সেলাই করে নেন। শুরুতে সেলাই করতে পেরেই আমরা সন্তুষ্ট ছিলাম। বিদেশীরাও সস্তায় কাপড় পেয়েই সন্তুষ্ট ছিল। কে সেলাই করছে, তার জীবন মান কেমন, সে কোথায় কাজ করে, তার কাজের জায়গাটা নিরাপদ কিনা, তার জীবন নিরাপদ কিনা, কাজ শেষে ফিরে সে কোথায় থাকে, কী খায়?

‘কর্মসংস্থান একজন মানুষের প্রাথমিক চাহিদার একটি। কাজ করে সে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান জোগাড় করবে। আগে চাই চাকরি, তারপর ন্যায্য মজুরি। ২৬ লাখ কর্মক্ষম মানুষকে বসিয়ে রেখে, দিনের পর দিন শ্রমিকদের ন্যায়্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করে কোনো দেশে টেকসই উন্নয়ন হতে পারে না।’

এসব প্রশ্ন আমাদের মাথায় আসেনি, বিদেশী ক্রেতাদের মাথায়ও আসেনি। কিন্তু পরপর কয়েকটি দুর্ঘটনায় নড়ে চড়ে বসেছেন সবাই। তার কাপড়ে যখন মিশে যাচ্ছে আমাদের গরীব শ্রমিকের রক্ত আর ঘাম, তখন তাদের বিবেকে লাগছে। বিশেষ করে রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর অ্যাকর্ড আর অ্যালায়েন্স গার্মেন্টস শিল্পে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে কঠোর নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে। তাতে লাভ হয়েছে অনেক।

বাংলাদেশের অধিকাংশ গার্মেন্টস শিল্প এখন নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে পেরেছে। যদিও এখনও এর বাইরে রয়ে গেছে হাজারের ওপর প্রতিষ্ঠান। নিশ্চয়ই আমরা একদিন সম্পূর্ণ নিরাপদ গার্মেন্টস খাত গড়ে তুলতে পারবো।

নিরাপত্তাই সবার আগে। কিন্তু নিরাপত্তার পাশাপাশি গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করাটাও জরুরি। আগেই বলেছি, বাংলাদেশে মানুষ বেশি, তাই শ্রম সস্তা। মানলাম সস্তা, কিন্তু কতটা সস্তা? পৃথিবীর সবচেয়ে সস্তা। সবচেয়ে সস্তা বলেও বোধহয় পুরোটা বোঝানো গেল না।

বাংলাদেশে একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি মাসে ৫৩০০ টাকা, মানে ৬৬ ডলার। উন্নত বিশ্বের অনেক ক্রেতার এক বিকেলের চায়ের বিল এরচেয়ে অনেক বেশি। ক্রেতাদের কথাই বা বলি কেন। বাংলাদেশের অনেক গার্মেন্টস মালিকও ওয়েস্টিনে বসে আড্ডা মারতে মারতে এর কয়েকগুণ টাকা উড়িয়ে দেন। অথচ গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর দাবি উঠলে তাদের গাইগুই শুরু হয়ে যায়।

বাংলাদেশে এক প্রজন্মে বড় লোক হওয়া অধিকাংশই গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। লাভ ভালো হলে শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে সমস্যা কোথায়? না হয় গাড়ির মডেলটা বছর বছর বদলানো যাবে না। ২০১৩ সালে সর্বশেষ গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। আবার মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত করার দাবি জানিয়েছে। আমি জানি এটা আকাশ কুসুম কল্পনা।

এক লাফে শ্রমিকদের বেতন তিন থেকে চার গুণ কখনোই বাড়বে না। তারাও হয়তো বন্দুক পাবার আশায় কামান চেয়েছে। তবে ধরুন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের সর্বোচ্চ দাবিই সরকার মেনে নিল। তাতে কী দাঁড়ায়? একজন শ্রমিক পুরো মাস মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কত পাবে? ২০ হাজার টাকা, মানে ২৫০ ডলার! হে বিশ্ব বিবেক, আপনারা দেখুন, আপনারা যে পোশাক পড়ছেন, সেটি যাারা বানাচ্ছে, তারা মাসে এখন পাচ্ছে ৬৬ ডলার, তারা চাচ্ছে মাত্র ২৫০ ডলার। তাদের চাওয়ারও সাহস নেই।

কম হোক আর বেশি হোক, তবুও তো গার্মেন্টস শ্রমিকরা মাসে ৬৬ ডলার পাচ্ছে। গার্মেন্টস খাতে অন্তত ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী। এই গার্মেন্টস খাত বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বাধীনতায় বিশাল অবদান রাখছে।

সত্যিকারের ক্ষমতায়ন মানে অথনৈতিক সক্ষমতা। একজন নারী যখন নিজে আয় করছে, তখন আর তার কারো ওপর নির্ভর করার দরকার নেই। এ কারণেই হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নারীর কর্মসংস্থানের ঘোর বিরোধী। নিয়ন্ত্রণটা আর তাদের হাতে থাকছে না।

শুধু গার্মেন্টস খাত নয়, বাংলাদেশের শ্রমিক সস্তা বলে, বিশ্ব শ্রম বাজারেও বাংলাদেশের মানুষের বিপুল চাহিদা। বাংলাদেশের এক কোটি মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করছে। এক কোটি! বিশ্বের অনেক দেশের জনসংখ্যাই এরচেয়ে অনেক কম।

গার্মেন্টস খাতে তবু ৪০ লাখ মানুষের কাজের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এখনও বাংলাদেশে বেকার যুবক-যুব মাহিলার সংখ্যা ২৬ লাখ! এরমধ্যে প্রায় অর্ধেক শিক্ষিত বেকার। একবার ভাবুন ২৬ লাখ মানুষ পূর্ণ প্রাণশক্তি নিয়ে কাজের বাজারে ছুটিছে। কী অসাধারণ সম্ভাবনা। কিন্তু সেই সম্ভাবনা কাজে লাগানোর সামর্থ্য আমাদের নেই।

বেকার যুবকরা কখনো কোটা সংস্কারের দাবিতে, চাকরির বয়স বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করছে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব সবাইকে যার যার মেধা এবং সামর্থ্য অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাদের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা।

কর্মসংস্থান একজন মানুষের প্রাথমিক চাহিদার একটি। কাজ করে সে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান জোগাড় করবে। আগে চাই চাকরি, তারপর ন্যায্য মজুরি। ২৬ লাখ কর্মক্ষম মানুষকে বসিয়ে রেখে, দিনের পর দিন শ্রমিকদের ন্যায়্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করে কোনো দেশে টেকসই উন্নয়ন হতে পারে না।

খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ 

পোস্টটি শেয়ার করুন

এ ধরনের আরো খবর

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।

Developed By SISA HOST