জাহাঙ্গীর ইসলাম,বগুড়া প্রতিনিধি: গোটা বিশ্বজুড়ে ভয়ানক রূপ ধারণ করা করোনা ভাইরাস(কোভিট-১৯) সম্প্রতি বাংলাদেশেও প্রাদুর্ভাব ছড়াচ্ছে। ইতিমধ্যে এ ভাইরাসে আক্রান্ত কয়েকজন রোগী শনাক্তের সংবাদের পর বগুড়া শহরের ফার্মেসী, সার্জিক্যাল ও প্রসাধনী দোকান থেকে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার উধাও হয়ে গেছে।
মরণঘাতি করোনা ভাইরাস আক্রান্তের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে গত কয়েকদিন ধরে সাধারণ মানুষের মধ্যে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার কেনার হিড়িক পড়েছে। সেই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দোকানে মাস্ক থাকলেও ৫ থেকে ৬ গুণ বেশী দামে মাস্ক বিক্রি করছে। এ অবস্থায় প্রতি মুহূর্তে মাস্কের দাম ক্রমশঃ বেড়েই চলেছে। তবে এ সংকট শুধু জেলা শহরেই নয়, এ প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন উপজেলা শহরগুলোতেও। এর প্রেক্ষিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও জনবহুল স্থানে করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ সহ প্রতিরোধমুলক জনসচেতনাবৃদ্ধির বিষয়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও লিফলেট বিতরণ করছে। সেইসাথে মাস্ক বিক্রয়ে বেশী মুল্য না নেয়া হয় সেজন্য ভ্রাম্যমান আদালতও পরিচালনা করে আসছে।
১৪ মার্চ শনিবার বগুড়া শহরের কয়েকটি ফার্মেসী, সার্জিক্যাল ও প্রসাধণী বিক্রির দোকান ঘুরে দেখা গেছে ফার্মেসী দোকানে মাস্ক কিনতে সাধারণ মানুষ ভিড় করছেন। কিন্তু দোকানে মাস্ক না থাকায় বিভিন্ন দোকানের দিকে ছুঁটছেন। তারপরেও মিলছে না মাস্ক। যার ফলে সাধারণ মানুষের দূর্ভোগের পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে গেছে।
তবে এসব মাস্ক কিনতে আসা ভূক্তভোগীদের অভিযোগ, অধিক মুনাফালোভী কিছু অসাধু ব্যবসায়ি মাস্ক মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। এসব ব্যবসায়ীদের কারণে ৫ থেকে ৬ গুণ দামে মাস্ক বিক্রি করছে। এ অবস্থায় প্রতি মুহূর্তে মাস্কের দাম বেড়েই চলেছে। আতঙ্কের কারণে বাধ্য হয়ে বেশি দামে মাস্ক কিনছেন সাধারণ মানুষ।
দোকানে মাস্ক কিনতে আসা বাদশা আলম নামের একজন ক্রেতা বলেন, ৩/৪দিন আগে আমি একটি মাস্ক ৩০ টাকা দিয়ে কিনেছি। অথচ আজকে একটি মাস্ক কিনতে হচ্ছে ৬০/৭০ টাকা দামে। তাও বেশ কয়েকটা দোকান ঘুরে তবেই মাস্ক পাওয়া গেছে। অথচ এক সপ্তাহ আগে এন মাস্ক-৯৫, পি মাস্ক-৯৫, এন মাস্ক-৯৯, এন মাস্ক-১০০, এয়ার পিউরিফিকেশন মাস্ক ও রেসপ্লো মাস্ক পাওয়া যেত। এখন বাজারে আর এসব মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে শুধু মাস্কের সংকটই নয়, সংকট দেখা দিয়েছে জীবাণুনাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজারেও। বাজার এই পণ্যটিও বাড়তি দামে বিক্রি করছে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। ফার্মেসী দোকানীরা বলছেন, দেশে করোনা আক্রান্তের খবর জানার পর মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ জীবাণুনাশক পণ্যের বিক্রি বেড়ে গেছে। বেশীর ভাগ দোকানে মাস্ক শেষ হয়ে গেছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার ফলে অনেকটা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি।
তবে বাজার ঘুরে খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, ঔষধ প্রশাসন হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মূল্য নির্ধারণ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলেও তা স্থানীয় অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ীরা মানছেন না। বগুড়ার পাইকারী ঔষধ বারে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করেও সফল হতে পারছেন না প্রশাসন। বর্তমানে বাজারে ৫ টাকার সাধারণ মাস্ক ৩০ টাকায়, ১০ টাকার সার্জিক্যাল মাস্ক ৫০ টাকায় ও ৫০ টাকার ফিল্টার মাস্ক ৮০ থেকে ১’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে অতিরিক্ত দাম দিয়েও চাহিদামত মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না। তবে শহরের ফার্মেসী ও সাজিক্যাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে, বাজারে মানসম্মত সব মাস্ক চীন থেকে আমদানি করা হয়। কিন্তু বর্তমানে চীন নিজেদেরই চাহিদা মেটাতে পারছে না। এই অবস্থায় মাস্ক আমদানি কমে যাওয়ায় বাজারে সংকট হয়ে দাড়িয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে ঢাকার পাইকারি বাজারে ১০০ পিস প্যাকেটের সার্জিক্যাল মাস্ক ১০০ টাকার স্থলে ১ হাজার ২শ’ থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকা ও ৫০ পিস প্যাকেটের একই মাস্ক ১০০ টাকার স্থলে ১ হ্জাার ২শ’ টাকায়, ১২ পিস প্যাকেটের দেশী কটন মাস্ক ৫৫ টাকার স্থলে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় এবং ১২ পিস প্যাকেটের ফিল্টার মাস্ক ৩০০ টাকার স্থলে ২ হাজার ৪ শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে দামের বিরূপ প্রভাব পড়ায় মাস্কের বাজার এখন ঊর্দ্ধগতি।
মাস্ক বিক্রয় নিয়ে কথা বলতে গেলে সবুজ মেডিকেল হল, সিটি মেডিক্যাল এর বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, তাদের দোকানে পূর্বে মজুদ করা মাস্ক প্রথম দু’দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। অর্ডার দিয়েও মাস্ক সাপ্লাই পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে প্রতিনিয়ত অসংখ্য ক্রেতা মাস্ক কিনতে আসায় আমরাও বিপাকে পড়ে গেছি। বেশীর ভাগ দোকানে মেডিকেটেড মাস্কের মজুদ শেষ হয়ে গেছে। সাধারণ কটন মাস্কের মজুদও শেষ হওয়ার পথে। তাছাড়া পাইকারী বাজারে বেশি দামে কেনায় বাড়তি দামে মাস্ক বিক্রি করতে হচ্ছে। করোনার কারণে মহাজনরা দাম ৪/৫ গুণ বৃদ্ধি করেছে। উচ্চ মূল্যের কারণে নতুন করে মাস্ক আনছি না। তারা বলেন স্থানীয় অসাধু কিছু ব্যবসায়ী দাম বৃদ্ধির কারসাজি করছেন। তবে সরকারের ঔষধ প্রশাসন সার্জিক্যাল মাস্কের দাম ঠিক করে দিলেও বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। অন্যদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতাবৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন সভা-সেমিনার, লিফলেট বিতরণ অব্যাহত রেখেছে। তবে করোনায় আতঙ্কিত না হয়ে নিজেকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ নিজেকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
খবর২৪ঘন্টা/নই