খবর ২৪ ঘণ্টা ডেস্ক: গত বছরের প্রথম পাঁচ মাসের তুলনায় এবছর প্রথম পাঁচ মাসে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বেশি হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএসএফ’র মহাপরিচালক রজনীকান্ত মিশ্রা। তবে কেন সীমান্ত হত্যাকাণ্ড ঘটছে, তাও খুঁজে বের করার অনুরোধ জানান তিনি। সীমান্ত হত্যা বন্ধের জন্য দুই দেশের সীমান্ত বাহিনীর যৌথ টহলের ব্যবস্থা করার আহ্বানও জানান তিনি।
শনিবার (১৫ জুন) সকালে বিজিবি সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। ১২ জুন থেকে ঢাকায় বিজিবি ও বিএসএফ’র মহাপরিচালক পর্যায়ে ৪৮তম সীমান্ত সম্মেলন শুরু হয়। আজ শনিবার (১৫ জুন) ছিল সম্মেলনে শেষে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
বিএসএফ মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ভারতীয় হাইকমিশনের প্রতিনিধিসহ ১০ সদস্যদের প্রতিনিধিদল সীমান্ত সম্মেলন ঢাকায় অংশগ্রহণ করেন। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ১৯ সদসস্যের প্রতিনিধি দল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
সীমান্ত হত্যার বিষয়ে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, ‘মানুষের জীবন রক্ষা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। সীমান্ত এলাকায় এই হত্যাকাণ্ড কারও কাম্য না। বিএসএফ প্রথমেই আগ্নেয়াস্ত্র যাতে ব্যবহারের না করে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে। কিন্তু কখনও কখনও অবস্থা এমন হয়, চোরাচালানকারিরা লাঠি, পাথর, ধারালো অস্ত্র নিয়ে সীমান্ত রক্ষাকারীদের ওপর সংঘবদ্ধ হামলা চালায়। তখনও সীমান্ত রক্ষাকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে না। আমরা সীমান্তে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধরি। কিন্তু সীমান্ত রক্ষাকারীদের ওপর হামলা হলে অনাকাঙ্ক্ষি এই ঘটনা ঘটে। প্রতিটি ঘটনায় পুলিশ তদন্ত করে।’
বিএসএফ প্রধান বলেন, ‘গত বছর সীমান্তে মাত্র সাতটি হত্যার ঘটনা ঘটেছিল। এরমধ্যে একটি বাংলাদেশের বাকি ছয়টি ভারতের। তবে এবছর প্রথম পাঁচ মাসে এর থেকে বেশি ঘটনা ঘটেছে।’
বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় বিভিন্ন উগ্রবাদীদের কার্যক্রম মোকাবিলায় দুই দেশ কীভাবে কাজ করে জানতে চাইলে বিএসএফ মহাপরিচালক রজনীকান্ত বলেন, ‘বেশ কয়েক মাস ধরে আমাদের মধ্যে খুব বেশি তথ্যের আদান-প্রদান হচ্ছে। আমরা কোনও তথ্য পেলে সঙ্গে সঙ্গে সেটি বিজিবিকে জানাই। বিজিবি কোনও তথ্য পেলে আমাদের জানায়। এ তথ্য অনুযায়ী সীমান্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনাও করা হয়।’
ভারতের বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)’ এর সদস্যরা আশ্রয় নিয়ে সংগঠিত হয়। এরপর বাংলাদেশে হামলা চালায়। এবিষয়ে বিএসএফ মহাপরিচালকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উগ্রবাদ উভয় রাষ্ট্রের জন্যই সমস্যা। সম্মেলনে এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।’
তথ্য আদান প্রদানের বিষয়ে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দুই বাহিনীর ভেতরে নিয়মিত তথ্য আদান-প্রদান হচ্ছে। তথ্যের ভিত্তিতে সীমান্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনাও হয়।’
ভারত থেকেও বাংলাদেশে ইয়াবা প্রবেশ করছে। এর উৎস কোথায় জানতে চাইলে বিএসএফ প্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারত কোনও দেশ এর জন্য দায়ী না। ইয়াবার জন্য তৃতীয় একটি দেশ দায়ী। ভারতেও এর আসক্ত রয়েছে।’
ফেলানী হত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসএফ প্রধান বলেন, ‘বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। আদালতে ট্রায়েল চলছে।’
প্রশ্ন উত্তর পর্ব শুরুর আগে লিখিত বক্তব্য দেন বিজিবি প্রধান। বিজিবি প্রধান বলেন, ‘দুই বাহিনীর মধ্যে যাতে পারস্পারিক ভ্রাতিত্ববোধ থাকে সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিএসএফ দিল্লি থেকে একটি মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা শুরু করে সেটি আমাদের ঢাকায় বিজিবি সদর দফতরে এসে শেষ হবে। বিজিবির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে এটা বিএসএফ করবে বলে জানিয়েছেন।’
বিচ্ছিন্নতাবাদী ও উগ্র সংগঠনের কার্যক্রম ও আস্তানা বন্ধে বিজিবি ও বিএসএফ একসঙ্গে কাজ করে যাবার বিষয়টিও সম্মেলনে আলোচনায় এসেছে।
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন