বিনোদন,ডেস্ক: ‘পার’ দেখেননি এমন সিনেমাপ্রেমী মিলবে না৷ অন্তত যাঁরা সিরিয়াস সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন তাঁদের কাছে গৌতম ঘোষ পরিচালিত পার চিরকালীন একটি ছবি৷ সেই সূত্রে বারবার আসবে নাসিরউদ্দিন শাহের কথা৷ সমকালীন কথাই ধরুন, ‘ A Wednesday’ দেখেননি এমন দর্শকও কম মিলবে৷ অথচ দুটি ছবির মধ্যে সময়ের ব্যবধান অন্তত তিন দশক৷ এর থেকেই বোঝা যায় সিরিয়াস ফিল্ম মানেই নাসির সাহেব৷
নাসিরউদ্দিন শাহ৷ যার কাছে অ্যাওয়ার্ড অভিনয়ের মাপকাঠি নয়৷ যাঁর কাছে অভিনয় এবং ব্যক্তিগত জীবন একই রকম৷ নাসিরুদ্দিনের মতো অভিনেতার অ্যাওয়ার্ডের দরকার পড়ে না৷ দরকার পড়ে ভালো স্ক্রিপ্ট৷ তাঁর মতো অভিনেতা জানেন শুধু খিদে৷ অভিনয়ের খিদে৷ ভাল চিত্রনাট্যের খিদে৷ এরকম অভিনেতাদের বসবাস এক অন্য জায়গায়৷ যেখানে নেপোটিজম নেই, বলিউডের আইটেম নম্বর নেই, সলমন খানের ছবির মতো ‘নো ব্রেন’ স্ক্রিপ্টও নেই৷ রয়েছে অভিনয়ের প্রতি নিখাদ ভালবাসা৷ নাসিরউদ্দিন মতো স্টেজ অ্যাক্টরদের জার্নি সাধারণত অন্যরকমভাবে শুরু হয়৷ নাটকের মঞ্চ এঁদের কাছে প্রথম প্রেমের মতো৷ আর রূপোলি পর্দায় অভিনয় করতে এলেও সেই প্রেমের ছোঁয়া বারে বারে পান দর্শকরা৷ জন্মদিনে শুভেচ্ছা৷
ছেলে হোক বা মেয়ে, পোর্টফোলিওর সব ছবিতে তিন শেড বেশি উজ্জ্বল স্কিনটোন থাকবেই৷ দেখতে সুন্দর না হলে হিরো হবে কী করে? নায়ক হওয়ার প্রথম প্রয়োজনীয়তাই হল হ্যান্ডসাম চেহারা৷ ফর্সা না হলেও টল-ডার্ক অ্যান্ড হ্যান্ডসাম তো হতেই হবে৷ এসব প্রয়োজনীয়তার কথা একবারের জন্যও নাড়া দেয়নি নাসিরের অভিনয় সত্ত্বাকে৷ ‘থিয়েটার অ্যাক্টরদের সুন্দর চেহারার প্রয়োজন হয় না’ এ কথা কম-বেশি নাসিরুদ্দিনকেও শুনতে হয়েছে৷ কিন্তু নাটকের মঞ্চে, চোখে গ্লিসারিন দেওয়ার সময় থাকে না৷ শেষের সাড়িতে বসা দর্শকদেরও যেন তাঁর অভিনয় নাড়া দেয়৷ কোনায় বসা দর্শকের রন্ধ্রে রন্ধ্রে গিয়ে পৌঁছায় অভিনেতার আওড়ানো প্রতিটা শব্দ৷ এগুলোর জন্য টল-ডার্ক অ্যান্ড হ্যান্ডসামের থেকেও দরকার নাসিরউদ্দিনের মতো অভিনয়ের দক্ষ কারিগর হওয়া৷
নাসিরুদ্দিন শাহ মতো শিল্পীর কদর বলিউড থেকে অসংখ্য দর্শক আজও বোঝে৷ তাই তো আজও সিনেমা জগতের নিখুঁত অভিনেতাদের তালিকায় তাঁর নাম উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করছে৷ আর পাঁচজন নায়কের মতো নাচ কিংবা অ্যাকশনে তিনি তেমন পারদর্শী নাই হতে পারেন কিন্তু তাঁর আসল হাতিয়ার হল অভিনয়৷ বলিউড দুনিয়ায় পা রাখার স্বপ্ন তাঁর চোখে ছিল ঠিকই, তবে তার থেকেও দু-চোখ জুড়ে স্বপ্ন ছিল অভিনেতা হওয়ার৷ নাটকের মঞ্চ হোক বা সিনেমার পর্দা৷ কোনওদিন এই দুটো জায়গাকে আলাদা করে ভাগ করেননি তিনি৷ তাঁর মতো অভিনেতাকে থিয়েটার এবং বলিউড পেয়ে ধন্য৷ এ কথা সকলেই স্বীকার করে৷
উত্তরপ্রদেশে বারাবাঙ্কি শহরে জন্ম নাসিরউদ্দিন শাহের৷ পড়াশোনার জন্য দিল্লি চলে এসেছিলেন তিনি৷ সেখান থেকেই শুরু হয় অভিনয়ের সফর৷ ‘ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা’ অ্যাটেন্ড করেছিলেন৷ সেখান থেকেই অভিনয়ের পথচলা শুরু৷ সময় পেরিয়েছে৷ বলিউড তাঁকে চিনেছে প্রতিটি ছবিতে নতুন করে৷ তবুও এসবের মধ্যে নাসির সাহেব সিরিয়াস ভীষণই সিরিয়াস৷ কে বলে প্রেম নাকি সিরিয়াস জীবনের জন্য নয়৷ তাহলে কর্মমুখর নাসিরউদ্দিনের জীবন কী ?
খবর২৪ঘণ্টা.কম/জেএন