রাশেদুল ইসলাম,নাটোর প্রতিনিধি : বিয়ের ১৪ বছর পর আয়োজন করা বৌভাতে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে খেয়েছেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। শুধু খেয়েই তৃপ্তি পাননি তারা। ওই বৌভাতে আসা অতিথিদেরই দেওয়া হয়েছে উপহার।
সামাজিক বন্ধনের অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে বৃহস্পতিবার এ রকমই এক ব্যতিক্রমী আয়োজন ছিল নাটোরের বাগাতিপাড়ায়। বরের সঙ্গে ১৪ বছর আগে যারা বরযাত্রী ছিলেন তাদের অনেকেই এসেছিলেন ওই অনুষ্ঠানে। তবে তারা এবার ফিরেছেন নতুন পোষাক নিয়ে।
কনের পরিবারের পক্ষ থেকে বরযাত্রীরা উপহার পেলেন একই রকমের নতুন পোশাক। পুরুষ অতিথিদের দেওয়া হয়েছে পায়জামা -পাঞ্জাবি আর নারী অতিথিীদের দেওয়া হয়েছে বোরখা ও ওড়না। এই বৌভাতে শরীক হয়েছিলেন ৩৯ জন অতিথি। বৌভাতের আয়োজন যথারীতি আপ্যায়ন ছিল বেশ আনন্দঘন। আপ্যায়ন শেষে বিদায়ও নিলেন সকলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে।
এই বৌভাতের আয়োজক ছিলেন বাগাতিপাড়া উপজেলার দয়ারামপুর কাজীপাড়ার মৃত আজিজুর রহমানের ছেলে এবং কাজিপাড়া আহমেদিয়া মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক কাজী আমানুর রহমান।
তবে বৌভাতের আয়োজন করা হয় তার শশুরালয়ের বাড়ি একই উপজেলার চকতকিনগর গ্রামে। ২০০৪ সালের ৫ নভেম্বর কাজী আমানুর রহমানের সঙ্গে চকতকিনগর গ্রামের জাহেদ আলীর মেয়ে তাছলিমা খাতুনের বিয়ে হয়। রমজান মাসে বিয়ে হওয়ার কারণে সে সময় বৌভাতের আয়োজন করা হয়নি। এ নিয়ে মনোকষ্টে ছিলেন স্বামী আমানুর ও স্ত্রী তাছলিমা। তারা স্থির করেছিলেন বৌভাতের আয়োজন একদিন হবেই। কিন্তু তা হচ্ছিল না।
একে একে তিনটি সন্তানের বাবা-মা হন এই দম্পতি। বড় মেয়ে আমিনা (১০) ওই একই মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। ছোট দুই ছেলে আলিফ (৫) ও ২০ দিনের নবজাতক আলভী।অবশেষে সেই ইচ্ছার বাস্তবায়ন হয় ১৪ বছর পর গত বৃহস্পতিবার। বিয়ের সময়ে কাজী আমানুরের সঙ্গে যারা বরযাত্রী হয়েছিলেন তারাই এসেছিলেন বৌভাতে।
এছাড়া তার বাবার ও শশুরবাড়ির পরিবারের নিকটজন সহ মোট ৩৯ জন অতিথি বৌভাতে শরীক হন। আমন্ত্রিত নারী অতিথির মধ্যে স্ত্রী তাছলিমা খাতুন সহ ৪ নারী অতিথিকে নতুন পোশাক হিসেবে একই রংয়ের বোরখা ও ওড়না উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। এছাড়া বরযাত্রি মাদ্রারসা শিক্ষক-কর্মচারী সহ২৪ জন অতিথিকে উপহার হিসেবে একই রংয়ের পাজামা-পাঞ্জাবি দেওয়া হয়। সঙ্গে সাদা টুপি। এতে উচ্ছ্বসিত হন বরযাত্রীরা।
মাদ্রাসা সুপার অধ্যক্ষ ইব্রাহিম হোসেন সহ অনুষ্ঠানের অতিথিরা বলেন, এমন ঘটনা এর আগে কখনও দেখেননি। বিয়ের সময় দেওয়া ওয়াদা পুরন করে চমক দেখিয়েন আমানুর। তারা এই দম্পত্তির জন্য শুকরিয়া আদায় সহ দোয়া করেন।
কাজী আমানুর রহমান বলেন,তিনি মাদ্রাসায় চাকরীতে যোগদানের পর কয়েকজন শিক্ষকের বিয়ের সময় বলেছিলেন,তিনি যখন বিয়ে করবেন তখন বরযাত্রিদের উপহার দিবেন। কিন্তু তখন তিনি ১২শ টাকা বেতন পেতেন। এরই মাঝে তার বিয়ে হয়। কিন্তু
আর্থিক দৈন্যতার কারনে তিনি তার ওয়াদা পুরন করতে পারেননি। এছাড়া বিয়ের সময় রমজান মাস হওয়ার বৌভাতেরও আয়োজন করতে পারেননি। তাই স্ত্রীর পরামর্শে দুজনার গচ্ছিত অর্থ দিয়ে দীর্ঘদিন পরে হলেও ওয়াদা পুরন সহ বৌভাতের আয়োজন করতে পেরে নিজেকে হালকা মনে হচ্ছে। আর্থিক দৈন্যতার কারনে বিয়ের সময় অনুষ্ঠান করা যায়নি। তাই ভেতরে ইচ্ছে থেকেই যায়। দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর পর নিজের বিয়ের অনুষ্ঠানকে ঘিরে অনেক বড় আশা ছিল।
অবশেষে সেই ইচ্ছা পূরণ করতে পেরে ভালো লাগছে।
এদিকে বিয়ের ১৪ বছর পর বৌভাতের আয়োজন করা সহ অতিথিদেরই উপহার দেওয়ার ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্রের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি এখন মুখে মুখে ফিরছে।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ