নাটোর প্রতিনিধিঃ নাটোরের বড়াইগ্রামের দক্ষিণ মাঝগাঁও গ্রামের গৃহবধূ নার্গিস বেগম (৪৫) ধারালো বাটাল (খেজুর গাছের রস আহরণের জন্য ব্যবহার করা হয়) এর কোপে খুন হয়েছেন। ওই গৃহবধুর স্বামী রেজাউল করিম (৫০) বৃহস্পতিবার নাটোর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সুলতান মাহমুদের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা জানিয়েছেন বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বড়াইগ্রাম থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সৈকত হাসান। খেজুর গাছের রস আহরণের জন্য ব্যবহার করা ধারালো একটি বাটাল দিলে স্ত্রী নার্গিস বেগমের তলপেটে আঘাত করা হলে তার এই মৃত্যু হয় বলে স্বীকার করেছেন ঘাতক স্বামী। তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও জানায়, একটি পরকীয়া সম্পর্কের জের ধরে ও পাশাপাশি সংসারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতের অমিল হওয়ায় স্ত্রীর সাথে ঝগড়া-বিবাদের এক পর্যায়ে রাগান্বিত হয়ে তিনি এই কাজটি করেন। গত ২০ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে দক্ষিণ মাঝগাঁও গ্রামের নিজ বাড়িতেই স্বামী রেজাউল করিম স্ত্রী তলপেটে ধারালো বাটাল দিয়ে আঘাত করেন। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসাপতালে নেয়া হলে সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় ২২ এপ্রিল গৃহবধূ নার্গিসের মৃত্যু হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক আব্দুল আলীম জানায়, ঘটনার পরের দিন সকালে স্বামী রেজাউল করিম ও তার ভাইয়েরা তাকে ও উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে রাত সাড়ে ১০টার দিকে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে ওই গৃহবধূকে ছুরিকাঘাত করে নগদ এক লক্ষ দশ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে পরিবারের লোকজন স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসককে ডেকে আনলে চিকিৎসক ক্ষত স্থানে সেলাই দেয়। পরের দিন অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে তার মৃত্যু ঘটে। এ ব্যাপারে নিহতের বড় ছেলে নাহিদ হাসান রিপন বাদী হয়ে থানায় অজ্ঞাত ৫/৬ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু থানা পুলিশ মামলা তদন্ত চালিয়ে খুঁজে পান প্রকৃত রহস্য। পরে মূল ঘাতক স্বামী রেজাউল করিমকে আটক করে আদালতে হাজির করলে হত্যার দায় স্বীকার করেন স্বামী।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সৈকত হাসান জানান, পরকীয়া প্রেমের সন্দেহে স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে কলহ চলছিলো। পরবর্তীতে নতুন বাড়ি নির্মাণ করা নিয়ে তৈরী হয়ে দু’জনের মধ্যে মতের অমিল। ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর নতুন বাড়ি নির্মাণ কাজের শ্রমিকদের রাতের খাবার দিতে বললে এতে রাজী হননি স্ত্রী নার্গিস বেগম। এসময় উপস্থিত শ্রমিকদের সামনেই স্ত্রীকে গালি-গালাস ও চড়-থাপ্পড় মারেন স্বামী রেজাউল করিম। পরে স্বামী ও শ্রমিকরা বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলে অপমান ও লজ্জায় স্ত্রী নার্গিস দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়েন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্বামী ফিরে এসে দরজা খুলতে বললে স্ত্রী দরজা খুলেননি। পরে দরজা ভেঙ্গে দেখতে পায় স্ত্রী ঘুমের ভান করে শুয়ে আছে অথচ দরজা খুলেননি। এক পর্যায়ে রাগান্বিত হয়ে স্বামী ঘরের মধ্যে মাচার নীচে রাখা ধারালো বাটাল দিয়ে শুয়ে থাকা স্ত্রীর তলপেটে আঘাত করে। এতে স্ত্রী রক্তাক্ত আহত হলে স্থানীয় এক গ্রাম্য চিকিৎসককে ডেকে এনে ক্ষতস্থানে সেলাই দেয়া হয়। পরের দিন সকালে অবস্থার অবনতি ঘটলে ওই গ্রাম্য চিকিৎসকের সহায়তায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সেখানে তার মৃত্যু হয়।
নিহত নার্গিস বেগম ও রেজাউল করিম দম্পত্তি তিন সন্তান রয়েছে। ঘটনার দিন বড় ছেলে ঢাকায় ও ছোট ছেলে রাজশাহীতে এবং ছোট মেয়ে বাড়ির পাশে ফুপুর বাড়িতে ছিলেন। এছাড়াও বাড়িতে আর কেউ ছিলেন না।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ