খবর২৪ঘণ্টা.কম, ডেস্ক: প্রশ্ন ফাঁসকারীদের ফায়ারিং স্কোয়াডে দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ। প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ধারাবাহিক ব্যর্থতার মধ্যে এ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান রাষ্ট্রপতি।
মঙ্গলবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তৃতায় তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে শিক্ষক-ছাত্র-অভিভাবকদের সংশ্লিষ্টতা নিয়েও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
বক্তৃতার এক পর্যায়ে লিখিত বক্তব্যের বাইরে গিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, সব বাবা-মা’ই চায়, তার সন্তান ফার্স্ট-সেকেন্ড হোক, গোল্ডেন এ প্লাস পাক। কিন্তু যখন শোনা যায় যে বাবা-মা’ই ছেলেকে নকল সরবরাহ করছে- তা কী করে সম্ভব।
এর চেয়ে লজ্জাজনক-জঘন্য কাজ আর কি হতে পারে! এই বাপ আর মা তার ছেলে-মেয়েকে কী শিখাইতাছে? তারে কী বানাইতে চাইতাছে? ভবিষ্যতে তারে দিয়া কী হবে? দেশের কী হবে?”
টিউশনি আর কোচিং ব্যবসার পসারের জন্য শিক্ষকদের নৈতিকতা বিসর্জন নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, যেসব শিক্ষক ছেলে মেয়েদের শিখাইবো, তারা নিজেরাই… তার মার্কেট ভালা করার জন্য, প্রাইভেট পড়াইবার মার্কেট ভালা করার জন্য সে যদি প্রশ্ন কইয়া দেয়- ‘এই প্রশ্ন আইতাছে লেখ’… মার্কেট ভালো হবে, বেশি বেশি (শিক্ষার্থী) পড়তে আইব, এসব চিন্তা থেকে তারা এইগুলি করতেছে।
তারা দেশটাকে কী দিচ্ছে? এখন কথা কইলেতো খারাপ কথাৃ দেশ ও জাতির স্বার্থে দে শুড গো টু ফায়ারিং স্কোয়াড। ফায়ারিং স্কোয়াডে দেয়া উচিত এদের।
উনিশশ পঞ্চাশের দশকে মেট্রিক পাস করা আবদুল হামিদ সেই সময়ের সঙ্গে আজকের পরিস্থিতির তুলনা করে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহের অনুষ্ঠানে বলেন, আমাদের তো বাপ-মা খবরই নিছে না। স্কুলে গেছে নি? অহনতো লাইগা থাকে। লাইগা থাকে ভালা কথা, অসুবিধা নাই। ভালা জিনিস শিখাক। ফার্স্ট-সেকেন্ড হইলে কী হয়? আমিতো খুব খারাপ ছাত্র আছিলাম। আমার মত খারাপ ছাত্র যদি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হইতে পারে, তাহলে অত ভালা ছাত্র হওয়ার দরকারটা কী? তার এই বক্তব্যের সময় পুরো মিলনায়তন তুমুল হাততালিতে ফেটে পড়ে।
এমসিকিউ প্রশ্ন পদ্ধতি বদলানোর পক্ষে মত দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমার মনে হয় এখন যে টিক মার্ক দিয়া দেয়। ইট শুড বি স্টপড। এমন সিস্টম করা দরকার প্রশ্ন আগেই চলে আসবে। এই প্রশ্ন আইব, এখন তুমি লেখ। মিনিস্ট্রি থেকে বইলা দেন- এই প্রশ্ন আইব। সব কোর্স-সিলেবাস মিলাইয়া ২০-২৫টা প্রশ্ন করেন। সব প্রশ্ন ওয়েবসাইটে দিয়া দেন। ২৫টা প্রশ্ন থাকলে পুরো সিলেবাস কাভার করবে। কিন্তু কুনডা আইবো হেইডা কইতে পারত নাৃ এই সিস্টেম যদি হয়, তাহলে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে দুশ্চিন্তা করা লাগবে না।
এর আগে লিখিত বক্তৃতায় তিনি বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে এবং যে কোনো অন্যায় ও নীতি বিবর্জিত কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকে, সে লক্ষ্যে শিক্ষক অভিভাবকদের উদ্যোগী হতে হবে।
মনে রাখবেন, একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষার মূল ভিত্তি রচিত হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তাই প্রতিটি শিক্ষার্থী যাতে শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করতে পারে, তা নিশ্চিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আর তা করতে পারলেই পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা শেষ হয়ে আসবে।
অভিভাবকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, শিশুরা জাতির ভবিষ্যত, তাই অভিভাবকদের প্রতি আমার অনুরোধ, জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বার্থে শিশুদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলুন। পড়াশোনা ও বইয়ের ভারে জর্জরিত না করে তাদের খেলাধুলা ও স্স্থু বিনোদনের পর্যাপ্ত সময় দিন। আমরা যে আনন্দঘন শৈশব পেয়েছি, তাদেরকেও তার স্বাদ দিতে হবে।
তিনি ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে ‘বন্ধুসুলভ’ আচরণ করতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারাই আপনাদের নীতি ও আদর্শ দিয়ে দেশের প্রতিটি শিশুকে দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। শিশুদের মাঝে নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে পারেন। সমাজের কোন কাজটি ভালো এবং কোন কাজটি মন্দ, কোন কাজটি করলে দেশ ও জাতির উন্নয়ন ঘটবে- সে সম্পর্কে ধারণা প্রদানের পাশাপাশি ভাল কাজের চর্চা করাতে পারেন। তাদের মাঝে দেশাত্ববোধ সৃষ্টি করে দেশপ্রেমী হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। এ জন্য আপনাদের উদ্যোগী ও নিবেদিত হতে হবে।
জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি শিক্ষা পদকের জন্য মনোনীত শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান ও আন্তঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পদক বিতরণ করেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়েরে সচিব মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. মোতাহার হোসেন বক্তব্য দেন।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ