নিজস্ব প্রতিবেদক : গত ৭ই মার্চ রাতে রাজশাহী মহানগরীর দড়িখড়বোনা এলাকায় বিএনপি’র দুই পক্ষের নেতাদের পারস্পরিক সংঘর্ষের সময় ছুরিকাঘাতে আহত রিক্সাচালক গোলাম হোসেন ওরফে রকি (৪৮) মারা গেছেন। মঙ্গলবার (১১মার্চ) রাত্রী আনুমানিক ৮ঘটিকায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। হাসপাতালের মুখপাত্র শংকর কে বিশ্বাস এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। শংকর কে বিশ্বাস জানান, “সংঘর্ষের সময় রিকশাচালক গোলাম হোসেনের বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল। এ ছাড়া তাঁর মাথায় আঘাত ছিল। ঘটনার পর থেকেই তাঁর জ্ঞান ফেরেনি। সন্ধ্যার পর তিনি মারা গেছেন।”
উল্লেখ্য গত ৬ মার্চ নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় একটি বহুতল ভবনে বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ বাবু ওরফে ব্যাটারি বাবুর উপস্থিতি টের পেয়ে দড়িখড়বোনা এলাকার মহিলা দলের নেত্রী লাভলীর নেতৃত্বে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী উক্ত বহুতল ভবনটি ঘেরাও করে রাখেন। ভবনটির সিসি ক্যামেরার ফুটেজে মোস্তাককে তার স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে ভবনে ঢুকতে দেখা গেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসে সার্চ করে মোস্তাককে সেখানে পায়নি।
পরবর্তীতে সেখান থেকে মোস্তাক আহমেদের ভাই সাব্বির বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযান চালিয়ে মোস্তাকের ভাই সাব্বিরকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়াকে কেন্দ্র করেই গত ৭ মার্চ রাজশাহী মহানগরীর দড়িখড়বোনা এলাকায় শাহমখদুম থানা বিএনপির আহবায়ক সুমন সরদার ও সাবেক যুবদল নেতা মারুফ হোসেন জীবন এই দুই পক্ষের নেতা–কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে এবং কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ পাওয়া যায়। এ সময় বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে উঠে। সংঘর্ষের সময় এক সাংবাদিকের সহ মোট ৩টি মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং সিটিএসবির সদস্য তোফাজ্জল সহ ৪ জন আহত হয়।
প্রায় চার ঘণ্টা ধরে দড়িখড়বোনা, উপশহর মোড়, রেলগেট, সপুরা ও শালবাগান এলাকায় চলা ধাওয়া পালটা ধাওয়ায় উক্ত এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষের সময় সকলের হাতে ধারালো অস্ত্র দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে রিকশাচালক গোলাম হোসেন ওই রাতে দড়িখড়বোনা বিএনপি পার্টি অফিসের সামনে দিয়ে রিকশা রেখে হেঁটে ভাড়া বাসায় যাচ্ছিলেন। তখন শাহমখদুম থানা বিএনপির আহ্বায়ক সুমন সরদার ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মীর তারেক হোসেনের নেতৃত্বে থাকা বিএনপি কর্মীরা গোলাম হোসেনকে বিরোধী পক্ষের লোক ভেবে এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাত করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলার সময় শতাধিক ব্যক্তির হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। পরবর্তীতে আহত গোলাম হোসেনকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে মঙ্গলবার রাতে তিনি চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যান। নিহত গোলাম হোসেনের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার সাহেবপাড়ায়। রাজশাহী নগরের দড়িখড়বোনা মহল্লায় তিনি স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন। শহরে রিকশা চালিয়ে তিনি সংসার চালাতেন।
রিকশাচালক গোলাম হোসেন আহত হওয়ার ঘটনায় গত ৯ মার্চ তার স্ত্রী পরীবানু সুমন সরদার কে ১নং আসামি করে ৯জনের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাতনামা ১৫/২০জনকে আসামি করে নগরীব বোয়ালিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। নিহতের স্ত্রী পরিবানুর দেওয়া লিখিত অভিযোগটি আমাদের হাতে এসেছে। কিন্তু, পুলিশ সেটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্ত্রী পরীবানু। গোলাম হোসেন নিহতের ঘটনায় উপ-পুলিশ কমিশনার বোয়ালিয়া জোন রিয়াজুল ইসলাম বলেন,” আহত রিক্সাচালক গোলাম হোসেন মারা গেছেন আমরা শুনেছি। এখন পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ মামলা করার জন্য আসলে মামলা গ্রহণ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এইদিকে, রিক্সা চালককে হামলার ঘটনার সাথে জড়িতদের নাম প্রকাশ করার জন্য রাজশাহী প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাংবাদিক নজরুল ইসলাম জুলুকে সুমন সরদার ও মীর তারেকের লোকজন হত্যার হুমকি প্রদান করেছে। তারা রাজশাহী প্রেসক্লাব বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদান সহ উক্ত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানান অপপ্রচার চালাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, সংঘর্ষে জড়ানো বিএনপির উভয় পক্ষের নেতাকর্মীরা একে অপরের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের দোসরদের শেল্টার দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। সুমন সরদার নিজে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও তার ভাই মো:ছানা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে জানা যায়। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সাবেক এমপি ও মেয়র বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বিএনপি প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনুকে রাজশাহী পলিটেকনিক ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া ও অস্ত্র নিয়ে হামলার ঘটনায় গত বছর ২৪শে আগষ্ট বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। যাহার মামলা নং ৩৪। জানা গেছে উক্ত মামলার ৮নং আসামি সুমন সরদারের ভাই মো: ছানা।
বিএ..