জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে দেশের রাজনীতির মাঠ। দেশ বিদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল নড়েচড়ে বসেছেন। দেশে বাড়ছে বিদেশীদের আনাগনা। ইইউসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করছেন।
নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা জনসমর্থন আদায়ে রাজপথে নেমেছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয়ই।
বুধবার (১২ জুলাই) রাজধানীতে একই দিনে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ফলে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের রাজনীতির মাঠ। সমাবেশকে সামনে রেখে রাজনৈতিক সংঘাতের শঙ্কা করছেন কেউ কেউ।
শুধু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, আর বিএনপি নয়। রাজধানীতে বুধবার গণঅধিকার পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম এবং গণতন্ত্র মঞ্চসহ একাধিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠন সমাবেশ করবে।
দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে বিএনপি। দুপুর ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটের সামনে ‘শান্তি সমাবেশথ করবে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ-উত্তর) আওয়ামী লীগ।
এছাড়া বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে গণঅধিকার পরিষদ। আর বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সংবাদ সম্মেলন করবে গণতন্ত্র মঞ্চ।
এছাড়া সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের তৃতীয় তলায় মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে সংবাদ সম্মেলন করবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম। আপরদিকে সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আওয়ামী লীগ ও অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ আয়োজন করেছে শান্তি সমাবেশ।
পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘিরে বুধবার অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে। এমন গোয়েন্দা তথ্য পুলিশের কাছেও রয়েছে। ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক মঙ্গলবার রাতে গণমাধ্যমকে এমন তথ্য দিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিএনপিকে বুধবার কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু গোয়েন্দা তথ্য আছে, তারা অরাজকতা করতে পারে। তাই পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক অবস্থায় থাকবে।
এদিকে ডিএমপিথর পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ২৩ শর্তে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এসব শর্ত মেনেই দুই রাজনৈতিক দল সমাবেশ করবে বলে প্রত্যাশা করছে ডিএমপি।
বর্তমানে ঢাকায় বেশ কয়েকটি বিদেশি প্রতিনিধি দল অবস্থান করছে, সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় পক্ষই সতর্ক থাকবে বলে মনে করেন একাধিক রাজনীতিক। তারা বলেন, দেশের ভাবমূর্তি নয় হয় এমন ঘটনা কোনো দলই ঘটাবেনা। বিষয়টি তারা খেয়াল রাখবে।
বুধবার নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে সমাবেশ করবে দলটি। নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেলা ২টায় এ সমাবেশ থেকে দলটির নতুন কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে। পাশাপাশি তৃণমূলে দেওয়া হবে নতুন বার্তা। সমাবেশে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা বক্তব্য দেবেন।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করবে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম, গণঅধিকার পরিষদ (নুর),গণঅধিকার পরিষদ (রেজা), গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, সমমনা গণতান্ত্রিক পেশাজীবী জোট, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
অন্যদিকে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বুধবার বিকাল ৩টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। সমাবেশে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এই শান্তি সমাবেশে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের যোগ দিবেন।
একই দিন আওয়ামী লীগ সমাবেশ ডাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে ‘চক্রান্তেরথ অভিযোগ করা হয়েছে। দলটির নেতারা অভিযোগ করেন—আওয়ামী লীগই একই দিনে কর্মসূচি ডেকে ‘পায়ে-পা রেখেথ পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে চাইছে।
জবাবে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বিএনপি-জামায়াত যেন সমাবেশের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারে তারা সতর্ক থাকবে। তবে সমাবেশকে কেন্দ্র করে সতর্ক রয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। কেউ যেন অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে না পারে, সে ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে।
বিএ/