নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী মহানগরীতে ছোট ভাই জিতেন ধরের পূর্ব পরিকল্পনাতেই ছিনতাই নাটক সাজিয়ে বড় ভাই দ্বিজেন ধরের ১৭ টি সোনার বার পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই করা হয়। ১৭ টি বারে থাকা ১৭০ ভরি সোনার মূল্য প্রায় ১ কোটি ১২ লাখ ৭১ হাজার টাকা। ধার দেনার মধ্যে থাকায় বড় ভাই দ্বীজেনের সোনার বার ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে ছোট ভাই জিতেন। কিন্ত শেষ রক্ষা হয়নি। পুলিশের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজের কারণে ধরা পড়তে হয়েছে তাকে। এ ঘটনায় নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় ৬ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই মামলায় জিতেনকে আটক করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামীরা হলেন, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান (৩৫), মৃদুল (৩৪) ও তাদের অজ্ঞাতনামা আরো দুইজন সহযোগি। আটক ব্যক্তি ঘটনার মূল হোতা রাজশাহীর পুঠিয়া থানার পুঠিয়া শিবচৌকি উত্তরপাড়া এলাকার দ্বীনেশ ধরের ছেলে জিতেন ধর (৪৮)। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আরএমপি সদর দপ্তরের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান আরএমপি কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক।
সংবাদ সম্মেলন করছেন আরএমপি কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো জানান, ফেনী সদর উপজেলার মাস্টারপাড়া গ্রামের দ্বীনেশ ধরের ছেলে দ্বিজেন ধর (৫০) ফেনী থেকে ১৭ টি সোনার বার বাকিতে কিনে প্রথমে তিনি রাজশাহীর পুঠিয়ায় তার মেজ ভাই জিতেন ধরের বাড়িতে যান। সোনার বারগুলো সাহেব বাজার সোনাপট্টি “লাইলা জুয়েলার্স” এর মালিক মানিকের কাছে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন। ওইদিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে দ্বিজেন ও তার মেজ ভাই জিতেন পুঠিয়া থেকে সোনাগুলো নিয়ে বাস যোগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর ভদ্রা মোড়ে পৌঁছেন। তারা দুই ভাই ভদ্রা মোড় থেকে হেঁটে যাওয়ার সময় দুটি মোটরসাইকেলে করে অজ্ঞাতনামা ৪ জন নিজেদের “প্রশাসনের লোক” পরিচয় দেন ও তাদের মধ্যে একজন দ্বিজেনকে হ্যান্ডকাপ দেখান। এরপর তারা দ্বিজেনের মেজ ভাইয়ের কাছে থাকা সোনার বারের ব্যাগটি জোরপূর্বক কেড়ে নেয় ও তাদের মোটরসাইকেলে তুলে নেন। শুভ পেট্রোল পাম্পের কাছে নির্মাণাধীন ভবনের সামনে পৌঁছালে ছিনতাইকারীরা মোটরসাইকেল থামিয়ে দ্বিজেন ও জিতেনকে হুমকি দিয়ে মোবাইল কেড়ে নিয়ে চলে যায়।
ঘটনার পর দ্বিজেন নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় গিয়ে বিষয়টি জানান ও পরে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পর ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ পর্যালোচনা করে। এরপর ২৫ তারিখ শুক্রবার ভোরে বোয়ালিয়া থানার এসি ফারজিনা নাসরিনের নের্তৃত্বে দ্বিজেনের মেজ ভাই জিতেন ধরকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে জিতেন ধর স্বীকার করে যে, ছিনতাই হওয়া সোনাগুলো তার বাড়িতে আছে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাড়ি থেকে ১৬টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়। বাকি একটি সোনার বার জিতেন নাটোর সদর থানাধীন লালবাজারের একটি জুয়েলার্সের দোকানে ৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন।
উদ্ধার হওয়া সোনার বারপুলিশ কমিশনার আরো জানান, জিতেন ধর তার প্রতিবেশী মিজানুর রহমান ওরফে মিজানের সাথে যোগসাজোশ করে সোনার বার ছিনতাইয়ের পূর্ব পরিকল্পনা করে। এর আগে জিতেন তার ভাইয়ের অজান্তে ব্যাগ থেকে ৩টি সোনার বার বের করে তার পরিবর্তে সেখানেন সীসার রড কাগজে কসটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে ব্যাগে রেখে দিয়ে রাজশাহীতে আসেন। এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জিতেনের লোকজন ৩টি মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ পরিচয় দিয়ে সোনার বারগুলো নিয়ে চলে যায়। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, আরএমপির বোয়ালিয়া জোনের ডিসি সাজিদ হোসেন, মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস ও এসি বোয়ালিয়া ফারজিনা নাসরিন।
এস/আর