ঢাকারবিবার , ৪ ডিসেম্বর ২০২২
আজকের সর্বশেষ সবখবর

স্ত্রীকে নির্যাতন মামলায় সেই এএসপির বিরুদ্ধে চার্জশিট, ব্যবস্থা না নিয়ে নতুন কর্মস্থলে পদায়ন

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ৪, ২০২২ ৪:৫০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিয়ের পর দফায় দফায় যৌতুকের দাবি পূরণ একই দাবি না মানায় নির্যাতনের অভিযোগ এনে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রুবেল হকের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইলের আদালতে মামলা করেন স্ত্রী সায়মা সুলতানা সিমি (৩১)।

জানাযায়, মামলার পরে সহকারী পুলিশ সুপার রুবেল হক (৩৪) কে টাঙ্গাইলের মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার থেকে ৬ষ্ঠ এপিবিএন খাগড়াছড়িতে বদলি করা হয়।

পরবর্তীতে গত ২৯ নভেম্বর ২০২২ পুলিশ সদরদপ্তরের আরেকটি আদেশে ওই কর্মকর্তাকে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে পদায়ন করা হয়।

অভিযোগ উঠেছে, স্ত্রী নির্যাতনের মামলায় অভিযোগ প্রমানিত হওয়ার পরে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন রুবেল হক এর বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্ট থেকে এখনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাকে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে পদায়ন করা হয়েছে। মামলার পরবর্তী সময়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে সে কৌশলে শর্তসাপেক্ষে জামিন নেন। জামিন নিয়ে মামলা তুলে নেয়ার জন্য স্ত্রীকে হুমকি দেয়া অব্যাহত রাখে। মামলার পূর্বাপর ঘটনা ও হুমকির বিষয়টি তুলে ধরে আইনী ব্যবস্থা নিতে স্বামী এএসপি রুবেল হকের বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্ত্রী সায়মা সুলতানা সিমি ।

মামলা ও বাদীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার চকযদু গ্রামের মৃত আফজাল হোসেনের মেয়ে সায়মা সুলতানা সিমি (৩১) এর সাথে চাপাইনবয়াবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার তেররশিরার গ্রামের জারজিস মধুর ছেলে বর্তমানে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রুবেল হকের সঙ্গে (৩৪) বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিসিএস অফিসার বলে স্বামী রুবেল হক ও তার পরিবার ২০ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করেন। পরে গৃহবধূ সিমির বিধবা মা ও বোন অনেক কষ্টে দশ লক্ষ টাকা, ১২ ভরি স্বর্ণ ও প্রয়োজনীয় আববাবপত্র প্রদান করে।

বিয়ের কিছুদিন পরেই স্বামী রুবেল হক ও তার পরিবারের লোকজন ঢাকায় ফ্ল্যাট বাড়ি ক্রয় করবে বলে ৫০ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য সিমিকে মানসিক ও শারীরিক অমানুষিক নির্যাতন শুরু করেন এবং গৃহবধু সিমিকে রুমের মধ্যে আটকে রাখে। পরে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সহায়তায় মামলার সাক্ষী সালমা খাতুন হাসপাতালে ভর্তি করেন।

চিকিৎসা শেষে নিরুপায় হয়ে পরে ন্যায় বিচারের স্বার্থে চলতি বছরের ৬ সেপ্টেম্বর গৃহবধূ সায়মা সুলতানা সিমি টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-আদালতে তার স্বামী এএসপি রুবেল হক (৩৪), শশুর জারজিস আলী মধু (৫৪), শাশুড়ী, নাসিমা বেগম (৫০) ও ননদ নাসরিন খাতুন (২২) কে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন।

বাদির আরজিতে পরবর্তীতে আদালত জুডিশিয়ারি তদন্তের নির্দেশ দেন। স্ত্রীর করা মামলায় জুডিশিয়ারি তদন্ত শেষে গত ১৮ অক্টোবর ২০২২ সহকারী পুলিশ সুপার রুবেল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রুপন কুমার দাশ চার্জসিট দাখিল করেন আদালতে।

তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ নভেম্বর টাঙ্গাইল জেলা (দায়রা ও জজ) এর বিচারিক আদালতে শুনানি শেষে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। টাঙ্গাইল আমলী আদালতের নারী শিশু মামলা নং ৪৬১/২২

পরবর্তীতে সহকারী পুলিশ সুপার রুবেল হক কৌশল অবলম্বন করে ডিপার্টমেন্টকে তথ্য গোপন রেখে গত ৩০ নভেম্বর আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন লাভ করে।

টাঙ্গাঈলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুন্যাল আদালতে মামলার অভিযোগ প্রমানিত ও ওয়ারেন্ট ইস্যু হওয়ায় এএসপি রুবেল হক এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে স্ত্রী সায়মা সুলতানা সিমি আইজিপি বরাবর পুলিশ সদর দপ্তরে একটি অভিযোগ দায়ের করে। যার নং এসএল-১০৭০ তারিখ ১/১২/২০২২ ইংমামলার বাদী সায়মা সুলতানা সিমি জানান,মামলা তুলে নিতে ভয়ভীতি,হুমকি দিচ্ছে স্বামী রুবেল হক । সে আমাকে পুলিশি ভয় দেখাচ্ছে। রুবেল হক পুলিশিং প্রভাব বিস্তার করে তার পিতা জারজিস হোসেন মধুকে দিয়ে আমার নামে কাউন্টার মিথ্যা মামলা করিয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমলি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে হাজির হলে ৪ ঘন্টা জিম্মি করে চাপ সৃষ্টি করা হয়। এবং রাত ৯ টার দিকে জামিন নাকচ করে হেনেস্তা পুর্বক জেল হাজতে প্রেরন করা হয় আমাকে । পরে ন্যায় বিচার না পাওয়ার সম্ভাবনায় মাননীয় জেলা দায়রা মহোদয়ের নিকট আবেদন করি।

সে তার প্রভাব খাটিয়ে তথ্য গোপন রেখে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ব্যবস্থাকেও বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়েছে। মানষিক ও শারিরীক নির্যাতনের জন্য স্বামী রুবেল হকের শাস্তির দাবি জানান গৃহবধু সায়মা সুলতানা সিমি ।

এব্যাপারে,সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রুবেল হক কে একাধিকবার ফোন করলেও ধরেননি তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এবিষয়ে জানতে পুলিশ সদরদপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংয়ের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো.মনজুর রহমান এর মুঠোফোনে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট আবু জাফর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট খবর ২৪ ঘন্টাকে বলেন, সরকারি রুলস অনুযায়ী কোন সরকারি কর্মচারী বা কর্মকর্তা কোন মামলায় গ্রেফতার বা জামিন নিলে সঙ্গে সঙ্গে সাময়িক দরখাস্ত হবে। পরবর্তীতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত থাকবে।
বিএ/

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।