ঢাকাবুধবার , ৮ জুলাই ২০২০
আজকের সর্বশেষ সবখবর

শিবচর উপজেলার দুই শতাধিক পরিবার পদ্মার ভাঙ্গনে দিশেহারা

অনলাইন ভার্সন
জুলাই ৮, ২০২০ ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

খবর ২৪ ঘন্টা ডেস্ক : জীবনের শুরু থিকা চরে বাস করি। তখন নদীর ভাঙ্গন ছিল মেলা দূরে। গত বছরও ভাবি নাই এ বছর আমাগো সব শ্যাষ হইয়া যাইবে। চোখের সামনে আমাগো যা ছিল সবই নদীতে গিলে খেলো।’ কথাগুলো মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চরজানাজাত ইউনিয়নের মিনাকান্দি এলাকার ষাটোর্ধ্ব জেলে জোহরুদ্দিন মিয়ার।


গত দুই সপ্তাহ আগে বসতঘর, জমি ও গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় তাঁর। এরপর দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে অন্যের ভিটায়। শুধু জোহরুদ্দিন নয়, তার মতো এমন আরও দুই শতাধিক পরিবার পদ্মার ভাঙ্গনে এখন দিশেহারা।
শিবচর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন জুঁড়েই পদ্মার চরাঞ্চল। বর্ষার মৌসুমে পানি বেড়ে যাওয়ায় বুক পানিতে তলিয়ে চরাঞ্চলের বেশির ভাগ জমি।

বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন চরাঞ্চলের প্রায় ২৪০০ পরিবার। উঁচু স্থানগুলোতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন।
মঙ্গলবার দুপুরে চরজানাজাত ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, ইউনিয়নটির ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮টি ওয়ার্ড নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শুধু মাত্র ইউনিয়নটির ৯নং ওয়ার্ড এখনো বিলীন হয়নি। তবে, ওয়ার্ডের প্রতিটি গ্রামে ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি। কোথায় কোমর পানি, কোথায় বুক পানি। পানির মধ্যে এখনো বসবাস করছে কিছু মানুষ।

পদ্মার ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তরা অনেকেই জীবন বাঁচাতে বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে উঁচু স্থানে। অনেকে বাড়িঘর ভেঙ্গে ও গবাদি পশু নৌকায় তুলে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুঁটে চলছে।
একে একে দুবার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে আমিনা খাতুনের বসতঘর। তবুও বেঁচে থাকার আকুতি জানিয়ে তিনি মানবজমিনকে বলেন, ‘নদীর পাড়ে আমাগো অনেক জমিজমা ছিল। ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এখন সব শ্যাষ। গত বছর যেখানে নতুন ঘর বানাইছি, সেই ঘরও আর নাই। ছেলে মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে আছি।

এক টাকারও কেউ ত্রাণ দেয় নাই। ভাঙ্গনে আরেক ক্ষতিগ্রস্ত আব্দুল খালেক মাদবর বলেন, ‘ঘর, গাছ-পালা যা ছিল সব নদীতে গিলে খেয়েছে। নিজের বলে আর কোন জমি নাই। অন্যের ভিটায় চার ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে উঠেছি। জানি না এখানে কতদিন থাকতে পারবো।’
পদ্মার চরে একছটা বালু চরে বাদাম চাষ করে যা আয় হত তা দিয়েই সংসার চলাত আবু বক্কর সিদ্দিক। এবার বন্যার পানিতে বাদামের খেত গেছে তলিয়ে।

পরিবার নিয়ে পানিবন্দি জীবন কাটানো আবু বক্কর সিদ্দিক মানবজমিনকে বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছিলাম। সামান্য কিছু বাদাল তুলেছি। বাকি সব বাদাম বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। দুই বেলা শুকনা খাবার খেয়ে কোন রকম বেঁচে আছি। এখন সরকারি সহযোগিতা না পেলে আর কতদিন এভাবে বাঁচবো জানি না।’

খবর২৪ঘন্টা /এএইচআর

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।