সবার আগে.সর্বশেষ  
ঢাকারবিবার , ১২ আগস্ট ২০১৮
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার: জামিন পেলেও মুক্তি পেতে আসামীদের গুনতে হয় টাকা!

omor faruk
আগস্ট ১২, ২০১৮ ১২:২৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নিজস্ব প্রতিবেদক :
কারাগারে বন্দি আসামীরা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালত থেকে জামিন পেলেও বিনা টাকায় মুক্তি পান না রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর টাকা না দিতে চাইলে ডিবি ও পুলিশের ভয় দেখিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়। সেই সাথে নাম-ঠিকানারও গড়মিল দেখানো হয়। বিভিন্ন ধরণের ভুল দেখিয়ে দাবি করা হয় টাকা। আর টাকা দিলেই মুহূর্তের মধ্যেই সব ভুল ঠিক হয়ে যায়। এমন অভিযোগ উঠেছে খোদ রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার শেখ রাসেলের বিরুদ্ধে। আর তাকে সহযোগিতা করেন মুন্সি হারুনুর রশীদ ও রাইটাররা। এমন অভিযোগ করেছেন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সদ্য মুক্তি পাওয়া কয়েকজন আসামী।

সূত্রে জানা গেছে, শেখ রাসেল ২০০৯ সালে ৫ম ব্যাচের মাধ্যমে ডেপুটি জেলার হিসেবে যোগদান করেন। তার বাড়ি খুলনা জেলায়। ২০১৭ সালে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। এরপর তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত করেন ডিআইজি প্রিজন টিপু সুলতান ও সিনিয়র জেল সুপার হালিমা খাতুন। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ডেপুটি জেলার শেখ রাসেলকে বাগেরহাট কারাগার থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বদলি করা হয়। কারাগারে বদলি হয়ে আসার পর তিনি ভর্তি শাখায় ডেপুটি জেলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ভর্তি শাখায় তিনি নতুন আসামীদের বুঝিয়ে নেওয়া ও জামিনে মুক্তি পাওয়া আসামীদের যাচাই-বাছাই করে মুক্তি দেওয়ার কাজ করেন। এ কাজ করতে গিয়ে আসামীদের যাবতীয় বিষয় তিনি জেনে ফেলেন। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পিসি বইয়ের মাধ্যমেই জানতে পারেন কারাগারের ভেতরে কোন বন্দি কি পরিমাণ টাকা-পয়সা খরচ করেছে। সেই অনুযায়ী জামিনে মুক্তি পাওয়ার সময় একেক জন আসামীর কাছে টাকা দাবি করা হয়।

ভর্তি শাখায় দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে শুরু হয় তার আসামীদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করা। কারাগার থেকে যেই আসামী জামিনে মুক্তি পাক না কেন? টাকা না দিয়ে তার বের হওয়া প্রায় অসম্ভব। কারণ তাকে বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি দেখিয়ে টাকা দিতে বাধ্য করান এই ডেপুটি জেলার শেখ রাসেল। কেউ টাকা না দিতে চাইলে পুলিশের ভয় দেখানোর পাশাপাশি ঘণ্টার পর ঘণ্টা এটা সেটা ভুল দেখিয়ে বসিয়ে রাখা হয়। চলতি আগষ্ট মাসের ১ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত যারা মুক্তি পেয়েছে প্রায় তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকেই তিনি টাকা নিয়েছেন বলে খবর ২৪ ঘণ্টার অনুসন্ধানে জানা গেছে। আর এসব কাজে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেন মুন্সি হারুনুর রশীদ ও রাইটাররা। তারাই তাকে সব বিষয়ে অবহিত করেন।

সদ্য জামিনে মুক্তি পাওয়া কয়েকজন খবর ২৪ ঘণ্টার কাছে এসব তথ্য জানিয়েছেন। এরমধ্যে একজন হলেন মুকুল হোসেন। তিনি রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন টিকাপাড়া এলাকার শুকুর শেখের ছেলে।
তিনি খবর ২৪ ঘণ্টার কাছে অভিযোগ করেন, গত ৩১ জুলাই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে তার জামিনের কাগজ পৌঁছায়। কিন্ত সেদিন তাকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। পরদিন ১ আগষ্ট সকালে তাকে জামিন হয়েছে বলে জানিয়ে ডেপুটি জেলারের কক্ষে ডেকে নেওয়া হয়। এরপর দুপুর ১২টার দিকে তাকে জানানো হয় তার নাম-ঠিকানা ভুল রয়েছে। জামিনের কাগজের সাথে মিলছে না। তাই তাকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানায় ডেপুটি জেলার শেখ রাসেল। কিছুক্ষণ পর তার কাছে ১ হাজার টাকা দাবি করা হয়। একহাজার টাকা দিলে মুক্তিও দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। আর না দিলে দেওয়া হবে না বলে বসিয়ে রাখা হয়। এমতবস্থায় পিসি বই থেকে ১ হাজার টাকা দিয়েই মুকুল হোসেন কারাগার থেকে মুক্তি পান।

মুকুল হোসেন অভিযোগ করে আরো বলেন, কারাগারে যা চলছে তা বলার মত নয়। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের উচিত এসব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভার বিএনপি নেতা শাহিনও গত কয়েকদিন আগে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তারও জামিনের কাগজ কারাগারে পৌঁছার পর দীর্ঘ সময় বসিয়ে রাখা হয়। বিভিন্ন ভুল দেখিয়ে ও বাইরে র‌্যাব-পুলিশ অবস্থান করছে এমন কথা বলে টাকা দাবি করা হয়। তিনিও টাকা দিয়ে মুক্তি পান। পুঠিয়া উপজেলার ঝলমলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও জামিনে মুক্তি পেয়েছেন কয়েকদিন আগে। তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন ডেপুটি জেলার শেখ রাসেল। তাকেও বিভিন্নভাবে ভয় দেখানো হয়েছিল বলে তিনি খবর ২৪ ঘণ্টার কাছে অভিযোগ করেছেন। রাজশাহী মহানগরীর চন্ডিপুর এলাকার বাচ্চু নামের এক আসামীর কাছ থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য টাকা নেন রাসেল বলেও অভিযোগ করা হয়।

অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, যারা জামিনে মুক্তি পান তাদের প্রায় প্রত্যেকের কাছ থেকেই টাকা আদায় করা হয়। টাকা না দিলে হয়রাণি ও ভয়ভীতি দেখানো হয়। তাই বাধ্য হয়েই টাকা দিয়ে কারাগার থেকে বের হন আসামীরা।তবে তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ অস্বীকার করে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার শেখ রাসেল বলেন, বাগেরহাট কারাগারে থাকতে একটা তদন্ত তার বিরুদ্ধে হয়েছিল। জামিনে মুক্তি পাওয়া আসামীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয় না।

কেউ হয়তো সাংবাদিকদের আমার বিরুদ্ধে ভুল বুঝিয়েছে। সামনাসামনি বসলে ভুলটা দুর হয়ে যাবে। তার বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, একদিন অফিসে আসেন। একসাথে বসলে সব ঠিক হয়ে যাবে।  এ বিষয়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. হাবিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। সিনিয়র জেল সুপার হালিমা খাতুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকেও পাওয়া যায়নি।

খবর২৪ঘণ্টা/এম

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।