ঢাকাশনিবার , ২১ ডিসেম্বর ২০১৯
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রাজশাহীতে তীব্র শীতে স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত, দিনভর দেখা মেলেনি সূর্যের!

khobor
ডিসেম্বর ২১, ২০১৯ ৮:১১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নিজস্ব প্রতিবেদক: শনিবার সকাল থেকে দিনভর সূর্যের দেখা মেলেনি। সূর্য না উঠায় এদিন অন্যান্য দিনের তুলনায় শীতের তীব্রতা বেশি ছিল। শীত বেশি হওয়ায় স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হয়। নগরজুড়ে যানবাবহনের সংখ্যা কম দেখা যায়। শীত বাড়ার কারণে নগরীতে বাইরে থেকে আসা মানুষের সমাগম কম ঘটে। আর হাসপাতালসহ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেক কম মানুষ দেখা যায়। তবে শীতজনিত রোগে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু ও বয়ষ্ক রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শীতের তীব্রতা বাড়ায় নগরীর গরম কাপড়ের মার্কেট ও ফুটপাতের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। গরম কাপড়ের সাথে সাথে হাত ও পা ঠাÐা থেকে বাঁচাতে হাত ও পা মোজা কিনতেও ভিড় জমায় ক্রেতারা। আর শীত উপলক্ষে ভ্রাম্যমাণ গরম কাপড়ের দোকানের সংখ্যাও বেড়েছে।
গতকাল শনিবার রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে নগরজুড়ে কুয়াশা পড়া শুরু করে। রাত বাড়ার সাথে সাথেই কুয়াশায় ঢেকে যায় চারিদিক। কুয়াশার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে শীতের তীব্রতা। শনিবার ভোরে দেখা যায়, কুয়াশার চাদরে মোড়ে রয়েছে পদ্মা পাড়ের শহর রাজশাহী। চারিদিক শুধু কুয়াশা আর কুয়াশা। সূর্য উঠার সময় পেরিয়ে গেলেও সুর্য না উঠায় শীতের তীব্রতা না কমে আরো বাড়তে শুরু করে। শীতে দিনমজুররা কাজের সন্ধানে বের হয়েও কাজ না পাওয়ার কারণে ফিরে যান নিজ বাড়িতে। নগরীর কোর্ট স্টেশন ও রেলগেটসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। শীতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সবচাইতে বেশি সমস্যার মধ্যে পড়েন দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষজন। নগরীর কোর্ট

স্টেশনে কাজের সন্ধানে বসে থাকা রাকিব নামের একব্যক্তি বলেন, যেদিন থেকে বেশি ঠাÐা পড়া শুরু করেছে সেদিন থেকে কাজ কম পাওয়া যাচ্ছে। গত ৪ দিনের মধ্যে ২ দিনই বেকার ছিলাম। আজও কাজ পাবো কিনা ভরসা নেই। কাজ না পেলে বাড়ি ফিরে যেতে হবে। আর ছেলেমেয়ে নিয়ে সমস্যাই পড়তে হবে। সবুর নামের কাজের সন্ধানে বের হওয়া আরেক ব্যক্তি বলেন, শীতের সময় কাজ কমে যায়। আর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। আজ আমরা অনেকেই বসে ছিলাম। কিন্ত মাত্র কয়েকজন কাজ পেয়েছে।
শুধু দিনমজুররাই নয় রিক্সা চালকরা তীব্র শীতের মধ্যে রাস্তায় থাকতে না পেরে অনেকেই বাড়িতে ফিরে যান। এভাবে বেলা বেড়ে চললেও নগরীতে অন্যান্য দিনের মতো কোলাহল বাড়েনি। নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও সেবা প্রত্যাশীদের সংখ্যা ছিল খুব কম। এদিন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায় প্রায় রোগী শূণ্য। কোন চিকিৎসকের কক্ষের সামনে রোগীর লাইন নেই। টিকিট কাউন্টারেও রোগীর ভিড় ছিল না। বৈরি আবহাওয়ার কারণে রাজশাহী মহানগরীর বাইরে থেকে রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেননি। আশেপাশের ব্যবসায়ীদেরও অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। তবে হাসপাতালের ইনডোরের চিত্র ছিল একেবারেই ভিন্ন। কারণ শীতের তীব্রতা বাড়ার ফলে ছোট শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। অসুস্থ শিশুকে চিকিৎসা করাতে রামেক হাসপাতালে আসছেন অভিভাবকরা। শুধু ছোট শিশুই নয় বয়ষ্ক মানুষজনও শ্বাষকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। গত কয়েকদিনের তুলনায় এদিন বেশি রোগী ভর্তি হয়। সকাল গড়িয়ে দুপুর ও দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলেও সূর্যের দেখা মেলেনি রাজশাহীর আকাশে। দিনভর

সূর্যের দেখা না মেলায় শীতের তীব্রতা আরো বেড়ে যায়। আর শীত থেকে বাঁচতে মানুষ সাধ ও সাধ্য অনুযায়ী গরম কাপড় কিনতে ভিড় জমান অভিজাত মার্কেট ও ফুটপাতের দোকানগুলোতে। বিশেষ করে নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজার এলাকায় ব্যাপক মানুষকে গরম কাপড় কিনতে দেখা যায়। ক্রেতাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, শীত বেশি হওয়ায় দোকানিরা সুযোগের সৎ ব্যবহার করছেন। অন্য সময়ের তুলনায় দাম বেশি ধরছেন। ক্রেতার সংখ্যা বেশি হওয়ায় দামাদামি করেও লাভ হচ্ছে না। তাই দোকানিরা এক দামের উপরেই থাকছেন। শুধু গরম কাপড় নয় জুতো ও কেডস্ ও শনিবার বেশি বিক্রি হয়। পাশাপাশি হাত ও পা মোজাও বিপুল সংখ্যক মানুষকে কিনতে দেখা যায়। হাড় কাঁপানে এ শীতের হাত থেকে বাঁচতে মানুষ গরম কাপড় কেনেন। শুধু নগরেই নয় আশেপাশের জেলা ও উপজেলাগুলোতেও শীতের দাপট বেশি রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সামর্থ্যবান মানুষ গরম কাপড় কিনলেও ছিন্নমূল ও পথশিশুরা এই গরমের মধ্যে বিপাকে পড়েন। অসহায় বস্তিবাসীও পড়েছেন সমস্যার মধ্যে। এই সব ছিন্নমূল ও অসহায় সহায় সম্বলহীন মানুষজন গরম কাপড়ের জন্য হাত পাতছেন মানুষের কাছে। সরকারের পক্ষ থেকে কম্বল বিতরণের জন্য অনুরোধ জানান তারা।
জেলার আশেপাশের উপজেলার অনেক মানুষ শীত নিবারণে খড়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করেন।
এদিকে, গত শুক্রবার রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ২৬ দশমক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। চলতি মৌসুমে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল এটাই। রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, রাজশাহীতে শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৫ দমশকি ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৬টায় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ ও সন্ধ্যা ৬টায় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ। আরো তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা রয়েছে আবহাওয়া অফিস জানায়।

আর/এস

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।