ঢাকাশনিবার , ৬ জানুয়ারি ২০১৮
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রাজশাহীতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই, রহস্য উদঘাটন হয়নি!  

omor faruk
জানুয়ারি ৬, ২০১৮ ৯:৪৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

বিশেষ প্রতিবেদকক :
২০১৭ সালে রাজশাহী মহানগরীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই। ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নগরবাসী। গত বছর পুলিশ পোশাকে ছিনতাইয়ের ঘটনা ছিল ব্যাপক আলোচিত ও সমালোচিত। এ ঘটনাগুলোতে পুলিশ প্রশাসনও ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। বড় কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় নতুন করে নগরবাসীকে ভাবিয়ে তুলে। কারণ প্রত্যেকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা দিনে প্রকাশ্য দিবালোকেই হয়েছে। তারপরও তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েনি কেউ। সেই রহস্য রহস্যই থেকে গেছে। ঘটনার সাথে জড়িতরা সবাই ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।

 

অপরাধীরা গ্রেফতার না হওয়ায় একের পর এক এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। গত ২০১৬ সালে রাজশাহী মহানগরীর গণকপাড়ায় অবস্থিত স্বর্ণের দোকানে সন্ধ্যা বেলায় প্র্রকাশ্যে ডাকাতি ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় কোন কুল কিনারা হয়নি। এর আগে নগরীতে ছিনতাই হতো ছুরি-চাকু অথবা অন্য অস্ত্র দেখিয়ে। কিন্তু গত বছর রাজশাহীতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই হয়েছে। ডিবি পরিচয়দানকাী ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করতেও ব্যর্থ হয় পুলিশ।

 

গত ২০১৭ সালে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে অন্যতম কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হল।
গত বছরের ২ অক্টোবর দুপুরে নগরীর রাণিবাজার এলাকায় এক নারীর সাড়ে ৪ লাখ টাকা ছিনতাই হয়।
ছিনতাইকারী নিজেকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ওই নারীর কাছে থাকা ব্যাগ তল্লাশী করতে চায়। এরমধ্যেই আরেকজন এসে তার নাম ঠিকানা জেনে খাতায় লিখতে চায়। মুহূর্তের মধ্যে প্রথমে ডিবি পরিচয়দানকারী ব্যক্তি টাকার ব্যাগ নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়।

 

পরে ভিডিও ফুটেজ থেকে ছিনতাইকারীর ছবি চিহ্নিত করে পুলিশ। কিন্ত তার পরিচয় সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এখনো গ্রেফতার হয়নি সেই ডিবি পুলিশ নামধারী ছিনতাইকারীরা।
ওই ছিনতাইয়ের রেশ কাটতে না কাটতে না কাটতেই নগরীর মতিহার থানাধীন মাহেন্দ্রা এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তল্লাশীর নামে জুট মিলের সাড়ে ১৭ লাখ টাকা ছিনতাই করে নেওয়া হয়।

 

জানা যায়, জুট মিলের শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরী দেওয়ার জন্য হিসাবরক্ষক নয়ন ও ফ্লিড অফিসার পুনম মিলের পিকাপে করে রাজশাহীর ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে দুটি মোটরসাইকেলে করে ৪ জন ডিবি পুলিশের পোশাক পরে পিকাপের পথরোধ করে গাড়ী তল্লাশী করতে চায়। চালক নামতে না চাইলে তারা পিস্তল দেখিয়ে নামতে বাধ্য করে ও টাকা নিয়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় তারা পিকাপের চাবি ও তাদের মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। যাতে তারা বিষয়টি কাউকে জানাতে না পারেন। পরে মালিক পক্ষ মতিহার থানায় মামলা দায়ের করেন। বড় ছিনতাইয়ের ঘটনাতেও এখনো গ্রেফতার হয়নি কেউ।
মতিহার থানা পুলিশ মামলাটির জট খুলতে না পারায় নগর গোয়েন্দা শাখায় স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে নগর গোয়েন্দা পুলিশের ওসি হুমায়ন কবির। সেখানেও মামলার কোন অগ্রগতি হয়নি।
ওসি হুমায়ন কবির বলেন, মামলা তদন্তে কোন অগ্রগতি হয়নি। ওই অবস্থাতেই রয়েছে।

 

 

এ ঘটনার পর থেকে নগরবাসীর মধ্যে ডিবি পুলিশ আতঙ্ক ঢুকে যায়। প্রকাশ্যে এসব ছিনতাই হলেও পুলিশ এদের ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে।
সূত্রে আরো জানা গেছে, গত ২০১৬ সালের ২২ আগষ্ট নগরীর সিপাইপাড়া থেকে সরকারী স্কুলের শিক্ষিকার ডিবি পুলিশ পরিচয়ে টাকা ও স্বর্ণালংকার ছিনতাই করে নেওয়া হয়।
গত ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর ফেরদৌসি বেগম রানিবাজার জনতা ব্যাংক শাখা থেকে ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা নিয়ে যাচ্ছিল। পথে টাকাগুলো ছিনতাই করে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে। গত আগষ্ট মাসে নগরীর কোর্ট স্টেশন এলাকা থেকে শফিকুল ইসলাম নামের এক যুবকের কাছ থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মোটরসাইকেল ও মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে যায়।

 

গত ২০ ফেব্রুয়ারীতে বায়া দুই সতীনের মোড় এলাকা থেকে হালিম নামের এক যুবকের কাছ থেকে ডিবি পরিচয়ে মোটরসাইকেল ও টাকা এবং মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
উপরে উল্লেখিত, প্রত্যেকটি ছিনতাইয়ের পর তারা থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু কোন অভিযোগেরই কুল-কিনারা হয়নি বলে সূত্রটি জানায়।
ছিনতাইকারীরা ডিবি পুলিশের পরিচয়ে ছিনতাই করার সময় ডিবির জ্যাকেট, হ্যান্ডকাপ এমনকি অস্ত্রও ব্যবহার করেছে। ছিনতাইকারীরা অস্ত্র পেলেও ডিবির জ্যাকেট এবং হ্যান্ডকাপ রাজশাহীতে খুব সহজেই পাওয়া সম্ভব নয়। এগুলো রাজধানীতে সহজলভ্য হতে পারে কিন্তু রাজশাহীতে পুলিশের পোশাক বা অন্যান্য জিনিসপত্র কেনার কোন দোকানও আজ পর্যন্ত গড়ে উঠেনি। যা কিছু আনতে হয় তা ঢাকা থেকেই।

 

অন্যদিকে নগরীর আব্দুল্লাহ নামের এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশের পোশাক ছিনতাইকারীদের কাছে কোথা থেকে আসছে? তারা এসব পোশাক পাচ্ছে কোথায়? আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নামে এসব কি হচ্ছে? সবকিছু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। শুনেছি কেউ গ্রেফতার হয়নি। দ্রুত তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
সাহেব বাজারের আরেক ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, পুলিশের নামে ছিনতাই অহরহ হচ্ছে। কোন ছিনতাইয়ের সাথে জড়িতরা গ্রেফতার হচ্ছে না। তাহলে কি তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে? এদের গ্রেফতারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যদি তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব না হয় তাহলে আইনশৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়বে। মানুষ পুলিশের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলবে।

 

 

ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে একজন নাম না প্রকাশের শর্তে অভিযোগ করে জানিয়েছিলেন, আমরা যে ব্যাংক টাকা উত্তোলন করছি বা রাখছি। এটা কিভাবে ছিনতাইকারীরা জানতে পারে? কারণ টাকার বিষয়টিতো গোপন থাকার কথা। তাহলে কি এর সাথে ব্যাংকের লোকও কি জড়িত? বিষয়টি তদন্ত করে দেখা দরকার। কারণ এরকম চলতে থাকলে নগরবাসী নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়বে। যার দায়ভার পুলিশকেই নিতে হবে।
ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারে তেমন অগ্রগতি দেখাতে পারছেনা পুলিশ। আগা গোড়ায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে এসব বেপরোয়া ছিনতাইকারীরা।

 

নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি আমান উল্লাহ বলেন, ডিবি পরিচয়দানকারী ছিনতাইকারীর ছবি পাওয়া গেলেও পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। মামলার কোন অগ্রগতি নেই। তবে তাদের ধরতে চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) তানভীর হায়দার চৌধুরী ওই সময় বলেছিলেন, ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহার করা ডিবি পুলিশের জ্যাকেট ও হনন্ডকাপ রাজশাহী থেকে নয় বাইরে থেকেও আনা হতে পারে। সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে ছিনতাইয়ের ঘটনায় যদি কোন পুলিশ সদস্যও জড়িত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে কোন রকম ছাড় দেওয়া হবে না।

 

ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে। অপরাধ করে কেউ ছাড় পাবে না। আর ডিবি পুলিশ কখনো চেকপোস্ট করেনা। পুলিশের পোশাকধারীরাই চেকপোস্ট করে। এ ব্যাপারে নগরবাসীকে সাবধান থাকতে হবে। যারা ছিনতাই করছে তারা প্রতারক চক্র। এ ছাড়া যারা পুলিশের ইউনিফর্ম তৈরি করে তাদের উপর নজর রাখা হচ্ছে বলে তিনি সেসময় দাবি করেন।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।