খবর২৪ঘন্টা ডেস্ক : রাজনীতির রং পাল্টায়, ক্ষমতার সিংহাসন বদলায়, কিন্তু ছায়ার মতো অপরিবর্তিত থাকে চরিত্র। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে আমরা দেখে আসছি, যে দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দল দখলদারি ও প্রভাব বিস্তারের খেলায় নামে। যখন সরকার বদলায়, তখন শুধু খেলোয়াড় বদলায়—খেলার নিয়ম একই থাকে।
৫ আগস্টের পর থেকে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজির জায়গা অনেক ক্ষেত্রে বিএনপি, জামায়াত বা নতুন শক্তিগুলো দখল নিচ্ছে। আগে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশের সাহায্যে প্রভাব বিস্তার করতেন, এখন বিএনপির কেউ কেউ থানাকে নিজেদের ‘কাস্টমার কেয়ার’ বানাতে চাইছেন। এই রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন হচ্ছে কি? নাকি শুধু বাহ্যিক পরিবর্তন ঘটছে?
সম্প্রতি এক বিএনপি নেতা মাইকে ঘোষণা দিয়েছেন—‘পুলিশ কাউকে ধরতে হলে আমাদের অনুমতি নিতে হবে, না হলে থানা ঘেরাও করবো।’ এটি শুধুই একটি বিচ্ছিন্ন বক্তব্য নয়; এটি সেই ক্ষমতাচর্চার প্রতিচ্ছবি, যেখানে রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা নিজেদের শাসকের আসনে বসাতে চায়।
অন্যদিকে, আরেক বিএনপি নেতা ঘোষণা দেন, ‘স্বৈরাচার যে সম্পদ ভোগ করত, এখন সেটা আমাদের নেতা-কর্মীরা ভোগ করবেন।’ এই বক্তব্য যেন একসময়ের ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের চুরির বৈধতা দেওয়ার ঘোষণার প্রতিধ্বনি।
প্রশ্ন হলো—এটাই কি নতুন দিনের রাজনীতি?
ক্ষমতার পালাবদলে চাঁদাবাজি বা দখলদারির অধিকার কোনো দলের একচেটিয়া নয়। একসময় যাঁরা প্রতিরোধের প্রতীক ছিলেন, তাঁরাই এখন দখলদারের ভূমিকায় নেমেছেন।
শ্রীপুরে এক বিএনপি নেতা হুমকি দিয়েছেন, স্থানীয় বাজার তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
যশোরের এক বিদ্যালয়ের জমি দখল করে বিএনপির কার্যালয় বানানোর অভিযোগ উঠেছে।
নতুন সরকার আসার পর স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতার দখল নিয়ে সংঘাত তৈরি হচ্ছে।
বিএনপি অবশ্য দাবি করছে, তারা চাঁদাবাজি ও দখলদারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিন হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে, যা ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে প্রশ্ন হলো, এই সংস্কৃতি পুরোপুরি বন্ধ করতে দলীয় নেতৃত্ব কতটা কঠোর হবে?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের দাবি নতুন নয়। কিন্তু প্রতিবার ক্ষমতার হাতবদলের পর দেখা যায়, নতুন শাসক পুরোনো শাসকের মতো আচরণ করছে। আওয়ামী লীগের আমলে যে থানাগুলো দলীয় অফিসের মতো ব্যবহার হতো, এখন বিএনপির কিছু নেতা সেটাকে নিজেদের ‘কাস্টমার কেয়ার’ বানাতে চাচ্ছেন।
এই চক্র কবে ভাঙবে? ক্ষমতা কী কেবল লুটপাটের জন্য দখল করা হয়? জনগণ কি শুধু দর্শক হয়ে থাকবে?
এবারের পরিবর্তন যদি শুধু ক্ষমতার পালাবদল হয়, তবে জনগণের প্রত্যাশা সত্যি ভেঙে যাবে। জনগণ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে শুধু ক্ষমতার পালাবদল নয়, নীতি ও সংস্কৃতির পরিবর্তন চায়। নতুন সরকার গঠনের পর মানুষ চেয়েছিল, একটি ন্যায্য, স্বচ্ছ ও নীতিনিষ্ঠ শাসনব্যবস্থা। কিন্তু যদি অতীতের অনৈতিক চর্চা আবারও ফিরে আসে, তাহলে মানুষের আশা হতাশায় রূপ নেবে।
রাজনীতির এই চক্র যদি না ভাঙে, তবে একদল যায়, আরেক দল আসে—কিন্তু জনগণের ভাগ্য একই থাকে।
লেখক : ডেপুটি ম্যানেজার, ডিএসএম, আরটিভি
বিএ..
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।