খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক: উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দেশে আরেকটি বড় ধরনের রাজনৈতিক মেরুকরণ আসছে। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ভোট হবে। কিন্তু তাতে ধানের শীষ থাকবে না। বিএনপি গতকাল ঘোষণা দিয়েছে শুধু উপজেলা না, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র নির্বাচন এবং সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনেও অংশ নেবে না। নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এখন একটা উভয় সংকট অবস্থা। বিএনপিকে ভোটে যাওয়ার যেকোনো পরামর্শকে তারা সন্দেহের চোখে দেখবে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোটি টাকা দামের প্রশ্ন হলো বিএনপির সামনে বিকল্পগুলো কি।
সরকারের সামনে বিকল্প প্রত্যেকটি নির্বাচনে অংশ নেয়া। কিন্তু সেখানেও জটিলতা আছে। তার কারণ মহাজোটের শরিকরা আর আগের অবস্থানে নেই। ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন শুধু বিএনপিকে নয়, প্রায় একইভাবে তাদেরও ফতুর বা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে। কারণ তারা বুঝে গেছে, মহাজোটের সঙ্গে থাকা মানে আগামী নির্বাচনে সংসদ সদস্যপদ থাকবে কি-থাকবে না, সেই বিষয়ে দোলাচলে থাকা।
এমনকি প্রতিটি দলের পরিচিতি সংকট তীব্রতা পেয়েছে। সুতরাং মহাজোটের শরিকরা সবাই চাইবে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া। জাতীয় পার্টির যন্ত্রণা কেউ দেখছে না। জানে শুধু দলটির নেতারা। তারা সংসদে আরো আসন পেতেন। তারা মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন। সংসদে আসন খুইয়েছেন। এখন উপজেলা নিবার্চনে তারা নিজের মতো লড়তে চান। কিন্তু সবুজ সংকেত মিলছে না। তার মানে এই নির্বাচনেও একটি দলের প্রার্থীদের নিরঙ্কুশ জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হবে।
পর্যবেক্ষকদের অনেকে বলছেন, ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে এতটা হৈ চৈ সেকি বিএনপি সরকার গঠন করতে পারেনি বলে নাকি খুব বেশি কম আসন পেয়েছে বলেই। শতাধিক আসন পেলেই কি ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন শুদ্ধ হতো। বিএনপির কাছে গ্রহণযোগ্য হতো? উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি যেত? বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেতেন? তারেক রহমানের দীর্ঘ অপ্রত্যাশিত প্রবাস জীবনের অবসান ঘটতো?
সতর্ক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এর সবগুলো প্রশ্নের উত্তর হা বা না দিয়ে কোনোটাই হয়তো বলা যায় না, কিন্তু শতাধিক আসন পেলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতো। বিএনপি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারতো। কিন্তু সেটা যে হলো না, সেটার উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আদায়ে বিএনপির সামনে কি করণীয়?
কারো মতে সরকারি দল খুশি। কারণ বিএনপির সামনে বয়কট ছাড়া গতি নেই। একজন বাদে সবাই হেরেছেন। তারা কেউ ওই একজনকে আরো বড় নেতা বানাতে সংসদকে ব্যবহার করতে দেবেন না। সে কারণে তারা সংসদ বয়কট জায়েজ করতে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচন বয়কট করায় সরকারি দল লজ্জিত বা বিব্রত হবে বলে যারা ভাবছেন তারা ভ্রান্ত। কেউ বলছেন, সমুদ্রে পেতেছি শয্যা শিশিরে কি ভয়?
বিএনপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি যারা অনুসরণ করেন তারা বিভক্ত এবং বিভ্রান্ত। কারো মতে, এরশাদের অধীনে কোনো একটি নির্বাচনে না গিয়ে বেগম খালেদা জিয়া আপসহীন নেত্রী হয়েছিলেন। বিএনপিকে যে ব্যক্তি ক্ষমতাচ্যুত করেছিল, তার পতন ঘটিয়ে তবেই বেগম খালেদা জিয়া ঘরে ফিরেছিলেন। কিন্তু অনেকেই মানেন যে, সেই রামও নেই, সেই অযোধ্যাও নেই।
আপসহীন নেতা হবেন কে? খালেদা জিয়া, নাকি তারেক রহমান, নাকি মির্জা ফখরুল? তাই অনেকে বলছেন, বয়কট সম্ভবত একমাত্র বিকল্প ছিল না। নির্বাচনগুলো ধারাবাহিকভাবে বর্জন করার অর্থ হবে, স্থানীয় বিএনপির সক্রিয় নেতা-কর্মীরা আরো বেকার ও হতাশ হয়ে পড়বেন। তার কারণ প্রতিটি নির্বাচন কিছু রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর সুযোগ দেবে। বয়কট করলে সেটা সংকুচিত থাকবে। তৎপরতা চালানোর অর্থ অবশ্যই বলা যাবে বৈধতা দেয়া। কিন্তু বিপরীত ক্রমে কে নিশ্চয়তা দেবেন, বর্জন মানেই অবৈধ হয়ে যাওয়া।
অপ্রিয় হলেও প্রমাণিত যে, আন্তর্জাতিক মহল ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে নানা প্রশ্ন তুললেও নির্দিষ্টভাবে কেউ এ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি বা তারেক রহমানের নির্বাসিত জীবন নিয়ে টু শব্দটি উচ্চারণ করেননি। বাংলাদেশের গণমাধ্যম থেকে খালেদা জিয়ার জামিন প্রসঙ্গ প্রায় হারিয়ে গেছে। সব নির্বাচন বয়কটের রাজনীতি এ ধরনের এজেন্ডাকে চাঙ্গা করবে, বুকে হাত রেখে সেটা কে বলবে? নির্বাচনগুলোতে গিয়ে হেরে গেলেই বা কি হবে, সেই প্রশ্ন রেখেও অনেকে মনে করেন যে, বাংলাদেশে রাজনীতির যে রূপটি চিরচেনা সেটা হারিয়ে গেছে।
৫ ধাপে এবারে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মার্চ মাসের প্রথমার্ধ থেকেই উপজেলা নির্বাচন ধাপে ধাপে অনুষ্ঠানের কথা। ৪৯২টি উপজেলা পরিষদের মধ্যে অন্তত ৪৬০টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে। বগুড়ার ৭টি উপজেলার ৩টিতে জামায়াত ও ৪টিতে বিএনপি থাকার যে বাস্তবতা সেটা কি সহজেই মুছতে দেয়া ঠিক হবে? মানবজমিন
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন