সবার আগে.সর্বশেষ  
ঢাকাবুধবার , ৬ জুন ২০১৮
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বিশ্বকাপ ফুটবলে মাসকটের ইতিকথা

R khan
জুন ৬, ২০১৮ ২:২২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

খবর২৪ ঘণ্টা, স্পোর্টস, ডেস্কবিশ্বের বুকে ১৯৩০ সাল থেকে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ শুরু হলেও মাসকট প্রথা শুরু হয় ১৯৬৬ সাল থেকে। সে বছর বিশ্বকাপের আয়োজক ছিলো ইংল্যান্ড। সে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের ঐতিহ্য সংক্রান্ত মাসকট প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকেই সব আয়োজক দেশ তাদের এমন একটি মাসকট তৈরি করে যার মাধ্যমে সে দেশের বৈশিষ্ট্য, পরিচ্ছদ, উদ্ভিদকূল, প্রাণিকূল ইত্যাদি তুলে ধরা হয়।

১৯৬৬ সাল থেকে মাসকট প্রথা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিটি বিশ্বকাপেই দেখা গেছে একে। উইলি হলো ইতিহাসের প্রথম মাসকট। প্রাণোচ্ছল, উদ্দীপ্ত এক প্রতীকী প্রাণী যা পুরো অনুষ্ঠান বা প্রতিযোগিতা জুড়েই মাতিয়ে রেখেছে পুরো বিশ্ববাসীকে।

মাসকট হতে পারে কোনো প্রাণী বা কোনো ব্যক্তি বা এমন কিছু যা স্বাগতিকদের জন্য সৌভাগ্যদায়ক। এটি হতে পারে কোনো কাল্পনিক চরিত্র বা বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্য যা সকলের দৃষ্টি কেড়ে নেবে। অনেক সময় না বলা প্রতিবাদ বা আখ্যানও তুলে ধরা হয় এই মাসকটের মাধ্যমে। রংবেরঙের অনেক পরিচ্ছদ ও যেকোনো তাৎপর্যপূর্ণ নাম মাসকটের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

১৯৬৬ বিশ্বকাপ মাসকট উইলি:
বিশ্বকাপ উইলি নামের এই মাসকটকে যুক্তরাজ্যের প্রতীক হিসেবে তৈরি করা হয়েছিলো। যার পরনে ছিলো ইউনিয়ন পতাকার জার্সি। এই মাসকটটির ডিজাইনার ছিলেন প্রখ্যাত ফ্রিল্যান্স শিশুতোষ বইয়ের চিত্রশিল্পী রেগ হোয়ে। সিংহের এই মাসকটটি ১৯৬৬ সালের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের অফিসিয়াল মাসকট ছিল তা অদ্যাবধি তৈরিকৃত মাসকটগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা বলে গণ্য করা হয়।

১৯৭০ বিশ্বকাপ মাসকট জুয়ানিতো:
১৯৭০ এর মেক্সিকো বিশ্বকাপের অফিসিয়াল লোগোটির নাম ছিল ‘জুয়ানিতো’। মেক্সিকান ঐতিহ্যবাহী সবুজ জামা ও মেক্সিকান ‘সম্ব্রেরো ক্যাপ’ পরিহিত একটি বালক এই জুয়ানিতো। এই নামটি মেক্সিকোর খুব সাধারণ একটি নাম। আর তাই এই মাসকটকে সাধারণ মানুষের প্রতীক বলা হয়।

১৯৭৪ বিশ্বকাপ মাসকট টিপ অ্যান্ড টপ:
১৯৭৪ সালে আয়োজক পশ্চিম জার্মানির বিশ্বকাপের মাসকটে আগের দুই বারের থেকে কিছুটা নতুনত্ব ছিলো। একের বদলে এখানে ছিল দুইটি ১৯৭৮

বিশ্বকাপ মাসকট গাউছিতো:

১৯৭৮ সালের আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের মাসকটের নাম ছিল ‘গাউছিতো’। এই মাসকটটিও ছিল একটি বালক। আর্জেন্টিনা দলের জার্সি পরিহিত এই বালকের গায়ের জার্সিতে লেখা ছিল ‘আর্জেন্টিনা ৭৮’। এই বালকের গলায় বাঁধা ছিল একটা রুমাল আর হাতে ছিল একটি চাবুক। এটি আর্জেন্টিনার ঐতিহ্যবাহী এক ধরনের চাবুক। যা আর্জেন্টিনার ঐতিহ্য বহন করে। একটি ফুটবলের উপর পা দিয়ে দাঁড়ানো বালকের এই মাসকটটি বেশ জনপ্রিয় হয়।

১৯৮২ বিশ্বকাপ মাসকট নারানজিতো:
স্পেনের প্রচলিত ফল কমলা। আর এই কমলাকেই বানিয়ে ফেলা হয় মাসকট। স্পেনের জাতীয় দলের জার্সি পরিহিত মাসকটটি ছিল ১৯৮২ সালের। এর নাম ছিল ‘নারানজিত’। এই নামটি এসেছে স্প্যানিশ শব্দ নারাঞ্জা থেকে যার বাংলা অর্থ কমলা।

১৯৮৬ বিশ্বকাপ মাসকট পিকে:
১৯৮৬ সালে দ্বিতীয়বার মেক্সিকো ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজন করে। সেবারের মাসকটটির নাম ছিল ‘পিকে’। এটি একটি বিশালাকার মরিচ। যা মেক্সিকোর সর্বাধিক পরিচিত একটি ফসল। এই নামটি নেওয়া হয়েছিল স্প্যানিশ শব্দ ‘পিকেন্তি’ থেকে পিকে যার অর্থ খুব ঝাল এক ধরনের মরিচ।

১৯৯০ বিশ্বকাপ মাসকট সিয়াও:
ইতালিতে অনুষ্ঠিত এই বিশ্বকাপের মাসকটটি তৈরি হয় কতগুল লাঠি খণ্ডকে মানুষের অবয়ব দিয়ে। প্রতিটি লাঠিখণ্ড ইতালির পতাকার রঙে রঞ্জিত ছিল। মানব আকৃতির এই ফুটবল খেলোয়াড়ের মাথা হিসেবে ব্যবহার করা হয় একটি ফুটবল। এই মাসকটটির নাম দেওয়া হয়েছিলো ‘সিয়াও’। ইতালিয় ভাষায় ‘বিশেষ সম্ভাষণ’ হিসেবে সিয়াও ডাকা হয়।

১৯৯৪ বিশ্বকাপ মাসকট স্ট্রিকার:
১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপের মাসকট ছিল স্ট্রিকার নামে কুকুর। লাল, সাদা এবং নীল রঙের জার্সি পরিহিত এই মাসকটের জামায় লেখা ছিল ‘ইউএসএ ৯৪’। এই মাসকটের পুরো নাম ছিলো ‘স্ট্রাইকার, দ্য ওয়ার্ল্ড কাপ পাপ’। আমেরিকাতে সবচেয়ে বেশি পোষা প্রাণী কুকুর, স্ট্রাইকার তারই প্রতীক হিসেবে এসেছিলো।

১৯৯৮ বিশ্বকাপ মাসকট ফটিক্স:
১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপের মাসকট ছিল ‘ফটিক্স’। ফ্রান্সের প্রচলিত ‘গার্লিক রোস্টার’ এর আদলে তৈরি এই মাসকটটি ছিল এ যাবতকালের সবচেয়ে কালারফুল মাসকট। নীল রঙের শরীর বিশিষ্ট এই মাসকটের লাল রঙের মাথায় হলুদ ঠোঁট একে বিশেষত্ব দান করে। এর বুকে গাঢ় নীল রঙের একটি ব্যানারে সাদা রঙে লেখা ছিল ‘ফ্রান্স ৯৮’।

২০০২ বিশ্বকাপ মাসকট স্পেরিক্স:
কমলা, বেগুনি এবং নীল রঙের তিনটি কম্পিউটার গ্রাফিক্সের দ্বারা তৈরি ভিন্ন ভিন্ন প্রাণীর মতো আকৃতি নিয়ে তৈরি হয় ২০০২ বিশ্বকাপের মাসকট ‘দ্য স্পেরিক্স’। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত এই বিশ্বকাপে মাসকট এ যাবতকালের সবচেয়ে নিম্নমানের ও সমালোচিত মাসকট হিসেবে বিবেচিত হয়।

২০০৬ বিশ্বকাপ মাসকট গোলেও ভি:
‘গোলেও ভি পিল’ নামক জার্মান বিশ্বকাপের এই মাসকট এর আগের পাঁচ বিশ্বকাপের মধ্যে ফিফার অফিসিয়াল ওয়েব সাইটে প্রদত্ত ভোটে সেরা নির্বাচিত হয়। সিংহের গায়ে জার্মান দলের জার্সি পরিহিত এই মাসকট ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

২০১০ বিশ্বকাপ মাসকট জাকুমি:
দক্ষিণ আফ্রিকার এই বিশ্বকাপের মাসকটের নাম ছিল ‘জাকুমি’। এই নামের মধ্যে জা- দক্ষিণ আফ্রিকা ও কুমি-আফ্রিকার অনেক আঞ্চলিক ভাষায় দশ সংখ্যা বোঝায়। এর সবুজ এবং সোনালি রঙ দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় ফুটবল দলের জার্সির রঙকে বহন করে।

২০১৪ বিশ্বকাপ মাসকট ফুলেকো দ্য আরমাদিল্লো:
ব্রাজিলের এক প্রকার ঐতিহ্যবাহী প্রাণীকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ মাসকট। যার নাম দেওয়া হয় ‘ফুলেকো দ্য আরমাদিল্লো’। এই মাসকট এর দ্বারা ব্রাজিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই মাসকটের পরনে ছিলো সাদা রঙের একটি টিশার্ট যার গায়ে লেখা ছিলো ‘ব্রাজিল ২০১৪।

২০১৮ বিশ্বকাপ মাসকট জাভিভাকা:
২০১৮ বিশ্বকাপের মাসকট হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছে জাভিভাকা নামের একটি নেকড়েকে। আয়োজক দেশ রাশিয়ার একটি পরিচিত প্রাণী এটি। রাশিয়ান ভাষায় জাভিভাকা শব্দের অর্থ-যে গোল করে। ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার ওয়েবসাইটে এ মাসকটকে আকর্ষণীয়, আত্মবিশ্বাসী ও সামাজিক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যে একজন তারকা ফুটবলার হয়ে উঠতে চায়।

খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ 

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।