সবার আগে.সর্বশেষ  
ঢাকাবুধবার , ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বিএনপি দুর্নীতিকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

R khan
ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৮ ৮:৫২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

খবর২৪ঘণ্টা.কম, ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, যারা দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদেরকে কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেয়া হবেনা। যারাই এসবে জড়িত থাক শাস্তি তাকে পেতেই হবে। আমার দলের লোকও যদি দুর্নীতিতে জড়িত হয় তাকেও শাস্তি পেতে হবে।

বুধবার দশম জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এসময় শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদকে আমরা কোনোভাবে প্রশ্রয় দেবো না। আজকে বিএনপি নেত্রীর সাজা হয়েছে। এই মামলা করেছিলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে বিদেশ থেকে টাকা আসে কিন্তু সেই টাকা এতিমরা পায়নি। সেই টাকা তিনি (খালেদা জিয়া) আত্মসাৎ করেছেন।

বিএনপি মামলার আসামিকে দলের নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছে বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার রায় বের হওয়ার আগেই বিএনপি দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে দুর্নীতিবাজদের পদে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে। এর মানে দুর্নীতিকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে তারা। তিনি আরো বলেন, যারা গঠনতন্ত্রে দুর্নীতিকে আশ্রয় দেয় আর দুর্নীতিবাজকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করে, তারা জনগণের জন্য কী কাজ করবে? তারা লুটপাট করতে পারবে। মানুষ খুন করতে পারবে। দুর্নীতি করতে পারবে কিন্তু মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারবে না।

বিএনপি নেত্রী কারাগারে যাবেন এটা আগেই টের পেয়ে গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করছে কিনা- সেই প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, একজন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাজাপ্রাপ্ত আরেকজনকে দায়িত্ব দিলো, তিনি আবার দেশেও থাকেন না, পলাতক। দেশের ভেতর বিএনপিতে কি একজন লোকও নেই, যে তাকে দায়িত্ব দেয়া যায়? অবশ্য বিএনপির প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই তো দুর্নীতির মামলা রয়েছে। এই যদি রাজনৈতিক দলের অবস্থা হয়। তাহলে সেই দল দেশকে কী দেবে?

খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলার রায় প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে এতিমদের জন্য টাকা এসেছিল। সেই অরফানেজটা কোথায়? ২৭ বছর আগে টাকা এসেছে। সেই টাকা নয়-ছয় করেছে। তখনকার আমলে ২ কোটি টাকার মূল্য কত ছিল? ওই টাকায় তখন ধানমন্ডিতে ১০/১২টা ফ্ল্যাট কেনা যেতো। তারা দুই কোটি টাকার লোভ সামলাতে পারলো না। এতিমদের সাহায্য না করে সেই টাকা আত্মসাৎ করলো। আর এখানে আমাদের দোষ কোথায়? এটা খুঁজে দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর মামলা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ১০ বছর ধরে এই মামলা চলেছে। তারপর শাস্তি হয়েছে। সাজা দিয়েছেন তো কোর্ট। এখানে সরকারের কিছু করার নেই। এই টাকা এতিমদের মধ্যে বিলিয়ে দিলে তো এটা হতো না।

দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে দাবি করে সংসদ নেতা বলেন, দুর্নীতিকে আমরা প্রশ্রয় দিতে চাই না। আমাদের এমপি-মন্ত্রী কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তাদের (দুদকের) যদি সন্দেহ হয়, তাহলে তাদের ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারে। আমরা কোনও হস্তক্ষেপ করি না, করবো না। কারো দুর্নীতি প্রমাণ হলে যে সাজা পারে কোর্ট আদেশ দিলে আমাদের মন্ত্রীরা সেখানে গিয়ে হাজির হচ্ছে।

বিচারের রায় নিয়ে বিএনপির কোনও কোনও নেতা হুমকি দিচ্ছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, চোরকে চোর বলিও না, দুর্নীতিবাজকে দুর্নীতিবাজ বলিও না। এটাই শিক্ষা হবে বাংলাদেশে? আমরা বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের প্রক্রিয়া চলছে : এদিকে প্রশ্নোত্তর পর্বে বঙ্গবন্ধুর খুনি এবং দন্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের জন্য চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যাকারী যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধী ও রাজাকারদের কোনো সম্পত্তি স্বাধীন দেশে থাকতে পারে না, রাখার কোনো অধিকার নেই।’ বঙ্গবন্ধুর খুনি এবং দন্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের নামে-বেনামে থাকা সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রথম ধাপ হিসেবে তাদের সম্পত্তি চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে চায় সরকার : আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে চায় সরকার। পাশাপাশি মিয়ানমার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে কূটনৈতিক উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে চুক্তি স্বাক্ষর হলেও এতে সময় লাগার কথাও বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যে কোনো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া জটিল ও দীর্ঘ মেয়াদী। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চার মাসের মধ্যে তিনটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে শিগগিরই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।

বিদ্যুতের ক্ষমতা ক্যাপটিভসহ ১৬ হাজার ৪৬ মেগাওয়াটে উন্নীত : আলী আজমের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় তিন গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ক্যাপটিভসহ ১৬ হাজার ৪৬ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে নিবিড় তদারকির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ১৪ হাজার ৪১৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৫৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালু হবে। এছাড়া আরো ২০ হাজার ৭৩২ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, ৪ হাজার ৫৬৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালু হবে।

ইলিশের আশাতীত উৎপাদন : শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ইলিশের আশাতীত উৎপাদনের ফলে বর্তমানে উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯৬ হাজার মে. টনে যা মোট উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ। তিনি বলেন, জাটকা আহরণ নিষিদ্ধকরা ছাড়াও গত অর্থবছরে মা ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালীন ২২ দিনের জন্য পরিবার প্রতি ২০ কেজি হারে মোট ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৭২৩টি পরিবারকে মোট ৭ হাজার ১৩৪ মে. টন ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।