বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কালিদাসখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রুহুল আমিন এক ছাত্রকে ধষর্ণের (বলৎকার) চেষ্টার অভিযোগে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। শনিবার(০৮-১২-১৮) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজার উপস্থিতিতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ওই শিক্ষককে সাময়িক বহিস্কার করেন।সকাল থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাববকরা পরীক্ষা বর্জন করে। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বহিস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এ সময় বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির লোকজন একত্রিত হয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাববকদের উপর হামলা করে।
এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। এ ঘটনায় মনিরুল ইসলাম ও হাবিল উদ্দিন নামের দুইজন অভিভাবক আহত হয়েছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তবে ঘটনার দেড় ঘন্টা পর পুলিশ মোতায়েক করে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এ বিষয় নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা চলছে। যে কোন সময় আবার সহিংসতার ঘটনা ঘটকে পারে। তবে এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গত বুধবার (৫ ডিসেম্বর) ছাত্রের বড় ভাই বাদি হয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।
জানা যায়, বাঘা উপজেলার কাদিলাদসখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রুহুল আমিন একই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রকে (১৩) গত মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ বিশ্ব ও পরিচয় বিষয়ের পরীক্ষা শেষে শিক্ষকের বাড়ি ডেকে নিয়ে যায়। তাকে পরীক্ষার নম্বর বেশি দেয়ার নাম করে ধর্ষণ (বলৎকার) করার চেষ্টা করে। এ সময় তার কাছে থেকে ছুটে নিজ বাড়িতে চলে আসে এবং ঘটনাটি তার বাড়িতে জানায়। এ বিষয়ে পরের দিন বুধবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে স্কুলের সহপাঠি কয়েকজন বন্ধু ও অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষককে জানাতে যায় এবং ওই শিক্ষককের বিচার দাবি করে। উল্টো স্কুলের শিক্ষকরা তার স্কুলের বন্ধুদের মারপিট করে এবং অভিভাবকদের লাঞ্চিত করে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তপ্ত হলে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
সহকারি শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, এসএসসি টেষ্ট পরীক্ষার ফলাফল তৈরী করার জন্য প্রধান শিক্ষক আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এই পরীক্ষায় তিন বিষয়ের অধিক ৩৪ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়। তাদের কৃতকার্য না করায় তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা গুজব প্রচার করে মানসম্মান ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটা উদ্দ্যেশ্য প্রনোদিত। আমি দোষী হলে অপরাধ মাথা পেতে নিব। তদন্ত না করে অভিভাবকদের তোপের মুখে আমাকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক রবিন্দ্রনাথ প্রামানিক বলেন, বুঝে উঠার আগেই দলবদ্ধভাবে কিছু অভিভাবক ও শিক্ষার্থী পরীক্ষা বর্জন করে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বহিস্কারের দাবিকে শ্লোগান দিতে থাকে এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও তাদের শান্ত করতে পারছিলেন না। পরিস্থিতি নিয়স্ত্রণহীন হয়ে যাচ্ছিল। ফলে ওই শিক্ষককে সাময়িক বহিস্কার করে পরিবেশ শান্ত করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় দেড় ঘন্টা পর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহন করা হয়েছে।
কালিদাসখালী উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আক্কাছ আলী বলেন, এই ঘটনায় পরিস্থিত উত্তপ্ত হচ্ছিল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি ওই শিক্ষককে বহিস্কার করে পরিবেশ শান্ত করা হয়েছে।
বাঘা থানার ওসি মহসীন আলী বলেন, কালিদাসখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে বিঙ্খলা হচ্ছে মর্মে, ফোন দেন প্রধান শিক্ষক। আমরা সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনা হয়।
বাঘা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আরিফুর ইসলাম বলেন, পূনরায় ঘটনা জানার পর ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। শিক্ষককে সাময়িকভাবে বহিস্কার করেছে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি।
বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্কুলে গিয়েছিলাম। সেখানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বহিস্কারের দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকে এবং বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় আমার উপস্থিতিতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ওই শিক্ষককে সাময়িক বহিস্কার করেন।
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন