ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০
আজকের সর্বশেষ সবখবর

“পুলিশ সকল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু”

অনলাইন ভার্সন
ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২০ ৮:০০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

মোঃ মোস্তফা হারুন বরেন্দী: বাংলাদেশের জনগন আর কিছু না চিনলেও একবাক্যে থানা ও পুলিশকে নিয়ে চিনতে দেরি হয়না।পুলিশ ও থানা জনগণের আশা আকাংখার প্রথম একটি ধাপ বলা চলে।মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু অবদি থানা ও পুলিশকে প্রয়োজন হবেই।তাই পুলিশ জনগনের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী ও ভাল বন্ধু।জনগণ পুলিশের নিকট অনেক অনেক বেশি প্রত্যাশা করে থাকে।জনগণের প্রত্যাশা পুলিশ পুরুন করতে পারছে কিনা সেটাই দেখার বিষয় এবং ভাবার বিষয়।

আজ জনগণের প্রত্যাশা পুরুনে পুলিশের ভুমিকা নিয়ে কিছু আলোচনা করতে চাই।আমার লিখা সম্পুর্ন না পড়ে আগেই পুলিশকে নিয়ে নেগেটিভ কথা ভাববেন না।পড়ার পর আপনারা আপনাদের মতামত তুলে ধরুন।

পুলিশে অনেক পদবীর অফিসার আছেন।যত বড় পদবীর অফিসার হউক না কেন তারা কিন্তু সরাসরি জনগণের সংগে সম্পৃক্ত নয়।একমাত্র জুনিয়র লেবেলে থানার অফিসার ও কনস্টেবলগনই জনগণের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত।উপরওয়ালা পুলিশ অফিসার নিম্ন পদস্থ অফিসারদের নিয়ন্ত্রণকারী ও দিকনির্দেশক এবং নীতিনির্ধারক ছাড়া কিছুই নয়।
থানা পুলিশের সুযোগ আছে সরাসরি জনগণের সেবা করার যা উপরওয়ালা অফিসারের নেই।

থানার অফিসার দিনরাত জনগণের,সন্ত্রাসীদের,ভাল মানুষের ও
খারাপ মানুষের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।পক্ষান্তরে উপরওয়ালাদের সেই সুযোগ থাকেনা।তাদেরকে সবসময়ই বডিগার্ড, ড্রাইভার, প্রটেকশনের ভিতরই থাকতে হয়।অথচ যাদেরকে সরাসরি জীবনের আশংকা নিয়ে কাজ করতে হয় তাদের কিন্তু বডিগার্ড ও প্রটেকশনের প্রয়োজন হয়ই না।

এখন আমি সরাসরি বিশ্লেষণের দিকে যাই।
একটি মানুষ তার সুখের সময় কিন্তু পুলিশকে তেমন প্রয়োজন হয় না।প্রয়োজন হয় তখনই যখন মানুষ বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ে।মানুষের বিপদ হলেই ছুটে যায় পুলিশের কাছে সাহায্যে সহযোগিতার আশায়।তাই বলে মনে করবেন না কিন্তু জনগণ অর্থনৈতিক সহযোগিতা পাবার আশায় পুলিশের কাছে কখনোই আসে।

তারা আসেন উপকার পাবার আশায়।

আইনে অর্থাৎ পুথিগত বিদ্যায় পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো,
★উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কতৃর্ক সকল প্রকার বৈধ পরোয়ানা জারী ও দ্রুত কার্যকরী করা
★সর্বসাধারণের শান্তি রক্ষা সম্পর্কিত সংবাদ সংগ্রহ ও যথাস্থানে রিপোর্টদান করা।
★কোন অপরাধ সংগঠিত হতে দেখলে অপরাধ প্রতিরোধ বা নিবারণ করা।
★সর্বসাধারণের রিরক্তিকর কার্য অর্থাৎ পাবলিক ন্যুইসেন্স নিবারণ করা।
★অপরাধের বৃত্তান্ত অনুসন্ধান বা উৎঘাটন করা।
★অপরাধীকে বিচারার্থে আদালতে সোপর্দ করা।
★আইনসঙ্গত ভাবে গ্রেফতারযোগ্য সকল ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা।

যাহা পুলিশ আইনের ২৩ ধারা ও পি আর বি ১১৭,১১৮,২০৮ বিধিতে উল্লেখ আছে।
পুলিশের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনেক৷কিন্তু সেই প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা না পেলে মানুষ অসন্তুষ্ট হয়৷

এরপরও অবশ্য বিপদে আপদে মানুষ পুলিশের কাছেই ছুটে যায়৷তবে পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে৷পুলিশকে জনবান্ধব করার জন্য পুলিশ সদর দপ্তর এখন নিয়মিত প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকে৷ মানবাধিকারের বিষয় নিয়েও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
★পুলিশের কাজ কি?

অপরাধ দমন এবং তদন্তই পুলিশের প্রধান কাজ৷আর এ কাজ করতে গিয়ে পুলিশকে মামলা গ্রহণ,মামলার তদন্ত,আসামি গ্রেপ্তার, মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল এবং বিচার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে হয়৷পুলিশের অভিযোগপত্রের উপরই মামলার বিচারের ফল বহুলাংশে নির্ভর করে৷আদালতে যদি তদন্ত অনুযায়ী সাক্ষী-প্রমাণ হাজির করা না যায় তাহলে মামলা প্রমাণ এবং অপরাধীকে শাস্তি দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাই বিচার ব্যবস্থার সাফল্য পুলিশের সাফল্যের উপরও নির্ভর করে শতভাগ।

এই প্রধান কাজগুলোর বাইরে পুলিশকে আগাম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে অপরাধ প্রতিরোধে কাজ করতে হয়৷দেশে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে নিরাপত্তাসহ ভি আই পি,ভি ভি আই পিদের প্রোটেকশনসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রোটেকশন দিতে ব্যাস্ত থাকতে হয় এবং

নানা ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে পুলিশের বড় একটি জনশক্তি ব্যস্ত থাকে৷যার কারণেও অল্প সংখ্যক পুলিশ জনগণের সেবার জন্য নিয়োজিত থাকে। আইন প্রয়োগের চেয়ে আইন অমান্যকারীদের নিবৃত্ত করতেই পুলিশকে অনেক শক্তি খরচ করতে হয়৷এর বাইরে উচ্চপদস্থদের প্রটোকল,জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার(কে পি আই)নিরাপত্তার কাজেও ব্যস্ত থাকতে হয় পুলিশকে৷

পুলিশের কোন সদস্য যদি কেউ অপরাধ করে,সেটা তাদের ব্যক্তিগত দায়৷এর দায় গোটা পুলিশ বাহিনী নিতে পারেনা৷একমাত্র অপরাধী পুলিশ সদস্যদের এই দায়ভার নিতে হয়।পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো অনৈতিক কাজের ও জনগণকে সাহায্য না করার অভিযোগ থাকলে পুলিশ সদর দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট ইউনিটের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার কাছে অপরাধী সেই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার ব্যবস্থা আছে৷অভিযোগ তদন্ত করে প্রমাণ হলে অপরাধী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার ব্যবস্থা,এমনকি ফৌজদারি মামলা দায়ের করার ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়৷

পুলিশ রাষ্ট্রের অপরিহার্য একটি অঙ্গ। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান তাদের প্রধান দায়িত্ব।তাই জনগণের প্রত্যাশা পুলিশের কাছে সংগতই,যে তারা দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনকে মূলনীতি হিসেবে অনুসরণ করবে।দেখার থাকে আমাদের দেশে এই প্রতিষ্ঠানটি তাদের দায়িত্ব পালনে কতটা কার্যকর ভূমিকায় আছে।মনে রাখা জরুরী যে,১৬ কোটি লোকের ঘনবসতিপূর্ণ এ দেশটির শাসনকাজ দুরূহ ব্যাপার।এখানে প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু অপরাধ ঘটতেই পারে।আর তা ঘটছেও।

জনগণের বড় সংশয় পুলিশের কিছু সদস্য ক্রমবর্ধমান হারে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার সংবাদে।প্রায় সব সংস্থাতেই অসৎ লোক আছে।তবে পুলিশ একটি অস্ত্রধারী সুশৃঙ্খল বাহিনী।জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হলে তা মোকাবিলায় পুলিশকেই অগ্রভাগে থাকতে হয়।কারও জানমাল বিপন্ন হলে ছুটে যেতে হয় তাদের কাছে।বিপদগ্রস্ত সাধারণ জনগন পুলিশকে বন্ধু আর সজ্জন হিসেবে পেতে চায়।
পুলিশ কি সাধারণ জনতার সজ্জন ও বন্ধু হতে পেরেছে?

আম জনতা আইনের শাসন চায়।আইনের দ্বারা গঠিত পুলিশ যথাযথ ভাবে আইন প্রয়োগ করবে,এটাই তাদের চাওয়া পাওয়া।কিন্তু অনেক সময় পুলিশকে সেই গণ্ডির বাইরে গিয়েও কাজ করতে দেখা যায়।কিন্তু পুলিশ আইনের বাইরে গিয়ে বেআইনি কোন পদক্ষেপ নিতে পারে না।পুলিশ যখন আইনের নিয়ম ভেংগে বেআইনি ভাবে কোন পদক্ষেপ নেয় ঠিক তখনই সমগ্র পুলিশ বাহিনী সমালোচনার মুখোমুখি হয়ে পড়ে ও আলোচনা সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে।

জনগণের ওপর পুলিশের কর্তৃত্ববাদী হওয়ার সুযোগ নেই।পুলিশ নিয়ে মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণা জন্মানোর জন্য পুলিশকেই আগে জনবান্ধন পুলিশ হিসেবে প্রমান করতে হয়।জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পুলিশের বেতন-ভাতা দেওয়া হয় এটা ধ্রুব সত্য কথা।তাই অন্য কারো নয় জনগণের সেবা দেওয়াই পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে মন্তব্য করেছিলেন পুলিশের এক সাবেক মহা পুলিশ পরিদর্শক।তিনি আরও বলেছিলেন মানুষের মধ্যে এখন পুলিশভীতি ও পুলিশের অপরাধভীতি কাজ করছে,আর এটা হয়েছে জনগণের সঙ্গে পুলিশের দূরত্ব বেড়ে যাওয়ার কারণে।

যে কোনো দেশের জন্য সভ্যতা ও সুশাসনের প্রতীক পুলিশ।কোনো কোনো দেশে পুলিশকে রাষ্ট্রের দর্পণ বলা হয়। পুলিশের আচরণের সঙ্গে দেশের সুনাম ও মর্যাদা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।পুলিশ ছাড়া একদিন,এক ঘণ্টাও কোন রাষ্ট্র চলবে না,চলতে পারেনা।যে যত বেশি অপরিহার্য,যার গুরুত্ব ও ক্ষমতা যত বেশি,তার প্রতি মানুষের দৃষ্টি এবং প্রত্যাশাও বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। পুলিশ অনেক ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভালো কাজ করছে,তাদের সাফল্য কম নয়।

তা না হলে এতদিন রাস্ট্র অকার্যকর হয়ে যেতো। অন্যায়,আইন ভঙ্গ,দুর্বৃত্ত,দুর্বৃত্তায়ন কম-বেশি সব দেশেই আছে,সে যত উন্নত ও সভ্য দেশই হোক না কেন।কিন্তু বিচার্য বিষয় হলো পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা কতখানি,পুলিশ কতটুকু জনবান্ধব। ভেবে দেখতে হবে পুলিশের সাক্ষাতে মানুষের মনে ভয়ের সৃষ্টি হয়,নাকি সাহসের সৃষ্টি হয়।পুলিশের একটি থানা বা ফাঁড়ি দায়িত্ব হওয়া উচিত যে কোনো অসহায় মানুষের সর্বোত্কৃষ্ট নিরাপদ জায়গা ও আশা ভরসার স্থল।

১৬ কোটি মানুষের দেশে জনগণের আস্থা ব্যতিরেকে পুলিশের পক্ষে সময়ের চাহিদা মোতাবেক মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব হয়ে উঠেনা।নৈতিক মনোবল নিয়ে কাজ করা প্রায় দুঃসাধ্য।সুতরাং পুলিশের রিক্রুটমেন্ট পদ্ধতি ও নীতিমালার আমূল সংস্কারও অতি প্রয়োজন।পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দৃঢ়তার পরিচয় দিলে এটা করা অসম্ভব নয়।সরকারের সদিচ্ছা, সমর্থন এবং সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলে প্রক্রিয়া বের করা কোনো কঠিন কাজ নয়।বিকল্প থানা বিকল্প টিমেই ডুবছে পুলিশ।পুলিশের সোর্সের অপেশাদারি এবং অপব্যবহারের কথা নিয়েও জনগণের মাঝে প্রশ্ন আছে।পুলিশের সোর্স থাকবে অতি গোপনে।

পুলিশের সোর্স সম্পর্কেও স্বচ্ছতা,জবাবদিহিতা থাকা জরুরী।কোন অপরাধী যেনো সোর্স হিসেবে আত্বপ্রকাশ ঘটাতে না পারে সেজন্য সজাগ হওয়া উচিৎ।সোর্সের পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়লে তার মূল্য জিরো হয়ে যায়।অথচ দেখা যাচ্ছে সোর্স বিকল্প পুলিশ হয়ে যাচ্ছে এবং পুলিশের থেকেও ক্ষমতাবান।সাব ইন্সপেক্টরের চেয়ে নৌকার মাঝির দাপট সব সময় বেশি হয়ে থাকে।এটা বন্ধ করা জরুরি।পুলিশের কার্যক্রমের মূল কেন্দ্র হচ্ছে থানা।

আধুনিক উন্নতমানের প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে থানার ভিতরের কার্যক্রম সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা সম্ভব।থানার বাইরে পুলিশের কার্যকারিতা ও আচরণ তদারকির জন্য কাউন্টার পদ্ধতির উদ্ভাবন ও প্রচলন করা দরকার।দুর্বৃত্ত এবং সমাজের টাউট-বাটপার নানা ছদ্মবেশে পুলিশের ভালো আচরণের সুযোগে উল্টো কাজ করার চেষ্টা করতে পারে।এখানেও পুলিশের প্রশিক্ষণ, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের পরীক্ষা।

আর প্রতিষ্ঠানের গতানুগতিক সংস্কৃতির বিষয়টি এমন যে, তার থেকে বের হয়ে নতুনভাবে সময়োপযোগী হওয়া অত্যন্ত কঠিন কাজ। খারাপ সংস্কৃতি সংক্রামক ব্যাধির মতো কাজ করে।পুলিশের মধ্যেও নৈতিকভাবে সৎ ও আত্মবিশ্বাসী সদস্য আছে।কিন্তু তারা কিছু সংখ্যক প্রতিষ্ঠিত সংস্কৃতির বাইরে এসে তেমন কিছু করছে না বা করতে পারছেনা বা করার সুযোগ পাচ্ছেনা।আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বাস্তবতার কারণেই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ পুলিশের দ্বারা তদন্তে মানুষ পরিপূর্ণ আস্থা রাখতে পারছে না।একটি প্রচলিত কথা প্রচারিত হয়ে আসছে জনমনে অনেক আগে থেকেই, সেটা হলো

“মাছের রাজা ইলিশ আর দেশের রাজা পুলিশ”এটা একটি ভয়ংকর উক্তি।
কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা কর্তৃক নিরীহ ও নিরপরাধ নাগরিকদের হয়রানি,মামলায় জড়িত করার ভয় ও ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দিয়ে অর্থ আদায়ের চেষ্টা ইত্যাদির জন্য পুলিশ বাহিনীর সুনাম নষ্ট হচ্ছে,আর পুলিশের ওপর মানুষের আস্থাও অনেক হ্রাস পেয়ে যাচ্ছে।অথচ ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন’ কথাটি প্রচলিত হয়েছিল পুলিশ বাহিনীর লক্ষ্য ও কাজের কথা বোঝানোর জন্যই।

আমাদের পুলিশ বাহিনীতে সৎ দক্ষ ও কর্মনিষ্ঠ সদস্যের অভাব নেই এটা আমরা জানি।সাধারণ মানুষের ভাবনা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদেরকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছেনা বলেও প্রশ্ন উঠে। যাদের ভেতরে আল্লাহ-ভীতি কাজ করে, তারা কোনোদিনই পেশাগত জীবনে অসৎ হতে পারেন না।অথচ, পুলিশ বাহিনীর এরকম সদস্যদেরকে কম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয় বলেও সমালোচনা শোনা যায়।

আর অভিযুক্ত সদস্যদের পক্ষ সমর্থন বা তাদের অপরাধ ভুক্তভোগীদের দ্বারা বর্ণিত অপরাধ থেকে হালকা করে দেখানোর প্রবণতা সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করতে হবে।তাহলেই পুলিশ পুনরায় জনগণের জন্য ভীতির কারণ না হয়ে জনগণের বন্ধু হতে পারবে।
বিগত বছর গুলিতে পুলিশ বাহিনীর এক শ্রেণির সদস্যদের বাড়াবাড়ি,অনৈতিক ও বেআইনী কর্মকান্ডের ফলে কতিপয় পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উচ্চপর্যায়ের অফিসারদের কাছে এসেছিল এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থাও নেয়া হয়েছে।

জনগণের প্রত্যাশা,জনগণের সেবক ও বন্ধু হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের জন্য পুলিশ বাহিনী থেকে দুর্নীতি নামক মহামারী নির্মূল করা উচিৎ।কেননা, পুলিশের সাহায্য ছাড়া দেশে অপরাধ দমন কোন মতেই সম্ভব নয়।তাই পুলিশ কর্মকর্তা দ্বারা সংগঠিত বে-আইনি কর্মকান্ড সাধারণ জনগণের কাছে অস্বাভাবিক ও অপ্রত্যাশিত মনে হতে পারে।সাধারণত জনতা পুলিশ বাহিনীকে দুর্নীতি মুক্ত একটি বাহিনী হিসেবে দেখতে চায়,দুর্নীতি মুক্তদের যথাযথ মূল্যায়ন করাও দেখতে চায়।ইতিমধ্যেই অনেক অসৎ অফিসারদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যাবস্থা নিয়েছেন এবং অব্যাহত আছে।

বিপদগ্রস্ত ব্যাক্তি যখন পুলিশের কাছে সাহায্য ও সহযোগিতা পাবার আশায় ছুটে আসে তখনই অনেক বিপত্তি ও বাধা এসে তাদেরকে প্রথমেই একটি ধাক্কা দেয়।তা কেমন ভাবে এখন সেদিকে যাই।

যখন কোন বিপদগ্রস্ত ব্যাক্তি সহযোগিতার আশায় থানায় ছুটে যায় ওসির কাছে,তখন প্রথমেই তাকে থানার সেন্ট্রির মুখোমুখি হতে হয়।সেন্ট্রির কাছে তাকে তার প্রত্যাশার কথা ব্যাখ্যা করতেই একটি মুল্যবান সময় নস্ট হয়ে যায়।এরপরে সে দেখিয়ে দেয় ডিউটি অফিসারকে,ডিউটি অফিসারের কাছে তাকে আরেক দফা জবাবদিহি করতে হয়।ডিউটি অফিসার সংগত মনে করলে আগত ব্যাক্তিকে ওসির সামনে নেয়া হয় নচেৎ ওসির দেখা পাওয়া আমাবস্যার চাদের মতোই তার কাছে মনে হয়।

এটা জনগণের কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়।তাদের প্রত্যাশা তারা তাদের সমস্যা নিয়ে জায়গায় জায়গায় ব্যাখ্যা না দিয়ে সরাসরি ওসির কাছেই ব্যাখ্যা দিতে চায়।এই নিয়মের বত্যায় হলে তারা অভিযোগ জানাতে উৎসাহ উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলে এবং তখনই পুলিশ সম্পর্কে প্রথম নেতিবাচক মনোভাব জন্ম নেয়।তাই জনসাধারণ থানায় এসে যার সাথে সাক্ষাৎ লাভের আশা করে,পুলিশের উচিৎ হবে তাকে আশাহত না করে সরাসরি সেই অফিসারের সাথেই সাক্ষাৎ লাভের সুযোগ করে দেয়া এবং তার মনের অভিব্যক্তি প্রকাশের সুযোগ দেয়া।

ওসি ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগন একটি গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট হোল্ড করে থাকেন এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।তাই তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ ম্যানেজার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতে হয়।ম্যানেজার মানেই হলো সব কিছুই নিয়মতান্ত্রিকভাবে আইননুসারে ম্যানেজ করা বা গুরুত্বের সাথে দ্রুত ব্যাবস্থা নেয়া।

একজন পদস্থ নেগেটিভ মাইন্ডের পুলিশ ম্যনেজার কেমন হয়ে থাকেন সেই সম্পর্কে কিছু পয়েন্ট উল্লেখ করতে চাই।
★তিনি কারো সাথে ক্রেডিট বা সফলতা শেয়ার করেন না বা করতে চান না এবং টিম

স্পিরিট বাড়ানো নিয়ে তিনি কখনোই আগ্রহী হন না।
★সহযোগী অফিসার ও কনস্টেবলদের (কর্মিদের) স্বীকৃতি দিতে চান না এবং কারো ভালো কাজের জন্য তাকে স্বীকৃতি দিতে আগ্রহী হন না, কারণ মেজাজ দেখাতে এবং বকাবকি করেই অভ্যস্থ হন তারা এবং এতেই তিনি মনে করেন অনেক বড় কিছু করছেন।
★দলাদলি করতে খুব পারদর্শি থাকেন তিনি, সবাইকে নিয়ে এক সাথে কাজ করতে খুব কমই আগ্রহী হন তিনি।ভিন্ন মতাদর্শের সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না।

★তিনি সহজে কাউকে বিশ্বাস করেন না এবং কারো প্রতি নুন্যতম বিশ্বাস তিনি রাখতে পারেন না,সবসময় মনে করেন তিনিই সবচাইতে যোগ্য এবং তার ধারে কাছেও কেউ নেই।
★তিনি পক্ষ অবলম্বন করতে ভালবাসেন। সবসময় একপক্ষে থাকেন তিনি,নিরেপেক্ষ হয়ে কিছু করতে তাকে সাধারণত দেখা যায় না।

★তিনি পরিষ্কার কোন দিক নির্দেরশনা দিতে পারেন না এবং ক্লিয়ার করে কথা বলেন না তার নিচের সহকর্মীদের কাছে। যারা কাজ করে তাদের কাছে তিনি অর্ধেক কথা সবসময় মনের মধ্যে রেখে দেন যাতে করে পরে তাদেরকে বকা দেয়া বা দোষ দেয়া সহজ হয়।

★যখন কোন কিছুর সমাধান হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয় বা লম্বা আলোচনার প্রয়োজন হয় তখন তিনি তা থেকে নিরপদ দূরত্ব বজায় রাখেন বা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।দায়ভার অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন।

★উনি সবসময় বলতে আগ্রহী,কমান্ড করতে আগ্রহী। অন্য কারো কথা শুনতে বা কাউকে বলতে দিতে আগ্রহী হন না।কারণ তাতে তার নিজেকে জাহির করার সুযোগ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

★তিনি সাধারণ জনগন ও তার সহকর্মীদের সাথে হাসতে পারেন না সবসময় রাগ দেখাতেই তিনি অভ্যস্থ এবং নিজেকে জাহির করতে পছন্দ করেন।★তিনি নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন।সবসময় নিজে দায়িত্ব না পালন করে,অধিনস্থ কাউকে দিয়ে করিয়ে নেন এবং সব সময় এভাবেই অন্যের ক্রেডিট বা সফলতা নিয়ে নিজের নামে চালিয়ে দেন।

এই সব আচরণের কারণে তিনি একজন ব্যার্থ ম্যানেজার হিসেবে নিজেকে মনের অজান্তে আত্বপ্রকাশ ঘটিয়ে থাকেন এবং সকলের কাছে অপ্রীয় ব্যাক্তি বা বস হয়ে উঠেন।তার এমন সিদ্ধান্ত পুলিশ সদস্যদের ও জনমনেও বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
সব কিছু থেকেই শিক্ষা নিয়ে একজন ভাল জনবান্ধন,জনপ্রিয় পুলিশ সদস্য হিসেবে আত্বপ্রকাশ ঘটানো প্রতিটি পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব।জনগন যেন পুলিশকে আস্থার প্রতিক হিসেবে ভাবার অবকাশ পায় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।

মোঃ মোস্তফা হারুন বরেন্দী, সিনিঃ সহকারী পুলিশ সুপার

“কাহিনীটি মোঃ মোস্তফা হারুনের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেয়া”.

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।