ঢাকামঙ্গলবার , ১০ ডিসেম্বর ২০১৯
আজকের সর্বশেষ সবখবর

নস্টালজিয়াঃ মায়ার বাধন -১৪

অনলাইন ভার্সন
ডিসেম্বর ১০, ২০১৯ ৯:২২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

মোঃ মোস্তফা হারুন বরেন্দী: স্মৃতিপটে দুজনাকে নিয়ে আলোচনা না করলেই নয়।সেই দুই শ্রদ্ধেয় মানব মানবী আর কেউ নয়।দাদা এবং দাদী।বাবার কাছে তাদের সম্পর্কে যা জানার জেনেছি।দাদীকে জীবিত পেয়ে কিছু নিজেই দেখেছি। দাদা সাব- রেজিস্ট্রি অফিসে চাকুরী করতেন।আমাদের মুল গ্রামের বাড়ী ছিলো বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার গ্রামে।বাবার মুখে শুনতাম,বিহার গ্রামে তখন বেশির ভাগ লোকই দুস্ট প্রকৃতির ছিলো। দাদা মনে করেছিলেন ছেলেমেয়েদের ওখানে রাখলে মানুষ হবেনা।ছেলেমেয়ে খারাপ সংগ পেয়ে খারাপ হয়ে যেতে পারে।

তাই দাদা সিদ্ধান্ত নিলেন সেখানে থাকবেন না। তাই তিনি বগুড়া শহরে কাটনার পাড়ায় জায়গা কিনা মাটির ঘড় তুলে নুতন আবাস তৈরি করলেন।তখনকার দিনে বগুড়ায় অধিকাংশ বাড়ীই ছিল মাটির তৈরি। অনেকটা বলা যায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। গরমের দিনেও ঘরগুলো ঠান্ডা থাকতো।দাদা অল্প বয়েসেই দাদীকে বিয়ে করেন।দাদী ছিলেন,মহাসুন্দরী বলতে যা বোঝায়। যেমন গায়ের রঙ, তেমনই চোখ ঝাঝালো রুপ।বৃদ্ধা বয়সেও তার রুপের ঘাটতি ছিলো না। ঐ মহল্লায় এত সুন্দরী মহিলা আর কেউ ছিলো না।

দাদার দৈহিক গড়ন ছিলো অত্যন্ত সুঠাম ও দীর্ঘদেহি, হ্যান্ডসাম একটি সুপুরুষ। যে দৈহিক গড়ন পেয়েছিলেন আমার বাবা। বাবারা তিন ভাইয়ের ভিতর অসম্ভব মিল ছিলো এবং পরস্পরের প্রতি সন্মানবোধ ছিলো। তাদের ভিতর কখনো কোনদিনই ঝগড়াঝাটি করতে দেখিনি। দাদা দাদীর ছেলেমেয়েরা হলো ৫ মেয়ে ৩ ছেলে।৫ মেয়ের ভিতর এক মেয়ে ছোটকালেই মারা যায়। দাদা নিজেও খুব অল্প বয়েসেই মারা গিয়েছিলেন।মৃত্যু কালে দাদা বিত্ত্ব বৈভব রেখে যেতে পারেননি।তিনি অতি সাধারণ জীবনযাপন করতেন।

তাই দাদার মৃত্যুর পর সংসারে নেমে আসে দঃখের কালো মেঘ।তাই বাবাদের জীবটাই ছিল বেচে থাকার জীবনযুদ্ধ ও সংগ্রাম। এই যুদ্ধের প্রধান সেনাপতির ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন দাদী নিজেই।দাদীর সংগ্রামী জীবন সফল হয়েছিলো। তিনি বেচে থাকতে দেখে গিয়েছিলেন ছেলেমেয়েদের সফলতা। কিন্তু মৃত্যুর আগ প্রযন্ত কারো গলগ্রহ হয়ে ছিলেন না। দাদার মৃত্যু সম্পর্কে বাবার কাছে যে কাহিনী কমবেশি জানতে পেরেছিলাম তা তুলে ধরছি। দাদার ৫ ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলো। একদিন এই পাচ বন্ধু মিলে সারিয়াকান্দি এলাকায় বেড়াতে যান।বেড়াতে গিয়ে সবারই একসময় পেশাব পেয়ে বসে।

বন্ধুদের ভিতর একজন দুস্টমী করে অদুরে থাকা একটি কালি মন্দিরে গিয়ে পেশাব করেন, উনাকে অনুসরণ করে সবাই কালী মন্দিরে গিয়ে পেশাব করেন, দাদাও বাদ ছিলেন না। তারা সারিয়াকান্দী থেকে ফিরে আসেন। পরদিন দাদা খবর পান দাদার যে বন্ধুটি প্রথম কালিমন্দিরে পেশাব করেছিলেন তার কালা জ্বর হয়েছে।কোন চিকিৎসায় তার জ্বর ভাল হয়নি। অবশেষে ৭ দিন পর সে মারা যান। তারপর ২য় বন্ধু একইভাবে জ্বরে আক্রান্ত হন এবং তিনিও মারা যান।এভাবেই চার বন্ধু মারা যান।

বাকি থাকে দাদা। প্রত্যেকেই ৭ দিন করে জ্বরে ভোগার পর দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। এবার হঠাৎ দাদা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়লেন আগামী বৃহস্পতিবার হবে ৭ দিন।তাই দাদা জ্বরের ঘোড়ে ছেলেমেয়েদের ডেকে বললেন,আমি বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার ট্রনে চলে যাবো। পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অসুস্থতা ক্রমে ক্রমে বেড়েই চললো।কোন চিকিৎসাতেই কিছু হলো না। বৃহস্পতিবার ঠিক সকাল ১০ টায় দাদা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কি একটা অদ্ভুত ব্যাপার পেশাব করার ঘটনায় পাচ বন্ধুকে এক সপ্তাহ পরপর দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হলো।

দাদা যখন মারা যান,তখন দাদার বয়স ছিলো মাত্র ৪০ বছর। ছেলেমেয়েরা সবাই ছোট কেবল লিখাপড়া করছে।বাবার বয়স ৫/৬ বছর ছিলো। বড় জ্যাঠা একটু উপযুক্ত ছিলেন।দাদা মারা যাবার পর সরকারি ভাবে দাদার স্থলে বড় জ্যাঠার চাকুরী হলে তিনি সংসারের হাল ধরনের। কিন্তু এত অল্প বেতনে ভাইবোনের লিখাপড়া ভরনপোষণ ইত্যাদি চালাতে হিমশিম খেয়ে যান।কোনোমতেই সামলাতে পারছেন না। দাদী তখন সুন্দরী যুবতী। ইচ্ছা করলেই তিনি আরেকটা বিয়ে করে নুতন জীবন শুরু করতে পারতেন।

মেয়েরা বোধ অত্যান্ত ধৈর্যশীল হয়,ছেলেরা হলে কিন্তু বিয়ে করে ফেলতো। দাদী বিয়ে না করে বরং বাড়ীর বাইরে গিয়ে পরিশ্রম করে আয় করতেন এবং সন্তানদের মানুষ করার জন্য আপ্রান চেষ্টা করেন।ভাইদের ভিতর লিখাপড়ায় বাবা অত্যান্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন।সেসময় তিনি অসুস্থ শরীরে পরীক্ষা দিয়ে মেট্রিক পাশ করার পর ছোটখাটো চাকুরী করতেন এবং লিখাপড়া চালিয়ে যেতে থাকেন।ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর তিনি প্রথমে একটি পাবলিক কোম্পানিতে চাকুরী নেন।বেতন পেতেন ২৫০/- -টাকা। সেসময় একজন জেলাপ্রশাসক এর বেতন ছিলো ২৫০/- -টাকা। এই বেতনে বেশ স্বচ্ছলতা ফিরে আসে।

তারপর বাবা বিয়ে করেন এবং ঢাকায় চলে যান। এরপরে বাবা সরকারি চাকুরী করার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করেন।তিনি মনে করতেন সরকারি চাকুরী না করলে সন্মান পাওয়া যায় না। তাই তিনি ব্যাংকের চাকুরীতে যোগদান করেন এবং বিভিন্ন ধরনের স্টাডিতে ব্যাস্ত থাকেন। চাকুরী করাবস্থায় তিনি গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেন।আরও অনেক চাকুরী হাতছানি দিয়েছিলো।কিন্তু দাদী চাকুরী পরিবর্তন করতে দেননি। তাই ব্যাংকের চাকুরীতেই বহাল থাকতে হয়েছিলো শেষ প্রযন্ত। (চলবে)

মোঃ মোস্তফা হারুন বরেন্দী, সিনিঃ সহকারী পুলিশ সুপার

“কাহিনীটি মোঃ মোস্তফা হারুনের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেয়া”.

 

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।