ঢাকাশনিবার , ৭ ডিসেম্বর ২০১৯
আজকের সর্বশেষ সবখবর

নস্টালজিয়াঃ মায়ার বাধন -১১

অনলাইন ভার্সন
ডিসেম্বর ৭, ২০১৯ ৮:২০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

মোঃ মোস্তফা হারুন বরেন্দী: বেলকুচিতে গিয়ে বাবা আমাদেরকে সোহাগপুর স্কুলে ভর্তি করে দিলেন।আমরা রীতিমতো ক্লাস করছিলাম।বিকাল বেলায় আমরা ভাইবোন এবং ডাক্তার সাহেবের মেয়ে লাইজু খেলাধুলা করতাম।ডাক্তার সাহেবের পরিবার এবং আমাদের পরিবারের রিলেশন গভীর থেকে গভীরতায় পৌঁছে যেতে লাগলো। ওবাড়ীতে কিছু ভাল রান্নাবান্না হলেই তা ডাক্তার সাহেবের ওয়াইফ আমাদের বাসায় চালান করে দিতেন এবং ঠিক আমাদের বাড়ীরটাও ওবাড়ীতে চালান হয়ে যেতো।

দু পরিবারের সন্তানদের মাঝে যেমন মিল মহব্বত গভীরে পৌঁছে গেলো, তেমনই ভাবে দু পরিবারের অভিভাবকদের মাঝেও সম্পর্ক তেমন মজবুত হয়ে গেলো। বেশ ভালই লাগছিলো বেলকুচিতে। আমাকে বেশি পছন্দ করতেন লাইজুর মা বাবা।তাই তারা আমার বাবা মাকে মশকরা করে বলতেন আপনার ছেলেকে আমরা জামাই বানাবো। এরপর থেকেই লাইজুর মা প্রায়ই জামাই বলে ডাকতেন।আমি খুব লজ্জা পেতাম। স্কুলেও লাইজু ও আমি একসাথে যেতাম,একসাথে খেলাধুলা করতাম। আমাদের বাসায় প্রায়ই সারাদিনই পড়ে থাকতো।

যেটাকে বলা যায় কিশোর কিশোরীর ভাললাগা আর কি। যাহোক, বেলকুচি এলাকায় ঘুরে কোথাও দোতালা বাড়ীর দেখা পেতাম না।ধনী গরীব সকলের বাড়ীই টিনশেডের, মেঝে পাকা।তবে গরীবদের বাসা মেঝে পাকা থাকতোনা। সে সময় বেলকুচির শ্রেষ্ঠ ধনীদের ভিতর ছিলেন ফয়জুল্লাহ খান,আলমাস কোম্পানি প্রমুখ।এরা সবাই ছিলেন বাবার ব্যাংকের ক্লাইন্ট। তাই প্রায়ই তাদের পদচারণা ঘটতো আমাদের বাসায়।আমাদেরকেও মাঝেমধ্যে তাদের বাসায় নিমন্ত্রণ করতেন। ফয়জুল্লাহ খানের ছেলে রেজাউল এস এস সি পাশ করার পর তার বাবার ব্যাবসায় সাহায্য করতো।

রেজাউল ভাই আমাদের বাড়ীতে মাঝেমধ্যে আসতো এবং তার সাথে মটর সাইকেলে ঘুরে বেড়াতাম। ফয়জুল্লাহ খান ও রেজাউল ভাই আমার বড় বোনকে পছন্দ করতেন।তিনি তার ছেলের সাথে আমার বড় বোনের বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বাবা একেবারে নাকচ করে দিয়েছিলেন। কারণ তাদের অর্থ বিত্ত থাকতে পারে কিন্তু শিক্ষাদীক্ষার অভাব। বেলকুচিতে বেশির ভাগ মানুষ তাতের কাপড় তৈরি করতো, সুতা এবং রংগের ব্যাবসা করতো। স্থানীয় ভাবে তাদেরকে জাওলা বলে ডাকা হতো।

বাবা বেশি পছন্দ করতেন আলমাস কোম্পানির আলমাস কাকাকে। তিনি আমাদের সন্তানের মত ভালবাসতেন। মাকে ভাবি ভাবি ডাকতেই অজ্ঞান।কাকীও আমাদের বাসায় প্রায়ই আসতেন।আর মায়ের হাতের গরুর মাংস রান্না খাওয়ার জন্য ঘুরে ঘুরে আসতেন এবং বলতেন ভাবির হাতের গরুর মাংস রান্নার ভিতর যাদু আছে।মায়ের মাংসের রান্নার প্রশংসা ছড়িয়ে পড়লো দ্রুত।বাবার বন্ধুরা প্রায়ই প্রোগ্রাম করে আসতো আমাদের বাসায় মায়ের হাতের রান্না খাবার জন্য। একবার বাবার শখ জাগলো বাড়ীতে ছাগল পালবেন।বাবা সোহাগপুর হাট থেকে একটি রামছাগলের বাচ্চা কিনে আনলেন।বেশ আদর যত্ন করে বড় করতে লাগলেন।ছাগলটাকে বাবার সাথে আমরাও বেশ যত্ন আত্বি করতাম।সবার আদরেই একদিন ছাগলটা অনেক বড় হয়ে গেলো।

ওজন ৩০/৩৫ কেজি হয়ে গেলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লো। পশু চিকিৎসক এসে চিকিৎসা দিয়ে ঔষধ দিয়ে বললেন ছাগলের পেটে অতিরিক্ত মেদ জমে যাবার কারণে পেশাব বন্ধ হয়ে গেছে।আরও বললেন, ঔষধে যদি কাজ না হয়,ছাগল মারা যেতে পারে।তাই ৭/৮ দিন দেখার পর যদি ভাল না হয়, তাহলে ছাগলকে জবাই করার জন্য। ৭/৮ দিন অপেক্ষা করার পর যখন দেখা গেলো সুস্থ হলো না।তখন বাধ্য হয়েই ছাগলকে জবাই করতে হলো। বাসার সবার মন খারাপ। ছাগলের মাংস আমরা কেউ খেতে পারলাম না অতিরিক্ত ভালবাসার কারনে।ছাগলের মাংস বিতরন করে দেয়া হলো।

একটি পশুর প্রতি এতো ভালবাসা জন্মাতে পারে তা জীবনে প্রথম অনুভব করলাম। (আমি যখন বড় হয়ে ২০০৬ সালে বেলকুচি থানার ওসি হিসেবে গিয়ে অনেক পরিবর্তন দেখতে পেলাম।)বেলকুচিতে থাকতে প্রায়ই আমরা বন্ধুদের সাথে চরে বেড়াতে যেতাম।২/৩ কিঃমিঃ চর অতিক্রম করে যমুনা নদীর কাছে চলে যেতাম।যমুনা নদীতে পা ভিজাতাম।মাছ মারার চেস্টা করতাম।বাবার অফিসের সেকেন্ড ম্যান সুভাষ কাকার বিয়েতে সুভাষ কাকা আমাদের স্বপরিবারে নিমন্ত্রণ করেছিলেন।

বাবা মাকে বেশ শ্রদ্ধা করতেন।তার অনুরোধে রাত জেগে বিয়ের অনুস্টান দেখেছি।হিন্দুদের বিয়ের রীতিনীতি দেখেছি।খুব ভাল লেগেছে,তবে খুব কঠিন নিয়মকানুন। তিনদিন তিনরাত ধরে বিয়ের উৎসব চলেছিলো। বিভিন্ন লাড্ডু,মিস্টান্ন,পুরি,লুচি,পাপড় ভাজা ইত্যাদি খাবার দিয়ে আপ্যায়নের ব্যাবস্থা করেছিলেন।জীবনে প্রথম হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়ের অনুস্টান উপভোগ করেছিলাম।সেই সুভাষ কাকা এজিএম হওয়ার পর অবসরে চলে যান এবং এখন শুনেছি মন্ডল গ্রুপে হিসাব বিভাগে চাকুরী করছেন,সুস্থভাবে বেচে আছেন। (চলবে)

মোঃ মোস্তফা হারুন বরেন্দী, সিনিঃ সহকারী পুলিশ সুপার

“কাহিনীটি মোঃ মোস্তফা হারুনের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেয়া”.

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।