ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২৪ জানুয়ারি ২০১৯
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবসের ৫০ বছর আজ

অনলাইন ভার্সন
জানুয়ারি ২৪, ২০১৯ ৭:০৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক: বাঙালি জাতির ঐতিহাসিক স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মাইলফলক ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান দিবসের ৫০ বছর আজ (২৪ জানুয়ারি)। ইতিহাসের এই দিনে মুক্তিকামী নিপীড়িত জনগণের পক্ষে জাতির মুক্তিসনদখ্যাত ছয়দফা ও পরবর্তীতে ছাত্র সমাজের দেয়া ১১ দফা কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে সংঘটিত হয়েছিল এ গণঅভ্যুত্থান। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে সশস্ত্র
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি একাত্তর সালে অর্জন করে মহান স্বাধীনতা।

প্রতি বছরের মতো এবারো দিবসটি পালন উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করছে। গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন।

বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের ফলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারসহ রাজবন্দিদের মুক্তি ও তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের ক্ষমতা হস্তান্তর ছিল বাঙ্গালির মুক্তি আন্দোলনে একটি মাইলফলক। এই গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরেই বাঙ্গালি স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার পেয়েছে।’ এ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করারও আহবান জানান রাষ্ট্রপতি।

প্রধানমন্ত্রী বাণীতে বলেন, ‘ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাঙালির মুক্তি সনদ ছয়দফা, পরবর্তীকালে ১১ দফা ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি মহান স্বাধীনতা। পেয়েছি স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ।’ তিনি শহীদ মতিউরসহ মুক্তি সংগ্রামের সব শহীদের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন।

আগরতলা মামলায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যৃদ- কার্যকরের সব ব্যবস্থাই করে ফেলেছিল পাকিস্তানের সামরিক একনায়ক আইয়ুব খান। জাগ্রত ছাত্র সমাজ তখন ফুঁসে উঠেছিল। ১৯৬৯ সালের ১৭ জানুয়ারি সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলে শোষিত মানুষের পক্ষে মুক্তিকামী ছাত্রসমাজ ১১ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে গণভ্যুত্থান সৃষ্টি করে। ঊনসত্তরের ২০ জানুয়ারি শহীদ আসাদের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে সারাদেশে আন্দোলনের আগুন জ্বলে উঠে।

জাতির পিতা ১৯৬৬ সালে ঔপনিবেশিক পাকিস্তানি শাসন, শোষণ ও বঞ্চনা থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে ঐতিহাসিক ছয়দফা ঘোষণা করেন। এতে স্বাধিকার আন্দোলনের গতি তীব্রতর হয়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আন্দোলনকে নস্যাৎ করার হীন উদ্দেশ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে বঙ্গবন্ধুকে বন্দি করে।

এ মামলার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা দুর্বার ও স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন গড়ে তোলে। পাকিস্তানি সামরিক শাসন উৎখাতের লক্ষ্যে ১৯৬৯ সালের এ দিনে সংগ্রামী জনতা শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়ন ও সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণে নিহত হন ঢাকার নবকুমার ইনস্টিটিউশনের নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান। প্রতিবাদে সংগ্রামী জনতা সেদিন সচিবালয়ের দেয়াল ভেঙ্গে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিক্ষুব্ধ জনগণ আইয়ুব-মোনায়েম চক্রের দালাল, মন্ত্রী, এমপিদের বাড়িতে এবং তাদের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত তখনকার দৈনিক পাকিস্তান ও পাকিস্তান অবজারভারে আগুন লাগিয়ে দেয়। জনগণ আইয়ুব গেটের নাম পরিবর্তন করে আসাদ গেট নামকরণ করে।

শহীদ আসাদের আত্মদানের পর ২১, ২২ ও ২৩ জানুয়ারি শোক পালনের মধ্য দিয়ে সবস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয় এই দিনে। সেদিন সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসার আগেই ক্ষুব্ধ জনতার উত্তাল সংগ্রামের মুখে গণঅভ্যুত্থান ঘটে। ’৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারির ঝলমলে শীতের সকালটি বাঙালির জীবনে অবিচল সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এক তাত্পর্যপূর্ণ মাইলফলক।

খবর২৪ঘণ্টা, জেএন

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।