খবর ২৪ ঘণ্টা ডেস্ক :
নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা ব্যক্তিদের সম্পর্কে কি পুলিশ বা গোয়েন্দা বিভাগ খোঁজখবর নিতে পারে? সেটি সরকারের স্বাভাবিক কার্যক্রমের আওতায় পড়ে। কিন্তু নিয়োগ পাওয়ার পর এ বিষয়ে অন্য কারও নাক গলানো উচিত নয়। বিষয়টি পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে। তাঁরা যাঁকে যোগ্য মনে করেছেন, তাঁকে নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়েছেন।বাংলাদেশ সংবিধানের ১২০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালনের জন্য যেরূপ কর্মচারীদের প্রয়োজন হইবে, নির্বাচন কমিশন অনুরোধ করিলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনকে সেইরূপ কর্মচারী প্রদানের ব্যবস্থা করিবেন।’এর অর্থ হলো নির্বাচন কমিশন যাঁকে নিয়োগ দেবে, তাঁকেই মেনে নিতে হবে। কিন্তু গত কয়েক দিন পত্রিকায় নির্বাচন কর্মকর্তাদের সম্পর্কে পুলিশ বিভাগ যেভাবে খোঁজখবর নিচ্ছে, তা শুধু এখতিয়ারবহির্ভূত নয়, বেআইনিও। সংশ্লিষ্টদের মনে রাখা প্রয়োজন, নির্বাচন কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছেন বিরোধী দলের তালিকা অনুযায়ী নয়; নির্বাচন কমিশনের পক্ষে রিটার্নিং কর্মকর্তারাই এই তালিকা তৈরি করেছেন, যাঁরা সদাশয় সরকারের মাঠপর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তাও। এখন নির্বাচন কর্মকর্তাদের সম্পর্কে পুলিশের খবরদারি করা রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা নির্বাচন কমিশনকে চ্যালেঞ্জ করার শামিল।
কয়েক দিন ধরে প্রথম আলোয় এ নিয়ে একাধিক খবর প্রকাশিত হলেও নির্বাচন কমিশন অনেকটা নির্বিকার। একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, কমিশন থেকে পুলিশ বিভাগকে এ রকম কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তাহলে পুলিশ কি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কাজটি করছে? যদি তারা তা করে থাকে, নির্বাচন কমিশনের উচিত এখনই বন্ধ করা। কিন্তু তারা সেসব না করে লুকোচুরি খেলছে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি কথা বেশ প্রচারিত আছে যে ক্ষমতাসীনেরা ধরে নিয়েছিলেন, বিরোধী দল, বিশেষ করে বিএনপি জোট নির্বাচনে আসবে না। এটা ধরে নিয়েই নির্বাচন কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। তাঁরা ভেবেছিলেন, এবারেও ২০১৪ সালের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন একটি নির্বাচন হবে। কে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকবেন, কে থাকবেন না, সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। নির্বাচন কর্মকর্তাদের ‘দেশপ্রেম’ বা দলপ্রেমের প্রশ্নটি তখনই সামনে আসে, যখন বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।
প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর থেকে জানা যায়, প্রায় সব জেলায়ই পুলিশ নির্বাচন কর্মকর্তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছে। আমাদের একজন সহকর্মী সম্প্রতি উত্তরাঞ্চলে গিয়েছিলেন ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে। তিনিও এসে জানালেন, নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ভয়ভীতিতে আছেন। পুলিশের লোকজন তাঁদের জিজ্ঞাসা করছেন, আপনি এর আগে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছিলেন কি না। আপনি কোনো রাজনৈতিক দলের বা ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে জড়িত কি না?
খুবই নিরীহ প্রশ্ন। এই নিরীহ প্রশ্নের আড়ালের সত্যটি হলো, আপনি ‘ক’ দলের সঙ্গে জড়িত থাকলে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু ‘খ’ দলের সঙ্গে জড়িত থাকলেই সমস্যা। এই পুলিশ কর্মকর্তারা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর না নিয়ে যদি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অফিসে খোঁজখবর নিতেন, আরও অনেক মজার তথ্য পেতেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব যখন আওয়ামী জোট শামিল হন কিংবা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বিএনপি জোটের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হন, তখন কারও ‘অতীত রাজনীতি’ নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া অর্থহীন।কোনো নির্বাচন কর্মকর্তা অতীতে ছাত্রলীগ বা ছাত্রদল করলে যে পরবর্তীকালে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান বদলাবেন না, সে কথা জোর দিয়েও বলা যায় না। এখন যেসব পুলিশ কর্মকর্তা অতি উৎসাহী হয়ে নির্বাচন কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাইছেন, তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় জানাটা আরও বেশি জরুরি বলে মনে করি। তাঁদের আচরণে মনে হয়, জন্মসূত্রেই ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই অতি উৎসাহীরাই যেকোনো সরকারকে ডুবানোর জন্য যথেষ্ট, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।সুত্র: প্রথম আলো
খবর ২৪ ঘণ্টা/এস