খবর২৪ঘণ্টা.কম, ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে ঘিরে ৮ ফেব্রুয়ারি দেশজুড়ে ছিল টানটান উত্তেজনা। রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি বিপুল লোকসমাগম করতে পারে, এমন আশঙ্কায় পুলিশ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল।
প্রায় ১০ দিন ধরে ব্যাপক ধরপাকড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। সতর্কতা হিসেবে পুলিশ ঢাকায় অঘোষিত কারফিউ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছিল সারাদেশ থেকে। ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে, হোটেলে, মেসে চিরুণি অভিযান চালিয়ে সব ধরনের বিক্ষোভের সম্ভাবনাকে শূন্যে নামিয়ে আনা হয়েছিল।
খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে ৮ ফেব্রুয়ারি সবার অজান্তে একটি বিশ্ব রেকর্ড হয়ে গেছে।
পুলিশের প্রস্তুতি দেখে আমার ধারণা হয়েছিল বিএনপির নেতাকর্মীরা বুঝি রাস্তায়ই নামতে পারবে না। কিন্তু আদালতের উদ্দেশ্যে বেগম জিয়ার গাড়িবহর মহাখালীর দিকে আসতেই ধীরে ধীরে স্মতস্ফূর্ত কর্মীরা বহরে যুক্ত হন। মগবাজারে আসতেই বেগম জিয়ার গাড়ির সামনে পেছনে হাজারো মানুষ। কিন্তু কাকরাইলে আসতেই পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
পুলিশ ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছিল। তাই বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়ি ঘিড়ে স্বতস্ফূর্ত মিছিল ছত্রভঙ্গ করাটাকে আইনী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা সঙ্গত মনে হতে পারে। আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত বিশেষ আদালত এলাকা বা নয়াপল্টন এলাকায় পুলিশের প্রস্তুতি দেখলে যে কারো মনে হতে পারে সত্যিই ঢাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে।
কিন্তু কষ্ট করে যদি আপনারা কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউ বা ধানমন্ডির ৩ এ সড়কে যেতে পারতেন, তাহলেই মনে হতো, এ যেন অন্য এক ঢাকা। আওয়ামী লীগ এবং এর বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতকর্মীরা উৎসবমুখর পরিবেশে নিজেদের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছে। তারা মিছিল করেছে।
শুধু বঙ্গবন্ধু এভিনিউ বা ধানমন্ডি নয়, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে ছিল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থান। রায়ের পর অনেক এলাকায় আওয়ামী লীগ আনন্দ মিছিলও করেছে। ঢাকা মমহানগর পুলিশ ৮ ফেব্রুয়ারি নিষিদ্ধের যে ঘোষণা দিয়েছিল তাতে কিন্তু বলা হয়নি, সরকার সমর্থকরা রাস্তায় থাকতে পারবে, বিরোধীরা পারবে না।
আওয়ামী লীগের নেতারা আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি পুলিশের পাশাপাশি তাদের নেতাকর্মীরাও রাস্তায় থাকবে। আমি ঠিক বুঝতে পারছি না, সভা-সমাবেশ-মিছিলের ব্যাপারে আমরা কোন অর্ডারটি ফলো করবো, পুলিশেরটা না আওয়ামী লীগ নেতাদেরটা?
কমনসেন্স যা বলে, তাতে সভা-সমাবেশের নিষেধাজ্ঞা সবার জন্য সমান হওয়ার কথা। আইনের অন্ধ হওয়ার কথা। চেহারা দেখে সে কাউকে ছাড়বে, কাউকে ধরবে, এমন হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বাংলাদেশে এখন যেন কিছুই ঠিক নেই। এখন বিএনপি মিছিল করতে পারবে না, আওয়ামী লীগ করতে পারবে।
খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে ৮ ফেব্রুয়ারি সবার অজান্তে একটি বিশ্ব রেকর্ড হয়ে গেছে। চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকরা এবং চাকরি রাজস্বখাতে স্থানান্তরের দাবিতে বাংলাদেশ কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার এসোসিয়েশন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন করে আসছিল।
এছাড়া বিভিন্ন পেশাজীবী কয়েকটি সংগঠনও অনশন বা অবস্থান ধর্মঘট পালন করছিল। নির্বাচনী বছরে এভাবে অনশন করে দাবি আদায় করার প্রবণতা নতুন নয়। রাস্তার এক পাশ আটকে তারা অনশন বা অবস্থান ধর্মঘট পালন করলেও পুলিশ এতদিন তাদের বাধা দেয়নি। কিন্তু বুধবার বিকেলে পুলিশ অনশনকারীদের রাস্তা ছাড়তে বলে। তবে পুলিশ তাদের ওপর শক্তি প্রয়োগ করেনি। তাদের আপসে চলে যেতে বলে।
পুলিশ তাদের এমনও অনুরোধ করে, পরিস্থিতি ভালো থাকলে, প্রয়োজনে তারা যেন আবার শনিবার এসে ‘আমরণ অনশন’ শুরু করে। তাই হয়েছে, মুহূর্তে প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তা পরিষ্কার। সকল আন্দোলন, দাবি-দাওয়া ভুলে সবাই সুর সুর করে বাড়ি চলে যায়। মজার ব্যাপার হলো, শনিবার থেকে আবার তাদের ‘আমরণ অনশন’ শুরু হয়েছে। এর আগে বিশ্বের কোথাও আমরণ অনশনে দুদিনের বিরতি ছিল কিনা জানি না। একটু খুঁজে দেখলে, এটা অবশ্যই বিশ্ব রেকর্ডে ঠাঁই পাওয়ার মত ঘটনা।
বাংলাদেশ এখন সব সম্ভবের দেশ।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ