২২ বছর বয়সে সাংবাদিক আনু বসুনিয়া ভাইয়ের হাত ধরে আমি সাংবাদিকতা পেশায় যাত্রা শুরু করি দৈনিক রুপালী পত্রিকার মধ্য দিয়ে। সাংবাদিক আনু বসুনিয়া ভাই অত্যন্ত সৎ এবং নীতিবান মানুষ। তিনি রাজশাহী প্রেসক্লাবে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় থাকেন। অনেকদিন হলো যোগাযোগ নেই তার সাথে। তখন একটি নিয়োগ পত্র ও আইডি কার্ড পাওয়ার আশায় দিনরাত পরিশ্রম করেছি। তথ্যের জন্য ছুটে বেড়িয়েছি এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায়।
২০০০ সালে রাজশাহী জেলায় সর্বহারাদের ব্যাপক দাপট ছিল। তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বহু গলাকাটা লাশ দেখেছি নিজের চোখে। তখন কর্মরত ছিলাম দৈনিক আজকের কাগজে। পত্রিকার নির্দেশে ঈদের দিনেও পরিবারকে ছেড়ে সংবাদ সংগ্রহ করেছি বাগমারাতে থেকে।
সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বহুবার হামলার শিকার হয়েছি আমি সহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। রাবি তে মারামারি গোলাগুলির সময় অন দ্য স্পট থেকে তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করেছি এবং হামলার শিকার হয়েছি কয়েকবার। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছি। এই জন্য কত বিপদের মুখোমুখি হতে হয়েছে।কাজের সময় নানান রকম হয়রানি ও হামলার শিকারের সমস্ত ঘটনার বিবরণ গুগল সার্চ করলে এখনো পাওয়া যাবে। সেই সময় কম্পিউটারের সাদা মনিটর যার র্যাম ছিল মাত্র ২৮জিবি তাতে টেলিফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে কাজ করতাম ডিজিটাল পদ্ধতিতে। এখন আর এইসবের প্রয়োজন হয় না!
এখনো অনেক সাংবাদিক আছেন তারা কম্পিউটার পদ্ধতিতে নিউজ করাই জানেন না! ২০০৪ সালে রাজশাহী উপজেলার বাগমারা থানা এলাকায় আবির্ভাব হয় বাংলা ভাইয়ের। তখন জীবন বাজি রেখে রাখাল ছদ্মবেশে বাংলা ভাইয়েরই এলাকা বাগমারাতে থেকে বাংলা ভাই সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেছি। তখন ছিলাম প্রথম আলোতে। তখন ঢাকার বেশ কিছু সাংবাদিক বাংলা ভাইয়ের সংবাদ সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে আসেন রাজশাহীতে। থাকতেন আমার বাসাতেই। আমার স্নেহের ছোট ভাই শিবলী নোমান তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পড়ালেখার পাশাপাশি সাংবাদিকতা করতেন। শিবলী খুব ভালো কম্পিউটার টাইপিং ও রিপোর্ট করতেন। ঢাকার ঐ সকল সাংবাদিক বন্ধুরা তাকে দিয়ে খবর তৈরি করতেন। বড় বড় শিরোনামে ছাপা হতো সেই খবর গুলো। দৈনিক রুপালী থেকে দৈনিক কালের কন্ঠ অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে দশটি জাতীয় দৈনিকের নিয়োগপ্রাপ্ত সাংবাদিক হিসাবে কর্ম জীবন পালন করি।
আমার বয়স এখন ৫০ এখনো রাজশাহীর জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল খবর ২৪ ঘন্টায় কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু, এখন মাদক বিক্রেতা, মাদকাসক্ত ও পুলিশের সোর্স পরিচয়ধারি চিহ্নিত দালালরা সোশ্যাল মিডিয়ায় যখন লেখে হলুদ, কাল, সাদা,নীল পত্রিকায় নিয়োগ পেলাম। তখন খুব খারাপ লাগে দেখে। একটি আইডি কার্ড পাওয়া মানে নিয়োগপত্র পাওয়া এই কথা ঠিক নয়.! ইদানিং যে কেউ সাংবাদিক আইডি কার্ড গলায় ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে কাজ করে বড় হওয়া অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের থেকেও এই হলুদ সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য এখন অনেক বেশি।
দুঃখজনক বিষয় হলো এদের অনেকেই কিছু সিনিয়র সাংবাদিকদের ছত্রছায়ায় লালিত-পালিত হচ্ছে। অনেকেই ক্ষমতা বা বিভিন্ন মহলের পরিচিতি কাজে লাগিয়ে অনায়াসেই বড় বড় পত্রিকা আর টেলিভিশন চ্যানেলে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। গড্ডালিকা প্রবাহের মতো অন্যের খবর কপি পেস্ট করে চালিয়ে যাচ্ছে। এখন তারাই হয়ে উঠেছে নামকরা সাংবাদিক!