পুঠিয়া (রাজশাহী) সংবাদদাতা : রাজশাহীর পুঠিয়ায় খাসপুকুর ইজারা দেওয়াকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দিনভর বিএনপি’র দুই গ্রুপের মাঝে উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। পরে দুই গ্রুপই পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল করেছে। মিছিল শেষে দুইপক্ষ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
নজরুল ইসলাম মন্ডল গ্রুপের নেতাকর্মীরা সংক্ষিপ্ত বিক্ষোভ মিছিল করে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর নিকটে অবৈধ ইজারা প্রক্রিয়া বাতিল এবং বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন।
অপরদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাছে দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রকৃত নিবন্ধিত মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির মাধ্যমে খাসপুকুরগুলো ইজারা দেওয়ার দাবি তুলেছেন নজরুল ইসলাম মন্ডল গ্রুপ। অত্র উপজেলায় আটটি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি কোনোটিতেই প্রকৃত মৎস্যজীবী সদস্য নেই। অভিযোগ পত্রে আরো বলা হয়েছে, প্রকৃত মৎস্যজীবী নিয়ে খাস পুকুরগুলো ইজারা দেওয়া হোক এবং সমিতির সকল সদস্যগণ মাছ চাষ, শিকার ও বিপননের সাথে জড়িত থাকুক। যে আটটি সমবায় সমিতি রয়েছে তারা বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের আমলের অবৈধ সমিতি ও রাজনৈতিক বিবেচনায় অ-মৎস্যজীবীই বেশিরভাগ রয়েছে। যারা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্য আছেন তাদের কাগজপত্র সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে উপজেলা সরকারী জলমহাল ইজারা দিতে হবে। ফ্যাসিষ্ট সরকারের পতন হলেও ফ্যাসিষ্ট সরকারের দোসরা এবং সেই সময়ের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সংঘবদ্ধ চক্র ও স্থানীয় স্বার্থান্বেষী মহল আটটি মৎস্যজীবী সমিতির এবং অন্য এলাকার সমিতির কাগজপত্র দিয়ে পুনরায় ১৪৩২-১৪৩৪ বঙ্গাব্দ ইজারা নেওয়া চেষ্টা করছে, তা বন্ধ রাখতে হবে।
সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের দোসরদের দ্বারা তৈরি সমিতিগুলোর রেজিট্রেশন বাতিল করতে হবে এবং সমিতির সকল সদস্যগণ মাছচাষ, শিকার ও বিপননের সাথে জড়িত হতে হবে। বর্তমানে যারা মৎস্যজীবী সমিতি তারা কেউ মৎস্যকাজের সঙ্গে জড়িত নেই। তারপরও তারা সমিতির সদস্য হয়ে আছেন নামমাত্র। এছাড়াও সমিতির দাখিলকৃত ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট যাচাই করলে দেখা যাবে কোনো সমিতির ব্যাংক হিসাবে জলমহাল নেওয়ার আর্থিক সক্ষমতা নেই।
অপরদিকে ফ্যাসিষ্ট সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় “মৎস্যজীবী আইডি কার্ড বাতিল করে প্রকৃত মৎস্যজীবিদের আইডি কার্ড বা প্রত্যয়ন দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। অনিয়মের মাধ্যমে ইজারা দিলে সংঘাত ও সংঘর্ষের সৃষ্টি হবে এবং প্রাণহানির আশংকা রয়েছে।
সরেজমিনে তদন্ত এবং গণশুনানির মাধ্যমে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সংঘবদ্ধ চক্র ও স্থানীয় স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক আটটি সমিতিসহ যে সমস্ত সমিতির কাগজপত্র জলমহাল ইজারা নিতে আবেদনে দাখিল হয়েছে তা বাতিল করতে হবে।
উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার নিকটে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার সময়ে উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য রাখেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও (পুঠিয়া-দুগার্পুর) আসন হতে পরপর দুইবার পিএনপি’র এমপি প্রার্থী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডল, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনোরুল ইসলাম জুম্মা, সাবেক পুঠিয়া পৌর মেয়র আসাদুল হক আসাদ প্রমূখ।
এদিকে বিএনপির অপরপক্ষ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য সাবেক পৌর মেয়র আল মামুন খান বলেন, আজ যারা আমাদের সন্ত্রাসী বলছেন, তাদের গত ৫ই আগষ্ট এর আগে রাজনীতির মাঠে দেখা যায়নি। আ.লীগের সঙ্গে আতাত করে তারা সবকিছু করেছেন। তাদের নামে মামলা তো দুরে কথা একটা জিডি পর্যন্ত হয়নি। আমরা নেতাকর্মীরা জেল-জুলুম খেটেছি। আমাদের নামে একাধিক মামলা হয়েছে। আমাদের দাবি প্রকৃত মৎস্যজীবিরা পুকুরগুলো ইজারা পাক। আমরা অসহায় মানুষের পাশে আছি। বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা জিয়া পরিষদের সভাপতি নাজমুল ইসলাম মুক্তা, উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আনিছুর রহমান প্রমূখ।
এ ব্যাপারে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা এ, কে, এম, নুর হোসেন নির্ঝর বলেন, আমি অভিযোগ দুইটি গ্রহন করেছি। আমার উর্ধ্বতন কর্মকতার সঙ্গে কথা বলে খাসপুকুর ইজারা দেওয়ার ব্যাপারটি সমাধান করবো।
বিএ..