২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর কেটে গিয়েছে সাত বছর। সভাপতি রকি কুমার ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজিবের নেতৃত্বে ১৬১ সদস্যের সেই কমিটির বেশিরভাগেরই ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে। নিস্তেজ হয়ে পড়েছে সাংগঠনিক তৎপরতা।
নেতৃত্ব পাওয়ার প্রতীক্ষায় যারা ছিলেন তাদের বয়সও শেষের দিকে। শেষ পর্যন্ত প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে চলেছে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজশাহী মহানগর শাখার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি)।
১৭ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশ দেয়া হয়। সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে পদ্মার পাড় ঘেঁষা রাজশাহী কলেজে।
রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজিব বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সম্মেলনের জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী এরইমধ্যে প্রস্তুতি নিয়েছি।
তিনি আরও জানান, বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আসন্ন সম্মেলনে পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না। এছাড়া বিবাহিত ও ২৯ বছরের ঊর্ধ্বে কেউ কমিটিতে থাকতে পারবে না। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তা এখনো নির্দিষ্ট নয়। মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে এ বিষয়ে বলা যাবে।
ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, সভাপতি পদে প্রায় পাঁচজন ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রায় ৯ জন প্রার্থী ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। নগর ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রার্থীর তালিকায় নাম লিখিয়েছেন মহানগর সহ-সভাপতি পিয়ারুল ইসলাম পাপ্পু, মহানগর ছাত্রলীগের সদস্য ও রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি
নূর মোহাম্মদ সিয়াম, মহানগর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ দ্বীপ, দফতর সম্পাদক ফজলে রাব্বি, উপ-ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক শান্তা খাতুন, নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাইনুল ইসলাম বাপ্পি এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রিগান।
এদের মধ্যে আলোচনা ও সমর্থনে এগিয়ে রয়েছেন নূর মোহাম্মদ সিয়াম, আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ দ্বিপ, পিয়ারুল ইসলাম পাপ্পু। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন মহানগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সিরাজুম মুবিন সবুজ, উপ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রাশিক দত্ত, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান রেজা, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আরেফিন পারভেজ বন্ধন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সাফফাত হাসান রিয়াদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মারুফ হোসেন এবং নগর ছাত্রলীগের সদস্য ও রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইমুল হাসান নাঈম।
আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন ডা. সিরাজুম মুবিন সবুজ, রাশিক দত্ত ও আরেফিন পারভেজ বন্ধন। সভাপতি পদপ্রার্থী নূর মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, ‘মহানগর ছাত্রলীগের নতুন কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ অঙ্গনসহ রাজশাহীর ছাত্র সমাজেরও অনেক প্রত্যাশা আছে। সেই জায়গায় আমি নিজের যথেষ্ট সম্ভাবনা দেখি। সভাপতি নির্বাচিত হলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সুউজ্জীবিত রেখে নগরপিতা এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনসহ আওয়ামী লীগের হাতকে শক্তিশালী করতে কাজ করব’।
সভাপতি পদ প্রত্যাশিদের মধ্যে রাজশাহী পলিটেকনিক ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রিগান ও তার কমিটির বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী পলিটেকনিকের প্রিন্সিপালকে পুকুরে ফেলে দেয়ার ঘটনা অন্যতম। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া দ্বিপ ও পাপ্পুর বয়স ২৯ পেরিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
সভাপতি প্রার্থী দ্বিপ ও পাপ্পু জানান, তাদের বয়স সামান্য পেরিয়ে গেছে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে সংগঠন বিষয়টিকে বিবেচনায় নিবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ও রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইমুল হাসান নাঈমের নাম নানা অপরাধ ও অপকর্মে জড়িয়ে আছে। তার বিরুদ্ধে রাজশাহী কলেজের গাছ কেটে বিক্রি করা, চার্টারসেলে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় এবং মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়।
মহানগর ছাত্রলীগ জানিয়েছে, সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন- রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।
সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার থাকবেন বিশেষ অতিথি হিসেবে। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখবেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর রকি কুমার ঘোষকে সভাপতি, মাহমুদ হাসান রাজিবকে সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে পাঁচ জনসহ মোট ১৬১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
মহানগর ছাত্রলীগের অধীনে থাকা পাঁচটি থানায় ২০১৭ সালের জুলাইয়ে সম্মেলন করে মহানগর ছাত্রলীগ। ৩৭টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের মধ্যে ৩০টিতে আংশিক কমিটি দেয়া হয়। এর মধ্যে অধিকাংশ ওয়ার্ড কমিটিই পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। তবে রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী সিটি কলেজ, নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে কমিটি গঠন করা হয়।
এস/আর