খবর২৪ঘন্টা ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পরবর্তী সরকারগুলো ক্ষমতায় আসার পর এই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে। যা ২১ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রূপপুরে সুধী সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ তে ক্ষমতায় এসে এই প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। তখন পরমানু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন ড. এএ ওয়াজেদ মিয়া।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা হয়। এর ভিত্তিতে রাশিয়ার সঙ্গে ‘সমঝোতা স্মারক’ ও ‘ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট’ স্বাক্ষরিত হয়। ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর জাতীয় সংসদে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
তিনি বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালের ২ নভেম্বর রাশিয়ান ফেডারেশন ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে প্রকল্প নির্মাণে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতার পালবদলের পর ক্ষমতাসীনরা প্রকল্পটি পরিত্যক্ত করে দিলেও সত্যি আজ আনন্দের দিন। বাংলাদেশ পরমানু বিশ্বে প্রবেশ করলো। মূল কাঠামো তৈরির কাজ শুরু করলাম।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে, জাতি গোষ্ঠির সাথে সনদ অনুস্বাক্ষরসহ নানা ধরণের কর্মকৌশল সম্পন্ন করেই এই কাজে হাত দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক পরমানু শক্তি সংস্থার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিপুল অঙ্কের টাকাও প্রয়োজন ছিল এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে। রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট এই প্রকল্প বাস্তবায়নে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়ার প্রেক্ষিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে এগুতে থাকি। আর এভাবেই আজ এই পারমানবিক কেন্দ্র মূল কাজে এগিয়ে গেল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা ছিল। চাহিদাও ব্যাপক ছিল। উন্নয়ন করতে হলে বিদ্যুতের প্রয়োজন। উন্নত ও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বহুমুখি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
তেল, গ্যাস, বায়ুসহ নানা ধরণের উদ্যোগ গ্রহণের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অল্প খরচে বিদ্যুৎ পাওয়ার সম্ভবনা নিয়েই পরমানু কেন্দ্রটি চালু করা হচ্ছে। মধ্যম আয়ের দেশ করতে হলে যে সকল প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তার মধ্যে বিদ্যুৎ একটি অপরিসীম।
তিনি বিএনপি’র উদ্দেশ্যে বলেন, একজন ভালো কাজ করলে অপরজনের উৎসাহ থাকে না। থাকে গা জ্বালা। তারা অবান্তর প্রশ্ন করেন। জনগণকে ভুলভাল বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু দেশের উন্নয়নের কথা কখনোই ভাবেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পারমাণবিক নিরাপত্তার উপর জোর দিয়েছি। এক্সপার্টদের নির্দেশিত শর্ত, নিয়মনীতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে।
বাংলাদেশ পরমানু শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণোয়ন করেছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বচ্ছতার সাথেই পরমানু বিষয়গুলো অনুসরণ করা হচ্ছে। নিরাপত্তার কোনও ধরণের ঘাটতি না হয় সেদিকে সুদৃষ্টি রয়েছে। যেকোনো দুর্যোগে কোনও ধরণের দুর্ঘটনা না ঘটে, সে দিক খেয়াল রেখেই প্লানিং করা হয়েছে। দক্ষ জনবল তৈরি করতে প্রশিক্ষণ চলছে। সেনাবাহিনী নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। তাছাড়াও আইন শৃৃঙ্খলা বাহিনীর সকল স্তরের সদস্যরা কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরমানু বর্জ্য রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। তারা রাজিও হয়েছে। ইতিমধ্যে এ নিয়ে চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছে।
এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তার কারণ নেই দাবী করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়া নেই আমার। বাবা স্বপরিবারে জীবন দিয়েছেন। আমি আপনাদের জন্য কিছু করতে চাই। দিয়ে যেতে চাই আগামী প্রজন্মকে নতুন কিছু।
তিনি বলেন, হাত পেতে নয়, ভিক্ষা নিয়ে নয়, নিজের যা আছে তাই নিয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উচু করে চলতে চাই।
তিনি দাবি করেন, ৬ বছর দেশে আসতে পারিনি। রিফিউজি হয়ে থাকতে হয়েছে দেশে দেশে। দেশের মানুষের সকল অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশের মানুষের জন্য নিজের জীবন বাজি রেখেই দেশে পা রেখেছিলাম। দেশটাকে সোনার বাংলায় গড়ে তুলতে হবে।
২০২১ সকালে স্বাধীনতার সূর্বণ জয়ন্তী পালন করবো বলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টা ৫০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনার রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কংক্রিট ঢালাইকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি অনুষ্ঠান মঞ্চে প্রধান অতিথি হিসেবে আসন গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করা হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ টা ২মিনিটে স্মারক ডাক টিকিট অবমুক্ত করেন। একই সময়ে নির্মাণ কাজের ব্যবহৃত বেলচা (স্থানীয় ভাষায় কূর্ণি) প্রকল্প সংশ্লিষ্ট রাশিয়ার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন স্মারক হিসেবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে রোসাটম’র মহাপরিচালক আলেক্সি লিখেচিভ বলেন, আধুনিক এবং নিরাপদ বিদ্যুৎ প্লান্ট হচ্ছে রূপপুরে। এ ধরণের প্রকল্প রাশিয়াতে রয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার দেশকে নিউক্লিয়ার যুগে প্রবেশ করিয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি, নির্ধারিত সময় সীমার মধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের এই নিউক্লিয়ার ক্ষেত্র তৈরি হবে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ড. ইয়াফেস ওসমান সভাপতির বক্তব্য রাখেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুরুতেই প্রকল্প পরিচিতি তুলে ধরেন রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. সৌকত আকবর এবং স্বাগত বক্তব্য দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আনোয়ার হোসেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, আন্তর্জাতিক পরমানু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কমিশনের মহাপরিচালক দৌহি হান এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. আফম রুহুল হক।
খবর২৪ঘন্টা/নই