রয়েল খান স্পোর্টস ডেস্ক: লিওনেল মেসি, বিশ্ব ফুটবলের বরপুত্র। একের পর এক ক্লাব শিরোপা জিতে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। তার পাসিং, ড্রিবলিং ও বাঁ পায়ের জাদুকরী ফুটবল দেখে মুগ্ধ তার ভক্তরা। কিন্তু ২০১৪ সালে শিরোপার দ্বার প্রান্তে গিয়েও বিশ্বকাপ ট্রফিটি ছুয়ে দেখার সৌভাগ্য হয়নি মেসির। আর্জেন্টাইনদের কাছ থেকে বিশ্বকাপের ট্রফিটা জার্মানি ছিনিয়ে নেয়। তবে রাশিয়া বিশ্বকাপকে সেই শিরোপা জেতার শেষ সুযোগ হিসেবে দেখছেন মেসি।
কারণ চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছিল আর্জেন্টিনা।ইকুয়েডরের সাথে শেষ ম্যাচের উৎকণ্ঠা ছিল গোটা বিশ্বের আর্জেন্টিনা ও মেসি ভক্তদের।
সম্প্রতি ফিফার ওয়েবসাইটে সেই সব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। জানালেন, রাশিয়ায় যখন পা রাখব, দেখবেন আমরা তৈরি। কারণ, আমরা উন্নতির রাস্তা দিয়ে চলেছি। হ্যাঁ, এটা ঠিক, যা যা ঘটেছে, তা প্রত্যাশা করিনি। আর এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার মতো দলও তো আমরা নই। কিন্তু তাও দেখতে হয়েছে দিনগুলো। ভেনেজুয়েলা, পেরুর বিরুদ্ধে সহজেই জিততে পারতাম। কিন্তু পারিনি। তাই কঠিন লড়াই লড়তে হয়েছে।
নতুন কোচের তত্ত্বাবধানে খেলতে হয়েছে চার–চারটি কঠিন ম্যাচ। তবে একটা কথা বলতে পারি, আর্জেন্টিনা বদলে গেছে। প্রতিদিন উন্নতি করছে। ইকুয়েডরের ম্যাচটা এখন অতীত। ওই ম্যাচে যে পরিমাণ টেনশন নিতে হয়েছিল, তা এখন নেই। লক্ষ্য ছুঁতে না পারার ভয়টাও আর নেই। তাই রাশিয়ায় নতুন আর্জেন্টিনাকেই দেখবেন।
ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে ম্যাচ প্রসঙ্গে মেসি বললেন, ওই ম্যাচটার গুরুত্বই ছিল আলাদা। কারণ, সেদিন হেরে গেলে বিশ্বকাপেই আমাদের খেলা হতো না। আর সেই ধাক্কাটা মারাত্মক হতো দলের জন্য, দেশের জন্য, আমার জন্যও। জানি না, কী করতাম! কীভাবে সেই সত্যিটা হজম করতাম! জানি, একইরকম সমস্যায় পড়ত আর্জেন্টিনীয়রাও। রাশিয়ার টিকিটটা না পাওয়া, আমাদের দেশের কাছে সর্বকালের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ে হয়ে দেখা দিত।
রাশিয়া বিশ্বকাপে চিলির না থাকা প্রসঙ্গে বার্সা তারকা বলেন, বিশ্বকাপে চিলি নেই! ভাবতেই কেমন লাগে। অন্যদের মতো আমিও হতবাক। শেষ দুই কোপা আমেরিকা ওরাই জিতেছে। দলটা আত্মবিশ্বাসী। গ্রেট টিম। দুর্দান্ত সব প্লেয়ার। তবে দক্ষিণ আমেরিকা গ্রুপের লড়াইটা কত কঠিন ছিল, তা চিলির বিদায়েই প্রমাণ। কেউ কাউকে এতটুকু জায়গা দেয়নি। বলিভিয়া, ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডর, কলম্বিয়ায় গিয়ে খেলাটা খুব কঠিন। তাই যোগ্যতা অর্জনও এতোটা কঠিন হয়েছে।
২০১৪ বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আক্ষেপটাই বাড়ল মেসির। বললেন, ক্ষতটা কোনো দিনই ভরবে না। আজীবন দুঃখ বয়ে বেড়াতে হবে। আসলে ২০১৪ বিশ্বকাপের যেমন সুখস্মৃতি আছে, তেমনই আছে দুঃখেরও। বিশেষ করে শেষটা যে সুরে হয়েছিল, তাতে মন খারাপ করা ভাবটা লেগেই থাকবে।
মেসির বর্তমান বয়স ৩০, আগামী জুনে পা দিবেন ৩১ বছরে। এই বয়সে, কেমন থাকব? না, এ কথাটা আগে কখনও ভাবিনি। তবে ফুটবল–জীবনে এবং ব্যক্তিগত জীবনে যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, তাতে খুশি। মাঠে ও মাঠের বাইরে ঠিক জায়গাতেই আছি।
ফুটবলে পরিবর্তন প্রসঙ্গে মেসির স্পষ্ট কথা- ফুটবল বদলেছে। আমার খেলাটাও বদলেছে। সময় যতো এগোয়, তার সাথে সাথে আপনি বদলান। এটাই সত্যি। আমিও সময়ের সাথে সাথে উন্নতি করেছি। নতুন অনেক কিছু শিখেছি। আমার শুধু বয়স বাড়েনি। মাঠেও পেশাদার হিসেবে আমি বড় হয়েছি।
ফুটবলের কাছে প্রত্যাশা প্রসঙ্গে একটু ঘুরিয়ে বললেন বিশ্বকাপ জয়ের কথাই! আশা করি, ফুটবল তার ঋণ মেটাবে। আমার প্রত্যাশা পূরণ করবে। যদিও এতখানি বলার পর মেসি থেমে যান। তারপর? শূন্যস্থান পূরণ করলেন প্রশ্নকর্তাদের দেয়া একটি লাইনের। কী লাইন? ‘২০১৮ সালে লিওনেল মেসি হবে...।’
প্রশ্নকর্তার ইঙ্গিত নিশ্চিতভাবেই ছিল, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিকে। কিন্তু মেসি এক মুহূর্ত না ভেবে করলেন রসিকতা, ‘মেসি হবে তৃতীয় সন্তানের বাবা’!
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ