হত্যাকারীদের বিচার দাবির মধ্য দিয়ে ও সাধারণ মানুষের চোখে জলে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে নিহত স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলম।
রোববার বিকেল পৌনে চারটায় ভাড়ারা ইউনিয়নের আওরঙ্গবাদ হাফিজিয়া মাদরাসা মাঠে তার জানাযা ও দাফন সম্পন্ন হয়। জানাজায় শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। জানাযায় রাজনৈতিক নেতার পাশাপাশি অংশ নেন প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ। জানাযা মাঠে মানুষের কান্নায় পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। এ সময় এক হৃদয়বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয়। খুনিদের বিচারের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে জানাযা ময়দান।
জানাযা পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন, পাবনা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, ভাড়ারা ইউনিয়নের পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বর্তমান চেয়ারম্যান আবু সাইদ খান অস্ত্র ও সম্পদের পাহাড় গড়েছে। সে এখন তার টাকা ও ক্ষমতার জোরে সাধারণ জনগণের ওপর গুলি করছে। গত বছর এই মাঠেই আমরা জোড়া খুনের জানাযা নামাজ পড়েছি। সেই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি সরাসরি জড়িত থাকলেও পরে তার নাম বাদ পড়ে যায়। সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার এখনো হয়নি। সেটিতে যদি তার বিচার হতো তাহলে আজ আবার পুনরায় হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত করতে পারত না। বারবার এমন হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চেয়ারম্যানের পদ দখল করে থাকতে চায়।
প্রশাসনের কাছে এই হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে সব হত্যাকাণ্ডের বিচার করছেন। আপনার কাছে বিনিত অনুরোধ ভাড়ারা ইউনিয়নের এই খুনিদের বিচার করেন। ইউনিয়নে শান্তি আনতে আমরা আপনার সু-নজর চাই।
পাবনা পৌরসভার মেয়র শরিফ উদ্দিন প্রধান বলেন, পাবনায় একটি অপশক্তির আশ্রয়ে চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খান এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, বারবার এলাকায় তিনি খুন করছেন। সব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি জড়িত। শহরের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের নিয়ে এসে এলাকায় সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করেছে।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার রেইনা, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রোকনুজ্জামান, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম। তারা সবাই খুনের সঙ্গে জড়িতদের আটক করে শাস্তি দেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন।
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন, ভাড়ারা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও নিহত ইয়াসিন আলমের চাচাতো ভাই সুলতান মাহমুদ, দোগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হাসান, একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু খান মোস্তফা বাচ্চু, পাবনা জজ কোর্টের অ্যাডভোটেক রাকিবুল ইসলাম, মোজাম্মেল হক, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন আনছারি প্রমুখ।
তারা বলেন, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলম খুনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি যাদের ইন্ধনে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে তারা কোনোভাবেই যেন রেহাই না পায়। জানাযা নামাজ শেষে ইয়াসিন আলমের মরদেহ স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
প্রসঙ্গত, শনিবার সকালে ভাড়ারা ইউনিয়নের চারা বটতলার ইন্দারা মোড় কালুরপাড়া এলাকায় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবু সাঈদ খান ও তার সমর্থকদের সাথে ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সুলতান মাহমুদের সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী সুলতান মাহমুদের আপন চাচাতো ভাই আনারস প্রতীকের ইয়াসিন আলম এগিয়ে এলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
এ সময় উভয় পক্ষের ১২ জন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলম নাটোরের বনপাড়ায় মারা যান। এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশন থেকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে গণবিজ্ঞপ্তি জারী করা হয়েছে।
বিএ/